ইরানকে কোনো কিছু দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির সঙ্গে কোনো আলোচনাও করছেন না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এ কথাগুলো বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
স্থানীয় সময় সোমবার ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি ইরানকে কিছুই দিচ্ছি না, যেমনটা ওবামা দিয়েছিলেন। এমনকি তাদের সঙ্গে আলোচনাও করছি না। যেহেতু আমরা তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছি।’
এমন এক সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন, যখন ইরানের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানচি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভবিষ্যতে আর কোনো হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা না দেয়, তাহলে পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আলোচনায় ফেরার প্রশ্নই ওঠে না।
বিবিসিকে রাভানচি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো আলোচনার দিনক্ষণ বা কাঠামো ঠিক করিনি। আমরা শুধু জানতে চাই, আলোচনায় বসে আবারও কি আগ্রাসনের শিকার হব?’ তিনি বলেন, এই প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘স্পষ্ট অবস্থান’ নিতে হবে।
ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করে ইরান। পরে ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়।
ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ও পরিমাণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু একেবারে ‘শূন্য’ সমৃদ্ধকরণ চাপিয়ে দেওয়া, আর তা না মানলে বোমা মারাটা বর্বর আইন।
এর আগে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলে, দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হামলা চালাবে কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘অবশ্যই। কোনো প্রশ্ন ছাড়াই।’
আরও পড়ুননতুন আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই হামলার হুমকি থেকে সরে আসতে হবে: ইরান৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে ইরান: আইএইএ প্রধান
ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। তাতেই পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জন সম্ভব বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।
গতকাল শনিবার সিবিএস নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
রাফায়েল গ্রোসি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি এসব স্থাপনা। তিনি বলেন, খোলাখুলি বললে, কেউ বলতে পারে না যে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখনও কিছু রয়েছে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি– ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলের দাবি— ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও হামলায় যোগ দেয় এবং ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা ফেলে। কিন্তু এই হামলায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।
সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, তেহরান কয়েক মাসের মধ্যেই সেন্ট্রিফিউজ ঘুরিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে। তাদের এখনো শিল্প ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। সুতরাং, যদি তারা চায়, তবে আবারও এটি শুরু করতে পারবে।
এর আগে পেন্টাগনের একটি গোয়েন্দা মূল্যায়নেও বলা হয়, মার্কিন হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। একইসঙ্গে তিনি মিডিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযানে অবমূল্যায়নের অপচেষ্টা করার অভিযোগ তোলেন।
ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু হলে তিনি ইরানে আবারও বোমা হামলা করবেন। যদিও এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ‘গুরুতর’। তবে এ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
আইএইএ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ অবলম্বন করছে এমন অভিযোগ তোলে গত সপ্তাহে ইরানের পার্লামেন্ট সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিতের পদক্ষেপ নেয়।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা গত মাসে জানায়, ইরান ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধবিষয়ক চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তবে ইরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ১৫ বছর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না এবং ফোরদো স্থাপনায় কোনো সমৃদ্ধকরণ চলবে না। তবে ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এরপর ইরান ওই আরোপিত সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করতে থাকে। ২০২১ সালে ফোরদোতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবারও শুরু করে ইরান।
আইএইএর তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এত পরিমাণে মজুত করেছে যা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।