কুষ্টিয়ার মিরপুরে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে জমির উদ্দিন (৪৮) নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার আমলা ইউনিয়নের মিটন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত জমির উদ্দিন আমলা ইউনিয়নের মিটন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতার নাম অনিক খান (২০)। তিনি আমলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি। তাঁর দলীয় পদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন মিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সাব্বির আহমেদ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে স্থানীয় এক চায়ের দোকানে কথা-কাটাকাটির জেরে অনিক খানকে চড় মেরেছিলেন জমির উদ্দিন। সেই ঘটনার জেরে গতকাল দুপুরে অনিক খান কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে জমির উদ্দিনের ওপর হামলা চালান। কুপিয়ে ও পিটিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম করা হয়। তাঁর চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, নিহত ব্যক্তির মাথা, বুক ও পায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর আগে একবার চায়ের দোকানে অনিককে থাপ্পড় মেরেছিলেন আমার স্বামী। সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর রাস্তার ওপর অনিক ও তাঁর লোকজন হামলা চালান।’

জোসনা খাতুন জানান, তাঁর স্বামী কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি এ ঘটনায় মামলা করবেন। তবে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অসিত সিংহ রায় মিরপুর উপজেলা জাসদের সভাপতি আফতাব উদ্দিনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জমির উদ্দিন জাসদের কর্মী ছিলেন। গত ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত তাঁকে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেখা গেছে। তবে পরে আর সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন না।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত এক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা গেছেন। পরে নিহত ব্যক্তির লোকজন প্রতিপক্ষের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।

সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫

এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।

একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।

তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।

এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।

গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগে

এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ