সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকোয়ামা নজিরবিহীন দম্ভের সঙ্গে ‘ইতিহাসের অবসান’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তা নয়; বরং উদার গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদী অর্থনীতিরও বিজয় ঘোষণা করেছিলেন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যস্ত করেছিল। নিজেদের শক্তি পুনর্গঠন করতে রাশিয়ার দুই দশক লেগে গিয়েছিল। এরপর দেশটি জর্জিয়া ও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। একই সময়ে আমরা এক আত্মবিশ্বাসী চীনের উত্থান প্রত্যক্ষ করছি।

আজকের বিশ্বব্যবস্থা দেখিয়ে দিয়েছে, ইতিহাসের সমাপ্তি হয়নি। উদার গণতন্ত্র এখন পিছু হাঁটছে, নিজের পরিচয় বাঁচাতে সংগ্রাম করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই বিশ্বব্যবস্থার জন্ম হয়েছিল।

সম্প্রতি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ অবসানের পর আবারও এমন দাবি সামনে এসেছে যে এটি একটি ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্যের’ জন্ম দিতে পারে। কেননা ইরানের প্রতিরোধ অক্ষ দুর্বল হয়ে গেছে। সিরিয়া, লেবানন ও গাজায় তাদের প্রভাব কমে গেছে। এই দাবি গত শতকের প্রতি দশকেই বারবার শোনা গেছে।

আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫

ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতন ও পশ্চিমা স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্য বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই একই কথা বারবার শোনা যাচ্ছে। প্রতিটি যুদ্ধের পর একটি নতুন যুগের সূচনা হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সমৃদ্ধি আসবে। কিন্তু প্রতিটি সামরিক অভিযান কেবল পরবর্তী সংঘাতের বীজই রোপণ করেছে।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের কথাটি বিবেচনা করুন। ইসরায়েল তিনটি আরব সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিল এবং সিনাই উপদ্বীপ, গোলান মালভূমি ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের অবশিষ্টাংশ দখল করেছিল। কিন্তু এই বিজয় থেকেই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের উদ্ভব হয়েছিল এবং প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থার (পিএলও) জন্ম ও উত্থান হয়েছিল।

তখন থেকে পিএলও মূলত আরব শাসকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু সেই শাসকদের পরাজয়ের পর ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই নিজেদের সংগঠনগুলোর মাধ্যমে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য অবস্থান ঘোষণা করেছিল। আরব শাসকদের রাজনৈতিক হাতিয়ার না হয়ে ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব স্বার্থের রক্ষক হয়ে উঠেছিল।

এ সংঘাত আরব দেশগুলোকে দুটি বিশাল হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ইরাক, লেবানন ও সিরিয়াজুড়ে ইরান তার ‘সফট পাওয়ার’ পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একমাত্র সক্ষম শক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করবে।

একইভাবে ১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরায়েলের আগ্রাসন একটি অসাধারণ সামরিক সাফল্য অর্জন করেছিল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দ্রুত বৈরুত পৌঁছায় এবং লেবাননের দক্ষিণ অংশ দখল করে নেয়। কিন্তু এই বিজয় থেকে হিজবুল্লাহর জন্ম হয়। গত চার দশকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সরাসরি ও ধারাবাহিক হুমকি হয়ে উঠেছে।

আরব শাসকেরা প্রায়ই নিজেদের শক্তির জায়গাকে স্বীকৃতি দিতে কিংবা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু আরব দেশগুলোর এই সুপ্ত সম্ভাবনাকে ইসরায়েল ভালোভাবেই বুঝতে পারে।

আরব বসন্তকালে, তিউনিসিয়ার নেতা জেন এল আবিদিন বেন আলীর পতনের পর এবং মিসরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনাকালে ইসরায়েল দ্রুত সেই গণতান্ত্রিক ঢেউকে দুর্বল করার কাজ শুরু করেছিল। বিশেষ করে মিসরের ওপর ইসরায়েল মনোযোগ দিয়েছিল।

আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করে যে হুমকির মুখে পড়ল ইসরায়েল০৪ জুলাই ২০২৫

কারণটি পরিষ্কার। ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে মিসরের বেশির ভাগ মানুষই ব্যাপকভাবে বিরোধী ছিল। সে কারণে ২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইসরায়েল ওয়াশিংটনে তার প্রভাব ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা দেওয়ায় কেউ বিস্মিত হয়নি।

‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ নিয়ে ইসরায়েলের মনগড়া কল্পনাটি শুধু অবাস্তব নয়; বরং এটি এমন দাবির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে, যেটা কোনো আরব শাসকের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। এমনকি আরব শাসকেরা যখন আরও বেশি সমঝোতার কথা চিন্তা করেন, ইসরায়েল তখন আরও বেশি দাবি নিয়ে হাজির হয়।

যেমন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, সৌদি আরব আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে খবর এসেছিল। সৌদি আরব আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করলে ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিষয়টি কার্যকরভাবে পরিত্যক্ত হয়ে যেত। এর বিনিময়ে সৌদি আরবের কেবল ওয়াশিংটনের সঙ্গে লবিং করার ক্ষমতা বাড়ত।

আরও পড়ুনসাইপ্রাসে কি ‘মিনি ইসরায়েল’ গড়ে উঠছে০৩ জুলাই ২০২৫

গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি হামলার দুই বছরের মাথায় ইরানের ওপর ইসরায়েলের অপ্রত্যাশিত হামলা আসে। পশ্চিমা বিশ্ব আবারও নিজেদের এমন একটি পরিষ্কার অবৈধ অভিযানকে সমর্থন দিতে দেখল, যেটা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর হামলা চালায়। এই হামলা বেশ কয়েকটি দেশের জন্য বিধ্বংসী তেজস্ক্রিয় বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করেছিল। আর এই হামলা করা হয়েছিল গোয়েন্দা তথ্যের সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে। এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো, আন্তর্জাতিক আইন কেবল তখনই প্রযোজ্য, যখন তা পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষা করে।

পশ্চিমা নেতারা ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ মন্ত্র জপ করে চলেছেন। যেন এটি কোনো ধর্মীয় বিধান। অথচ বাস্তবে শব্দবন্ধটি একটি কল্পিত নির্মাণ। মধ্যপ্রাচ্য সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র অঞ্চল, যেটি প্রতি দশকেই নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কার করেছে।

আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল সংঘাত এরদোয়ানের কপাল খুলে দিতে পারে ০৫ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘটিত সাম্প্রতিক যুদ্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষা তুলে ধরা যেতে পারে। এখানে কোনো চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়নি, তবে উভয় পক্ষই তাদের উন্নত সামরিক ও গোয়েন্দা সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।একই সঙ্গে তাদের দুর্বলতাগুলোও উন্মোচিত হয়েছে।

যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর নিজের দেশে শক্তিশালী হচ্ছেন এবং আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসন টিকে আছে, তখন ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে যে উত্তেজনা ও সংঘাত অব্যাহত থাকবে, সেই আশঙ্কাটাই বেশি।

দ্বিতীয়ত, আরব রাষ্ট্রগুলো প্রমাণ করে দিল যে তারা অরক্ষিত ও সামরিকভাবে তাৎপর্যহীন। ড্রোন যখন জর্ডানে বিধ্বস্ত হলো ও ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার হুমকি দিল, তখন উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিরক্ষা কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে জোট বেঁধে এবং মার্কিন ঘাঁটির ওপর নির্ভর করেই নিশ্চিত করতে পেরেছে। স্পষ্টত তারা নিজেদের ভূমিকা দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে পারেনি।

আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চীন কেন দূরে বসে দেখেছে২৭ জুন ২০২৫

এ সংঘাত আরব দেশগুলোকে দুটি বিশাল হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ইরাক, লেবানন ও সিরিয়াজুড়ে ইরান তার ‘সফট পাওয়ার’ পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একমাত্র সক্ষম শক্তি হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করবে।

অন্যদিকে ইসরায়েল তার সরকারের ভেতরকার ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের প্রভাবে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে উচ্ছেদ করতে পারে। আর এর খেসারত দিতে হবে আরব দেশগুলোকে।

আরব দেশগুলোর সামনে সম্ভবত একটি সত্যিকারের ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ গড়ে তোলার সময় এসেছে। এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য যেটি আরবদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে এবং আরবদের দিয়েই গঠিত হবে। পশ্চিমা বা প্রাচ্যের শক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।

আবেদ আবু শাহাদেহ জাফার একজন রাজনৈতিক কর্মী

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র স ব যবস থ কর ছ ল ন র পর ল ব নন হয় ছ ল ইসর য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

১৮ মাসে এসেছেন নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার। আর অন্যরা নিবন্ধন ছাড়াই আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরে সংস্থাটির মুখপাত্র বাবর বালুচ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিশানা করে সহিংসতা ও তাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এ ছাড়া মিয়ানমারজুড়ে চলছে সশস্ত্র সংঘাত। এতে বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

বাবর বালুচ বলেন, ‘২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। সেই বছর প্রাণঘাতী সহিংসতার মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।’

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে আছেন। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হলেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন জানিয়ে বাবর বালুচ বলেন, এসব আশ্রয়শিবির বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হয়ে উঠেছে।

তহবিল–সংকটে ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিলের তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া না গেলে এসব রোহিঙ্গাকে খাবারের মতো জরুরি সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন জানালেও এর মাত্র ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে তহবিলের এ ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে বাবর বালুচ বলেন, ‘আমাদের যা প্রয়োজন আর যা পেয়েছি সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এ ব্যবধান অনেক বেশি। এ তহবিল–ঘাটতি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, দৈনিক ভিত্তিতে খাবার ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পুরোপুরি মানবিক ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’

ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রয়োজনীয় তহবিল না পেলে আগামী সেপ্টেম্বের থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে—এমন উদ্বেগ থেকে প্রধান দাতা এসব দেশ ত্রাণসহায়তার বদলে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে।

বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তহবিল–সংকটে ঝুঁকির মুখে ছিলেন। এর মধ্য নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান বাবর বালুচ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তহবিলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থাকা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাবে। এখন নতুন করে অতিরিক্ত তহবিল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে খাবার ও সব রোহিঙ্গার জরুরি ত্রাণসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ