যে পুস্তকটির জন্য পুরস্কার দেওয়া হলো তা প্লেটো পাঠের সহায়িকা– ‘প্লেটো প্রবেশিকা’। আমরা প্লেটোর সকল সংলাপ, তথা ২৮টি সংলাপ অনুবাদ করেছি, তা প্রকাশিতও হয়েছে। আমাদের দেশে গ্রিক সাহিত্য, বিশেষত দর্শন যে খুব একটি শক্ত শিকড় পেয়েছে, তা বলা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজি বিভাগে গ্রিক সাহিত্যের কিছু লেখা প্রাসঙ্গিকভাবে পাঠ করানো হয়। সাধারণ্যে তার পাঠ খুবই নগণ্য বলা যায়। হয়তো পাশ্চাত্যের খোদ সাহিত্য আমাদের বেশি প্রভাবিত করেছে। আমরা প্লেটোর পুস্তকাদি অনুবাদ করে গ্রিক মনীষা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিশাল খনির সন্ধান দিতে চেয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টা ‘মাটির প্রদীপের’ অধিক কিছু বলে গণ্য হওয়ার নয়। তবু আমরা আমাদের বিনীত প্রচেষ্টা জারি রেখেছি। আমাদের আশা হচ্ছে বাংলায় গ্রিক সাহিত্য, দর্শনের পাঠকে উৎসাহিত করা। হাল পুস্তকটি পাঠ করে পাঠক যদি মূল পুস্তক পাঠ করত, তাদের রসাস্বাদন করতে উৎসাহিত হন, তবেই আমরা কৃতার্থ হই।
এই পুস্তকটি কোনো একসময় পুরস্কার পাবে আমার তেমন কোনো আশা ছিল না। ম্যানিলাস্থ এডিবি সদরদপ্তরে কাজ করার সময় আমার অফুরন্ত সময় কাজে লাগিয়ে আমি প্লেটোর গোটা বিশেক পুস্তক অনুবাদ করেছিলাম। দেশে ফিরে প্রকাশক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পাঠক সমাবেশ আর্থিক ঝুঁকি নিয়েও এগিয়ে এসেছিল সেই ২০টি পুস্তকের সঙ্গে গ্রিক দর্শনের আরও কিছু পুস্তক প্রকাশের। পূর্বে বাংলা একাডেমি ‘আইনকানুন’ নামক একটি পুস্তক প্রকাশ করেছিল। তাদের সবাইকে এই সুযোগে কৃতজ্ঞতা জানাই।
এই পুস্তকটি ধীরে ধীরে এগিয়েছিল। প্রথমে কোনো রূপরেখা ধরে তা রচিত হয়নি। যেমন– আমরা প্রথমে নামের উচ্চারণ টুকে রেখেছিলাম, যাতে বিভিন্ন পুস্তকে একই নাম বিভিন্নভাবে লেখা না হয়। তারপর তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ যুক্ত করেছিলাম। প্রায় সকল নামই যেহেতু ঐতিহাসিক তাই এসব নামের মধ্য দিয়ে সেই কালের গ্রিক সামাজিক, রাজনৈতিক ইতিহাসও ধরা পড়েছিল। পরে অন্যান্য অধ্যায়, যেমন– সক্রেটিস-প্লেটো সম্পর্ক, সংলাপের ইতিহাস, রচনাক্রম, গ্রিকে, ইংরেজিতে, বাংলায় নাম ও বিভিন্ন পদ যুক্ত করা হয়েছিল। কেউ যদি এই অধ্যায়ক্রম বদলে দিতে চান অথবা কেবল প্রাসঙ্গিক অধ্যায় পাঠ করতে চান, তা-ও করা সম্ভব। আমি নিজে আনন্দিত বলে বলেছি। যে কোনো পুরস্কারপ্রাপ্তির পর যেমন আমার আনন্দ, সংকোচ ও লজ্জাবোধ হয়, এখানেও তা-ই ঘটছে। আনন্দের কারণ তো সহজেই অনুমেয়। পুরস্কার, স্বীকৃতি পেতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু সংকোচ, লজ্জা হচ্ছে কেন?
কারণ, আমি দেখতে পাই আমার চাইতে অধিক যোগ্য অনেকেই পুরস্কার পাচ্ছেন না, তাই। সমকাল-ব্র্যাক ব্যাংকের এই পুরস্কার প্রদানকে অন্যরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভাবেন কিনা, জানি না। কিন্তু অন্য বছরের পুরস্কারগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে তারা সাহিত্যমূল্য এবং প্রাসঙ্গিকতা বিচার করেছেন। তাই এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে নিজেকে অপরাধী না ভেবে ধন্যই মনে করছি।
এ দেশে লেখকদের খুব একটা সম্মান দেওয়া হয় না। একজন প্রথিতযশা লেখক বলেছিলেন, আমলারা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সাহিত্য, সংস্কৃতি সভা-সমিতির প্রথম কাতারে বসবেন কেন; প্রথম কাতারে বসার যোগ্যতা তো শিক্ষকদের, বুদ্ধিজীবীদের, দার্শনিকদের। আমি মনে মনে জানি এ কথা শতভাগ সত্য। বলার সাহস রাখি না। এ দেশে পুরস্কার ঘোষণা করে তা বাতিল করা হয়। বাতিল করেন রাজনীতিবিদগণ। নিজের কথা বলা অশ্লীলতা, তবুও বলি। আমার লেখা একটি পুস্তকের সুবাদে বইটির প্রকাশক ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন। আমি খুবই খুশি, মনে মনে গর্বিত বটে। কিন্তু তাতে একটি জিনিস কাঁটার মতো ফুটছে, লেখককে আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানানো হয়নি, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো তো দূর কি বাত।
আর পুরস্কার নিয়ে কারসাজি, রাজনীতি তো আছেই। আমি দুর্ঘটনাক্রমে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি এবং সরকারের সচিব হয়েছি। তাই আমার কাছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে। সেসব মনোনয়নের লেখকদের নাম (দু-একটি বাদে) বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তা হতেই পারে। এখন তারা পুরস্কার পাচ্ছেন কীভাবে বা কেন? পুরস্কারের এই যে রাজনীতিকীকরণ আমাদের কোনো কাজে লাগছে না, তা যে লজ্জার বিষয়, তা কি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীগণ বোঝেন?
সক্রেটিসকে তাঁর এক বন্ধু বলেছিলেন, তুমি যে এসব কথা বলছ, তার জন্য তোমাকে যদি এথেন্সের রাস্তায় কেউ চড় মারে তবে তোমাকে কে বাঁচাতে আসবে? আমরা জানি কেবল চড় নয়, তাঁর জীবন-হরণের সময়ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছাড়া তাঁর পাশে কেউই ছিল না। আমি চুনোপুঁটি, তবুও আমার অবস্থা ততটা খারাপ নয়। আমি লুকিয়ে থাকার কৌশল নিয়েছি– আর তা হচ্ছে লেখালেখি। আমার লেখা প্লেটো, গ্রিক সাহিত্য, দর্শন আর কে-ই-বা পড়ে!
আপনারা যে পুরস্কার দিয়ে আমার লেখাকে আলোতে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ক র প রস ক র প র জন ত ক প স তকট আম দ র প ঠ কর প রক শ র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সবাইকে চমকে দিলেন জাস্টিন বিবার
কয়েক বছর ধরে জাস্টিন বিবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন অসুস্থতা, কনসার্ট স্থগিত করা আর স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না—এমন সব বিষয় নিয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে বিবারের সঙ্গে গানের যেন অলিখিত একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। অবশেষে ভক্তদের চমকে দিয়ে নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করলেন কানাডীয় গায়ক। কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই বিবারের নতুন অ্যালবাম ‘সোয়্যাগ’ প্রকাশিত হয়েছে আজ। খবর বিবিসির
২০টি গানের অ্যালবামটিতে রয়েছে ‘ড্যাডজ লাভ’, ‘ডিভোশন’, ‘থেরাপি সেশন’-এর মতো গান, যেখানে উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংগ্রামের গল্প। কয়েক বছর ধরেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুগছেন গায়ক। মনে করা হচ্ছে, গানে গানে নিজের জীবনের গল্পই শ্রোতাদের সামনে হাজির করেছেন তিনি।
ইনস্টাগ্রামে অ্যালবামের প্রচারে বিবারকে দেখা গেছে স্ত্রী হেইলি বিবার ও তাঁদের সন্তানকে নিয়ে হাজির হতে। বিবারের ইনস্টাগ্রাম থেকে