লেখকের সবচেয়ে বড় সম্মাননা পাঠকের কাছ থেকে পাওয়া, যখন তাদের কেউ তার বই পড়ে। পাঠকের প্রতিটি পাঠই এই সম্মাননা এনে দেয়, যার জন্য লেখক লিখতে উৎসাহ পায়। এই পাঠকপ্রিয়তা ছাড়া কোনো লেখক কেবল নিজের মনের আনন্দে লিখে যেতে পারে না।
পাঠকপ্রিয়তার পরে আসে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা। লেখকের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রতিষ্ঠান যখন সম্মাননা দেয় তার পেছনে থাকে লেখকের পাঠকপ্রিয়তা এবং তার কাজের সার্বিক মূল্যায়ন। পাঠকপ্রিয়তা ব্যক্তি-পাঠক থেকে একটা গোষ্ঠী হয়ে সমগ্র পাঠকশ্রেণির হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা নৈর্ব্যক্তিক, যদিও এর পেছনে বিশেষজ্ঞদের বিচার-বিশ্লেষণ কাজ করে।
আমি কয়েকটি সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার পেয়েছি (সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাংলা একাডেমি, একুশে পদক)। বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা পেয়েছি ট্রাস্ট ব্যাংক-অন্যদিন-এর যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালে কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য। ২০২৫ সালের ৪ জুলাই ব্র‍্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের অংশ হিসেবে যে আজীবন সম্মাননা পেলাম তার আনন্দ অভূতপূর্ব। এই প্রথম এখন পর্যন্ত  সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় আমার অবদানের মূল্যায়ন করে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এই স্বীকৃতি পাওয়ার কৃতিত্ব আমার একার না, অনেকের। তাদের মধ্যে নিকটজন, শুভার্থী, প্রকাশক যেমন আছেন, গুরুত্বপূর্ণভাবে আছেন আমার পাঠক।
পঞ্চাশের দশকে আমার লেখালেখির যখন শুরু, এর পেছনে শখই ছিল প্রধান। তারপর একসময় দায়বদ্ধতার জন্য লেখা শুরু হলো। ভেতর থেকে কেউ বলল :  মানুষের জন্য লেখো, সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লেখো, শান্তি ও প্রগতির জন্য লেখো, সাম্য ও  সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লেখো। সেই থেকে শখ নয়, দায়বদ্ধতার জন্য লিখছি। স্মরণ করছি কবির উক্তি: ‘অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়, আছে এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর।’ আমি সেই বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে লিখছি।
লেখা শুরু করার এই এত বছর পরও মনে হয় এখনও সব বলা হলো না। সেরা লেখাটা সামনে থেকে হাতছানি দিচ্ছে। এখনও কত বিষয়ের নিগূঢ় রহস্য জানা বাকি, কত বর্ণনাশৈলী নাগালের বাইরে রয়ে গিয়েছে। জানি সে সবের প্রাপ্তিতে যবনিকাপাত ঘটবে না লেখালেখির ওপর। লেখক হিসেবে আমার যাত্রা নিরন্তর, আমৃত্যু-আজীবন। কানের কাছে শুনি দূরদেশের কবি বলছেন:  I have promises to keep/ I have miles to go before I sleep.


দীর্ঘ যাত্রার পথিক আমি মাঝে মাঝে ক্লান্তি বোধ করি। তখন দায়বদ্ধতার কথা মনে পড়ে, যে বিষয়গুলো আমার লেখার অপেক্ষায় আছে তাদের হাতছানি দেখতে পাই। বিরতি না দিয়ে আমি লিখতে থাকি। লিখে যাব যতদিন হাতে কলম তুলে নিতে পারি। আমাকে উৎসাহ দেবে আমার অচেনা অদৃশ্য পাঠক। আমাকে উজ্জীবিত করবে সম্প্রতি পাওয়া ব্র‍্যাক ব্যাংক-সমকাল আজীবন সম্মাননা।
আজীবন সম্মাননা বলছে আমাকে আমৃত্যু লিখে যেতে হবে। নতুন কিছু দিতে হবে, আরও ভালো করে লিখতে হবে। পাঠকপ্রিয়তার মতো, সম্মাননাও দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি সম্মানিত বোধ করছি। সেই সঙ্গে উপলব্ধি করছি আমার দায়বদ্ধতার কথা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ক র র জন য ল খ

এছাড়াও পড়ুন:

সবাইকে চমকে দিলেন জাস্টিন বিবার

কয়েক বছর ধরে জাস্টিন বিবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন অসুস্থতা, কনসার্ট স্থগিত করা আর স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না—এমন সব বিষয় নিয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে বিবারের সঙ্গে গানের যেন অলিখিত একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। অবশেষে ভক্তদের চমকে দিয়ে নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করলেন কানাডীয় গায়ক। কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই বিবারের নতুন অ্যালবাম ‘সোয়্যাগ’ প্রকাশিত হয়েছে আজ। খবর বিবিসির

২০টি গানের অ্যালবামটিতে রয়েছে ‘ড্যাডজ লাভ’, ‘ডিভোশন’, ‘থেরাপি সেশন’-এর মতো গান, যেখানে উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সংগ্রামের গল্প। কয়েক বছর ধরেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুগছেন গায়ক। মনে করা হচ্ছে, গানে গানে নিজের জীবনের গল্পই শ্রোতাদের সামনে হাজির করেছেন তিনি।

ইনস্টাগ্রামে অ্যালবামের প্রচারে বিবারকে দেখা গেছে স্ত্রী হেইলি বিবার ও তাঁদের সন্তানকে নিয়ে হাজির হতে। বিবারের ইনস্টাগ্রাম থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ