প্রকৃতি, মানুষ আর সংস্কৃতির সম্মিলনে গড়ে ওঠা এক অনন্য আয়োজনের সাক্ষী গাজীপুরের কালীগঞ্জ। ফেসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ স্থানীয় তরুণ সমাজকে সৃজনশীলতায় উদ্বুদ্ধ করতে, প্রকৃতি-সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে আয়োজন করে ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি প্রতিযোগিতা। 

এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ফুটে উঠছে কালীগঞ্জের নৈসর্গিক সৌন্দর্য, অন্যদিকে যুব সমাজও যুক্ত হচ্ছে নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে কালীগঞ্জ পৌরসভার ভাদার্ত্তী এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহনায় আয়োজন করা হয় ভিডিও ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। 

আকাশ-বাতাস, নদীর কলতান আর হালকা কুয়াশা মোড়া প্রকৃতির কোলে মুখরিত এই আয়োজন একদিকে সৃষ্টি করে উৎসবের আবহ, অন্যদিকে তুলে ধরে স্থানীয় প্রতিভার ঝলক।

‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে কেন্দ্র করে। মূল উদ্দেশ্য কালীগঞ্জের প্রকৃতি, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে দেশ ও দেশের বাইরে প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরা। বছরের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ঋতুকে ঘিরে আয়োজন করা হয় ফটোগ্রাফি ও ভিডিও প্রতিযোগিতা। এতে অংশগ্রহণ করেন কালীগঞ্জসহ আশপাশের নানা বয়সী তরুণ-তরুণী।

এই গ্রুপ এখন শুধু ছবি বা ভিডিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এক অনলাইনভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, যেখানে একদিকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অন্যদিকে তরুণ সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস, বেকারত্ব, হতাশা থেকে দূরে রাখতে চলছে নানামুখী আয়োজন।

‘ও আমার দেশের মাটি’ শিরোনামে আয়োজিত ভিডিও কনটেস্ট ছিল এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত প্রতিযোগিতা। দেশপ্রেম, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর মানবিক গল্পের এক অনবদ্য মিশেলে সেরা ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর নির্বাচিত হন কালীগঞ্জের সুপরিচিত সাংবাদিক রফিক সরকার। তার ভিডিও যেন গ্রামবাংলার গল্প শোনায়; যেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে অবিচ্ছিন্ন বন্ধনে।

এই বিভাগে আরেক বিজয়ী শিক্ষার্থী সুমন প্রধান। তরুণ বয়সেই দেশ, সমাজ আর প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতার যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ তার ভিডিওতে উঠে এসেছে, তা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন। তাদের সৃষ্টিশীলতাকে স্বীকৃতি জানাতে ‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’ এগিয়ে এসেছে হাতে-কলমে পুরস্কার নিয়ে।

‘বর্ষায় কালীগঞ্জের রূপ’ ফটো কনটেস্টেও প্রতিযোগীদের সৃজনশীলতার প্রশংসা করতে হয়। এই প্রতিযোগিতায় সেরা ফটোগ্রাফার নির্বাচিত হন তামিম রোহান। তার ক্যামেরার বন্দি হয়েছে বর্ষার ছায়া-সৌন্দর্য, আকাশের রং, নদীর ঢেউ, ভেজা মাটি আর মানুষের হাসিমুখ।

এই বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে তপু রায়হান, ইলিয়াস আহমেদ তন্ময় ও স্পেরো সুমাইয়া। তাদের তোলা ছবি যেন প্রকৃতির জীবনবোধের কাব্য। বর্ষার প্রতিটি ছোঁয়া, মেঘের নরমতা আর গ্রামের নিখাদ সরলতা ফুটে উঠেছে প্রতিটি ছবির প্রতিটি রঙে।

শীতকালীন ফটো কনটেস্টেও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেরা নির্বাচিত হন ইউনুস আলী। শীতের সকালের কুয়াশা, শিশিরবিন্দু, আলোর রেখা আর গ্রামবাংলার প্রতিটি মূহূর্ত ধরা পড়েছে তার ক্যামেরায়। 

একই বিভাগে প্রথম হন সুমন হোসেন সৈকত, দ্বিতীয় ইলিয়াস হোসেন ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রানা আফরিন। প্রত্যেকের ছবিতে ছিল শিল্পের ছাপ, হৃদয়ের স্পর্শ।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জের প্রধান নুরুল ইসলাম, অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্য সাব্বির আহমেদ, হাসিব খান, রাশিদুল ইসলাম, সুমাইয়া হক, মোকারম আহাম্মদ ও অনিক সরকার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আয়োজনে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব।

পুরস্কারপ্রাপ্ত সবার মুখেই ছিল হাসি আর গর্ব। তারা জানান, এই স্বীকৃতি তাদের আগামী দিনে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভিডিও কিংবা ছবি সবখানেই ছিল নিজস্ব এলাকার প্রকৃতি, সংস্কৃতি আর মানুষের গল্প। তাদের প্রত্যাশা, এই গ্রুপের এমন আয়োজন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে দেশের অন্য অঞ্চলেও এমন সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠবে।

‘দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জ’-এর উদ্যোক্তারা বলেন, ‘‘আমরা চাই নতুন প্রজন্ম নিজেদের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসুক। তারা যাতে ভুল পথে না যায়, সেজন্য আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস।’’
 
এ গ্রুপের মাধ্যমে তরুণরা যেমন নিজের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে, তেমনি সামাজিক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। অনলাইনভিত্তিক হলেও এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ছে অফলাইনে বিশুদ্ধ সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে।

কালীগঞ্জের প্রতিটি বাঁক, নদী, মাঠ, কুয়াশা, ভোরের আলো কিংবা বর্ষার ঝমঝম সবকিছুই ধরা পড়ছে দৃষ্টিনন্দন কালীগঞ্জের আয়োজনে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের ক্যামেরায়। এতে যেমন সৃজনশীল তরুণদের আত্মপ্রকাশ ঘটছে, তেমনি সংরক্ষণ করা হচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা মুখ।

প্রতিযোগিতার এই আয়োজনগুলো যেন ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এটাই প্রত্যাশা স্থানীয় মানুষ ও আয়োজকদের।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক ত র স ন দর য প রস ক র স জনশ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু: ভিপি, জিএস, এজিএসে ৮ কেন্দ্রে এগিয়ে যারা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শেষে আটটি কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ অনানুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বেশিরভাগ কেন্দ্রে শীর্ষ তিন পদের মধ্যে দুটিতে ইসলামী ছাত্রশিবি এবং একটিতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। তবে এই তিন পদে আট কেন্দ্রেই শিবির-ছাত্রদলের প্রার্থীদের লড়াই বেশ চোখে পড়ার মতো; অবশ্য বামপন্থিরা লড়াইয়ে আসতেই পারেননি।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয় সন্ধ্যার পর। ভোটার সংখ্যা কম-বেশি থাকায় কোনো কেন্দ্রে আগে, কোনো কেন্দ্রে দেরিতে ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। রাত ২টায় পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আটটি কেন্দ্রের ফলাফল হলো এমন: 

আরো পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: পাঁচ হলের ভিপি-জিএস হলেন যারা

প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

আলাওল হল কেন্দ্র
চাকসুর ভোটে এই কেন্দ্রে ভিপি পদে শিবিরের ইব্রাহিম রনি ৩৯৩টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হৃদয় পেয়েছেন ২৫১টি ভোট।

জিএস পদে শিবিরের সাঈদ বিন হাবিব ৩৯৩টি ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন; আর ছাত্রদলের শাফায়াত ২০০টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। 

এজিএস পদে ছাত্রদলের তৌফিক ৪৭১টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন, যেখানে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না পেয়েছেন ২২৫টি ভোট।

বিজয় ২৪ হল কেন্দ্র (ছাত্রী হল) 
এই হলে ভিপি পদে শিবিরের রনি ৬৪৪টি ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন, যেখানে ছাত্রদলের সাজ্জাদ ২২৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।

জিএস পদে শিবিরের সাঈব হাবিব ৬৮৯টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ছাত্রদলের শাফায়াত, তার প্রাপ্ত ভোট ১৬৪টি।

এজিএস পদে ছাত্রদলের তৌফিক ৫৬৭ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। শিবিরের মুন্না 
৩৫১ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

এফ রহমান হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে রনি (শিবির) ৩৮১টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন, যেখানে হৃদয় (ছাত্রদল) ২২৬ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।

জিএস পদে সাঈদ (শিবির) ৩৫১ ও শাফায়াত (ছাত্রদল) ২২০টি ভোট পেয়েছেন।

এজিএস পদে তৌফিক (দল) ৪৪২টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এবং মুন্না (শিবির) ২৩১ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

শাহজালাল হল কেন্দ্র 
এই হলে ভিপি পদে রনি (শিবির) ৭৭৯ ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন; আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাজ্জাদ হৃদয় (ছাত্রদল) ৪৮১ ভোট পেয়েছেন।

জিএস পদে সাঈদ (শিবির) ৭৮০ পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; শাফায়াত (দল) ২৮৫টি দ্বিতীয় হয়েছেন।

শাহজালাল হল কেন্দ্রে শিবিরের সাজ্জাদ মুন্না ছাত্রদলের তৌফিকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এই হলে মুন্না মুন্না (শিবির) ৭৮৩টি এবং তৌফিক (দল) ৫৮৯টি ভোট পেয়েছেন।

শিল্পী আব্দুর রশিদ চৌধুরী হোস্টেল কেন্দ্র
এখানে ভিপি পদে সাজ্জাদ (ছাত্রদল) ৩৪টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ২৭ ভোট নিয়ে শিবিরের রনি দ্বিতীয় এবং ২৬টি ভোট নিয়ে বামের ধ্রুব বড়ুয়া তৃতীয় হয়েছেন।

জিএস পদে সুদর্শন চাকমা (বাম) ২৯টি ভোট নিয়ে এগিয়ে আছেন। এখানে সাঈদ (শিবির) ২৮টি এবং শাফায়েত (ছাত্রদল) ১৪টি ভোট পেয়েছেন।

এজিএস পদে ছাত্রদলের তৌফিক ৩৮টি এবং শিবিরের মুন্না ১১টি ভোট পেয়েছেন।

অতীশ দীপংকর হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে সাজ্জাদ (ছাত্রদল) ২২৩টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ধ্রুব বড়ুয়া (বৈচিত্র্যের ঐক্য) ও ইব্রাহিম রনি (শিবির) ‍উভয়েই ৯০টি করে ভোট পেয়েছেন। 

জিএস পদে শাফায়েত (ছাত্রদল) ১৬৪টি ভোট নিয়ে এখানে এগিয়ে রয়েছেন। সুদর্শন চাকমা (বামজোট) ১৩১টি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় এবং সাঈদ (শিবির) ৮৩টি ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

এজিএস পদে তৌফিক (ছাত্রদল) পেয়েছেন ২৬৬টি। যেখানে পলাশ দে (বিনির্মাণ শিক্ষার্থী জোট) ৬২টি এবং মুন্না (শিবির) ৪৫টি ভোট পেয়েছেন।

এই হলে ৬০ শতাংশ অমুসলিম শিক্ষার্থী থাকেন।

সোহরাওয়ার্দী হল কেন্দ্র
এই হলে ভিপি পদে রনি (শিবির) ১ হাজার ৪৮৮টি ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এখানে সাজ্জাদ (ছাত্রদল) পেয়েছেন ৬৮০টি ভোট।

জিএস পদে সাঈদ (শিবির) ১ হাজার ৪০৪টি ভোট নিয়ে ব্যাপক ব্যবধানে পেছনে ফেলেছেন ৪৫৮টি ভোট পাওয়া শাফায়েতকে।

এজিএস পদে তৌফিক (ছাত্রদল) ৯৬৮ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; যেখানে  
৯০৬ নিয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছেন মুন্না (শিবির)। 

শহীদ আব্দুর রব হল কেন্দ্র 
এই হলে ভিপি পদে রনি (শিবির) ৬৪৯ ভোট নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন; যেখানে হৃদয় (ছাত্রদল) পেয়েছেন ২৮২টি ভোট।

জিএস পদে সাঈদ (শিবির) ৬৩৬টি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। আর ছাত্রদলের শাফায়েত পেয়েছেন ১৫৭টি ভোট।

এজিএস পদে তৌফিক (ছাত্রদল) ৫৪০ ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন; শিবিরের মুন্না পেয়েছেন ৩৬৩টি ভোট। 

ঢাকা/মিজান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ