জুলাই শহীদদের স্মরণে আয়োজিত দিনব্যাপী ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন।
ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাইমুম শিল্পীরা পরিবেশন করেন ওস্তাদ তোফাজ্জেল হোসেনের লেখা গান ‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ, আমার ভালোবাসা’।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে পর্যায়ক্রমে মঞ্চে আসবেন দেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিল্পীগোষ্ঠী, ব্যান্ড ও একক শিল্পীরা।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানকে ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা দিয়ে চলাচলকারী গণপরিবহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গুলিতে দৃষ্টি হারালেও স্বপ্ন হারায়নি হিমেল, দেখতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশ
ছবি-২: মায়ের কাঁধে ভর করে টাঙ্গাইলের একটি অনুষ্ঠানে যেতে বাড়ি থেকে বের হয় দৃষ্টি হারানো হিমেল। তাঁদের বিদায় জানান হিমেলের ভাই মো. জনি মিয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ী গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
গুলিতে দৃষ্টি হারালেও স্বপ্ন হারায়নি হিমেল, দেখতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রতিনিধি,
গত বছরের ৪ আগস্ট টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাওয়ের সময় পুলিশের গুলিতে চোখের দৃষ্টি হারায় হিমেল ইসলাম (১৬)। চিকিৎসকেরা তাকে ও তার পরিবারকে জানিয়েছেন, সে আর কখনো চোখে দেখতে পারবে না।
তবু চোখে স্বপ্ন আছে হিমেলের—আবার সুন্দর করে বাঁচার, আবার স্বাধীন বাংলাদেশকে দেখার। মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে এমনটাই বলল হিমেল।
উপজেলার লালবাড়ী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খাটের ওপর বসে আছে হিমেল। তার মা নাছিমা বেগম ও বড় ভাই মো. জনি মিয়া (২৫) তাকে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন টাঙ্গাইলের শিল্পকলা একাডেমিতে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ছেলের চোখ হারানো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নাছিমা বেগম। তিনি বলেন, তাঁর পরিবারে মা, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী ও এক নাতি আছে। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামী আফাজ উদ্দিন তাঁদের ফেলে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকে নাছিমা বেগমের জীবনে নামে দুর্ভোগ। ছেলেদের নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে থাকেন। বড় ছেলে জনি ১৩-১৪ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে শ্রমিকের কাজ শুরু করে। হিমেলও ১২-১৩ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় এক ডেকোরেটরের দোকানে কাজ করত।
গত বছরের ৪ আগস্ট গোড়াই হাইওয়ে থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয় হিমেল। সে সময় তার চোখ, মুখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এক সপ্তাহ পর ছুটি দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সে আর চোখে দেখতে পারবে না। পরে চোখের ক্ষত না শুকানোয় হিমেলকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। এখন নিয়মিত তাকে সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে হয়।
নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার বয়স হইছে। এখন আর কাজ করতে পারি না। বড় ছেলেডা এক ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে, ১০ হাজার টাকা বেতন পায়। তা দিয়্যা ছেলে, বউ, মা আর নাতি নিয়া খুব কষ্টে দিন কাটাইতাছি।’
হিমেলের ভাই জনি মিয়া বলেন, ‘আমি উত্তরা স্পিনিং মিলে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। সংসারে ছয়জন মানুষ নিয়া খুব কষ্টে চলি। আল্লায় ভাইডারে যদি ভালো কইর্যা দিত, তাইলে আগের মতো কাজ করা পারত। আমাগো সবাই ভালো কইর্যা চলতে পারতাম।’
হিমেল ইসলাম বলে, ‘আমি ৫ আগস্টের আগে পড়ালেখা করতাম। ক্লাস নাইনের ছাত্র ছিলাম। ডেকোরেশনের কাজ করতাম। এখন আমার চোখে গুলি লেগে নষ্ট হয়ে গেছে। আগস্টের ৪ তারিখে আন্দোলনে যোগ দিই। হাইওয়ে থানায়। থানা থেকে আমাদের গুলি করে। আহত অনেকের মধ্যে আমি একজন। আমার সারা মুখে এখনো বুলেট আছে। এই বুলেটে আমার অনেক ক্ষতি হয়। দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। আমার পরিবারের অনেক কষ্ট এখন। এখন আমার চাওয়া একটাই—আবার আমি সুন্দর করে বাঁচতে চাই; স্বাধীন বাংলাদেশ আবার দেখতে চাই।’
নাছিমা বেগম জানান, সরকারিভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং রাজনৈতিক দল ও কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। এর সবই হিমেলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে গেছে।
এদিন হিমেলকে নিয়ে টাঙ্গাইলের পথে রওনা দেন মা নাছিমা বেগম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভাই জনি মিয়া হিমেলের পায়ে জুতা পরিয়ে দেন, ময়লা মুছে দেন। এরপর গাড়িতে তুলে দেন মা ও ভাইকে।