দুই মাস আগে বান্দরবানের থানচি বাজার থেকে উদ্ধার হয় দুটি রাজধনেশের ছানা। বটের ফল, জাম, কলাসহ নানা ধরনের ফলমূল খাইয়ে ছানা দুটিকে লালনপালন করে বন বিভাগ। বড় হওয়া ছানা দুটির এখন শরীরজুড়ে পালক, রয়েছে উড়তে পারার মতো পাখনা। তাই মুক্ত করা হয় গহিন বনে। তবে বনে ছেড়ে দিলেও ধনেশ দুটি মানুষের সংস্রব ছেড়ে যেতে চায় না। উড়ে বেড়ানোর প্রবণতাও নেই তাদের। এমন পরিস্থিতিতে রাজধনেশ দুটিকে বন থেকে ফিরিয়ে এনে পাঠানো হয়েছে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধনেশ দুটিকে সাফারি পার্কে পাঠানো হয়। এর আগে গত ২ জুন থানচি বাজার থেকে রাজধনেশ দুটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। বান্দরবানের থানচি উপজেলার সাঙ্গু সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে রাজধনেশের ছানা দুটি ধরে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, থানচি বাজারে রাজধনেশ বিক্রি করতে নিয়ে আসা ব্যক্তির আইনকানুন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। বন থেকে ছানা দুটি সংগ্রহের পর টাকা পাওয়ার আশায় তিনি বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। বন বিভাগ নানা স্তরে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বাজার থেকে ছানা দুটি উদ্ধার করে। এরপর বন বিভাগের কর্মীরা সেটি লালনপালন করে। ২ আগস্ট রাজধনেশ দুটিকে সাঙ্গু সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলসংলগ্ন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে রাজধনেশ দুটি উড়ে যায়নি। মানুষের সংস্রব ছেড়ে উড়ে যাওয়ার কোনো প্রবণতাও দেখা যায়নি ধনেশ দুটির। তাই ধনেশ দুটিকে ফিরিয়ে আনে বন বিভাগ।

বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুর রহমান বলেন, ধনেশ ছানাদের মা-বাবা বড় করে। উদ্ধার হওয়া ধনেশ বড় হয়েছে মানুষের সংস্পর্শে। বন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বুনো স্বভাব হারিয়েছে ধনেশ দুটি। তাই বনে মুক্তির পর পুনরায় ফেরত এনে কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে। সেখানে খোলামেলা পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করলে বনে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববাজারে কিছুটা কমেছে সোনার দাম, মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রভাব

গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের লেনদেনে সোনার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল স্পট মার্কেটে সোনার দাম কিছুটা কমেছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধিও মূল্যবান এই ধাতুর দাম কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে। স্পট মার্কেটে গতকাল সোনার দাম কমেছে দশমিক ১ শতাংশ। প্রতি আউন্সের মূল্য দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৫৯ ডলার ৯৯ সেন্টে। তবে এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার মার্কেটে মূল্যবান ধাতুটির দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি মূল্য পৌঁছেছে ৩ হাজার ৪১৩ ডলার ৪০ সেন্ট।

স্যাক্সো ব্যাংকের হেড অব কমোডিটি স্ট্র্যাটেজিস্ট ওলে হ্যানসেন বলেন, ‘বাজারে গত শুক্রবার সোনার দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ার পর এই দরপতন স্বাভাবিক। এদিকে সুদহার কিছুটা বেড়েছে এবং শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে সোনার দাম সীমিত পরিসরে ওঠানামা করছে। তবে মূল্যবান ধাতুটির দাম যদি আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪৩০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রয়ের প্রবণতা বাড়বে। এতে সোনার দাম নতুন করে বাড়তে পারে।

অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে স্পট মার্কেটে গতকাল রুপার দাম বেড়েছে দশমিক ৯ শতাংশ। প্রতি আউন্সের মূল্য পৌঁছেছে ৩৭ ডলার ৩৪ সেন্টে। প্লাটিনামের দাম দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২০ ডলার ১৯ সেন্টে। গতকাল প্যালাডিয়ামের দাম দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। আউন্সপ্রতি দাম হয়েছে ১ হাজার ২০৫ ডলার ৯৩ সেন্ট।

এদিকে সোনার দাম নিয়ে দেওয়া পূর্বাভাস সংশোধন করেছে সিটি গ্রুপ। গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাংকটি জানায়, আগামী তিন মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে উঠতে পারে। এর আগে দেওয়া প্রাক্কলনে যা ছিল আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ ডলার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত দুর্বল পূর্বাভাসের কারণে সোনার দাম নিয়ে দেওয়া প্রাক্কলন সংশোধন করা হয়েছে। সিটি গ্রুপ বলছে, ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ও শুল্ক–সম্পর্কিত মূল্যস্ফীতি ওপরের দিকে থাকবে। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হার কমে যাওয়ায় সোনার দাম নতুন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

চলতি বছর বিশ্ববাজারে সোনার দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলছে, চলতি বছর সোনার দাম বাড়তি থাকবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডব্লিউজিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সোনার মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যেসব কারণ আছে, সেগুলো হলো ডলারের বিনিময় হার কমে যাওয়া, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বেড়ে যাওয়া। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে স্থবিরতা বা মন্দার ঝুঁকি বাড়লে ভবিষ্যতে এই ধাতুর চাহিদা আরও বাড়তে পারে।

বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র সোনার দামেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও, তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু এই নিশ্চয়তা দেয় না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববাজারে কিছুটা কমেছে সোনার দাম, মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রভাব