আর দশজন কিশোরের মতো ফুটবল বা ক্রিকেটে নয়, চট্টগ্রাম শহরে জন্ম নেওয়া আইয়ুব বাচ্চু শুধু গান আর গিটারে মেতে থাকতেন। তারপর ১৯৮৩ সালের এক বিকেলে মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। নিঃসঙ্গ সেই হোটেলবাসী বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনতি দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তাঁর সঙ্গে, তাঁর গিটারের ঝনাৎকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। সেই চিরতরুণ গানের মানুষটির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল ২০১৮ সালের ঠিক এই দিনে, ১৮ অক্টোবরের সকালে। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন।

৬০০ টাকা নিয়ে ঢাকায় আসা মানুষটি অগণিত মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ফিরে গেলেন চট্টগ্রামে, নিথর দেহে। রেখে গেলেন পঁয়ত্রিশ বছরের স্মৃতি। সুখে–আনন্দে–গৌরবে কাটানো পঁয়ত্রিশটি বছরের মধ্যে যেমন রয়েছে তাঁর সংগ্রাম, তেমনি রয়েছে বেদনা, মান–অভিমান আর রোগ–শোকে ভোগার ঘটনাও।

১৬ অক্টোবর রংপুরে ছিল আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের শেষ কনসার্ট। ছবি: গান বাংলার সৌজন্যে।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইয় ব ব চ চ

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনায় শীত মৌসুমেও কমছে না ডেঙ্গু

ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনায় শীত মৌসুমেও কমছে না ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বাসিন্দারা বলছেন, মশক নিধন কার্যক্রমে প্রশাসনের উদাসীনতায় নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ওষুধ সংকটে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেকেই।

ডেঙ্গুর হটস্পট বরগুনায় উপজেলাগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি সনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাথরঘাটা। 

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৯ জন। তবে, বেসরকারি ক্লিনিকে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি এই উপজেলায়।

এদিকে আক্রান্ত হয়ে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসক, নার্স ও ওষুধ সংকটের পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। 

পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৯ নভেম্বর ভর্তি হয়েছেন উপজেলার চরদুয়ানী এলাকার জেলে হাবিব হাওলাদার। তিনি বলেন, “তিন দিনে একবার চিকিৎসক দেখে গেছেন। তারপর আর চিকিৎসকের দেখা পাইনি। প্রয়োজন হলে নার্সদের ডেকেও পাওয়া যায় না।”

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭নং বেডে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন আবুল হাসনাত (১৯)। তিনি বলেন, “পাঁচ দিন ধরে ভর্তি হয়ে আছি। এখান থেকে কোন ওষুধ দেয়নি। সব বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ভেবেছিলাম ৫ আগস্ট হাসিনা পালানোর পরে স্বাস্থ্য খাতসহ সব কিছুর উন্নতি হবে কিন্তু এখন আরো খারাপ অবস্থা। সরকারিভাবে কোন ওষুধ পাইনি। আমি বাইরে থেকে কিনে নিচ্ছি। কিন্তু যাদের সামর্থ্য নেই তারা খুব কষ্টে আছে।”

ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালে বন্ধ। তাই বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে চড়া দামে করাতে হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

এমন পরিস্থিতিতে মশক নিধনের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

পাথরঘাটা পৌর শহরের বাসিন্দা ইমাম হোসেন নাহিদ বলেন, “প্রতিদিন এই উপজেলার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু। অথচ প্রশাসনের মশক নিধন কার্যক্রম নেই। এই উপজেলায় মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। অথচ এখানে স্বাস্থ্য খাতে সংকটও বেশি। অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছে। তারপরেও মশক নিধনে কোন পদক্ষেপ নেয়নি পৌর ও উপজেলা কর্তৃপক্ষ।”

পাথরঘাটা গোল চত্বর এলাকার এএস এম জসিম বলেন, “শীত মৌসুমেও এত মশার উৎপাত যে এখন ঘর ছাড়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। পৌরসভা থেকে মশক নিধনে কোন উদ্যোগ আমরা পৌরবাসী দেখিনি। মশক নিধনে বরাদ্দ আছে, সেই টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে অথচ সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে।”

এদিকে বরগুনা সদর, বেতাগী ও বামনা উপজেলায় এখনো চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অভিযোগ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও।

এসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা চিকিৎস্যা নিচ্ছেন তারা বলছেন, সরকারিভাবে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও কিছুই পাচ্ছেন না তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে বাইরে থেকে। সব দিকে সিন্ডিকেট। ডেঙ্গুতে এত খারাপ অবস্থা অথচ সরকারের কোন নজরদারি নাই।

এসব বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন আবুল ফাত্তাহ বলেন, “নানামুখী সংকটের মধ্যেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

শীত মৌসুমেও এডিস মশা না কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শীতের শুরুর দিকে বৃষ্টি হয়েছে, সেই সময়ে মশক নিধনে জোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল। মশক নিধন আমাদের কাজ না, এটা প্রশাসনের কাজ। তারপরেও আমরা তাদের সাথে নিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের তাগাদা দিচ্ছি। তবে, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এতে ধারণা করছি এখন সারা বছর ডেঙ্গু থাকবে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

সরকারি হিসাবে চলতি বছরে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৪ জন হলেও বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, মৃত্যুর সংখ্যা ৬৪।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ