আরও এক জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করল হামাস
Published: 18th, October 2025 GMT
ইসরায়েলের কাছে আরও এক জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। গতকাল শুক্রবার রাতে মরদেহটি ইসরায়েলে পৌঁছায়।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি বলেছে, বিধ্বস্ত গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা যেসব জিম্মির মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি, সেগুলো খুঁজে বের করে ফেরত দেওয়া হবে।
গতকাল নতুন করে আরেকটি মরদেহ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রেডক্রসের মাধ্যমে গাজায় নিরাপত্তা বাহিনীর (ইসরায়েলি) কাছে ফেরত দেওয়া এক জিম্মির মরদেহবাহী কফিন গ্রহণ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে মরদেহটি শনাক্ত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এ–সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মির সবাইকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। পাশাপাশি ৯ জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার আবারও বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ় অবস্থানে আছেন। তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এটা করতে না পারলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আবারও যুদ্ধ শুরু করবে।গতকাল হস্তান্তর করা মরদেহের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এটিকে এখনো জিম্মির মরদেহ হিসেবে হিসাব করা হয়নি। হামাসের কাছে মোট ২৮ জিম্মির মরদেহ থাকার কথা।
জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েল কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানও বন্ধ রেখেছে তারা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার আবারও বলেছেন, হামাসের কাছ থেকে সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ় অবস্থানে আছেন। তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস এটা করতে না পারলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আবারও যুদ্ধ শুরু করবে।
গতকাল হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গাজি হামাদ এসব হুমকিকে ‘অগ্রহণযোগ্য চাপ তৈরির কৌশল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এক বিবৃতিতে হামাদ বলেন, মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি জটিল ও সময় লাগবে। বিশেষ করে দখলদারির (ইসরায়েলি) কারণে গাজার চিত্র পাল্টে যাওয়ায় এ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মরদেহগুলো ফেরত দেব এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুক্তি মেনে চলব।’
(জিম্মিদের) মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি জটিল ও সময় লাগবে। বিশেষ করে দখলদারির (ইসরায়েলি) কারণে গাজার চিত্র পাল্টে যাওয়ায় এ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে গেছে। আমরা মরদেহগুলো ফেরত দেব এবং আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুক্তি মেনে চলব।গাজি হামাদ, হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মরদেহ উদ্ধারে সহযোগিতা করার জন্য তুরস্ক একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে। তবে দলটি গতকাল পর্যন্ত গাজায় প্রবেশের জন্য ইসরায়েলের অনুমতি পায়নি।
তুর্কি এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ইসরায়েল কখন তুর্কি দলকে গাজায় প্রবেশ করতে দেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তুরস্কের দলটিকে ফিলিস্তিনি ও জিম্মি উভয়ের মরদেহ খুঁজে বের করার কাজ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হামাসের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, তুর্কি প্রতিনিধিদল রোববারের মধ্যে গাজায় প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজায় হামাসের অধীন পরিচালিত উদ্ধারকারী সংস্থা সিভিল ডিফেন্স বলেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৮০টির বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুনজিম্মিদের মরদেহ ফেরতে বিলম্বকে চুক্তি লঙ্ঘন বলছেন নেতানিয়াহু, একমত নয় যুক্তরাষ্ট্র১৬ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম ম র মরদ হ হ ইসর য় ল র বল ছ ন গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি