সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আমাদের কালের সন্ত
Published: 18th, October 2025 GMT
গত শতকের আশির দশকে যাঁরা কিশোর বা তরুণ ছিলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ঘটেছিল একটি সাহিত্য-কলামের মাধ্যমে। আমিও সে রকমই একজন। দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য সাময়িকীতে ‘অলস দিনের হাওয়া’ শিরোনামের সেই কলাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো, আর আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম নতুন কিছু জানার জন্য। প্রতিটি পর্বেই তিনি বিশ্বসাহিত্যের কোনো না কোনো লেখক বা বই বা কোনো সাহিত্যতত্ত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। আমরা অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম, একজন মানুষ এত জানেন কীভাবে, এত পড়েনই-বা কখন? তাঁর ভাষাটিও ছিল এত মাধুর্যভরা ও স্মার্ট যে পড়তে শুরু করলে আর রেখে দেওয়া যেত না। নন-ফিকশনের ভাষাও যে এত স্বাদু ও মধুর হতে পারে, তাঁর লেখা পড়ার আগে কখনো তা অনুভবই করিনি। তখনো তিনি গল্প লিখতে শুরু করেননি, অথবা লিখলেও আমাদের তা চোখে পড়েনি, কিন্তু প্রাবন্ধিক হিসেবে, কিংবা বলা যায় নন-ফিকশন লেখক হিসেবে তিনি আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠলেন। তাঁর সেসব লেখাকে প্রবন্ধ বললে ঠিক সুবিচার করা হয় না। কারণ, প্রবন্ধের প্রচলিত কাঠামো তিনি ভেঙে ফেলেছিলেন, তৈরি করেছিলেন নতুন এক গদ্যভঙ্গি।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল একটি সাহিত্য-কলামের মাধ্যমে। দৈনিক সংবাদ-এর সাহিত্য সাময়িকীতে ‘অলস দিনের হাওয়া’ শিরোনামের সেই কলাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতো। প্রতিটি পর্বেই তিনি বিশ্বসাহিত্যের কোনো না কোনো লেখক বা বই বা কোনো সাহিত্যতত্ত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন।এই কাঠামো ভাঙার ব্যাপারটা আমরা আবার দেখলাম নব্বইয়ের দশকে এসে। একটি দৈনিক পত্রিকার (সম্ভবত বাংলাবাজার পত্রিকা) সাহিত্য সাময়িকীতে ব্রাত্য রাইসুর সঙ্গে যৌথভাবে ‘যোগাযোগের সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক’ শিরোনামের ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতে শুরু করলেন তিনি। দুজন মিলে যে একটা উপন্যাস লেখা যায়, এটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। তা-ও যেনতেন উপন্যাস নয়, কাহিনিপরম্পরা বা চরিত্রায়ণ বা আখ্যানের পরিণতি নিয়ে দুই লেখকের দ্বন্দ্ব কিংবা মতবিরোধ অথবা সন্ধি বা মতৈক্যের ব্যাপারগুলোও আসতে লাগল উপন্যাসে। এ কেমন ধারার উপন্যাস? পাঠক হিসেবে আমাদের যে অভ্যস্ততা বা অভিজ্ঞতা, সেসবের একেবারে বাইরে গিয়ে রচিত হচ্ছে এই উপন্যাস। এভাবে উপন্যাস লেখা যায় নাকি? ব্রাত্য রাইসু আমাদের সমসাময়িক, কবি আর সৈয়দ মনজুর আমাদের অগ্রজ, প্রাবন্ধিক—দুজন মিলে আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করে চলেছেন নাকি? রাইসুর অবশ্য সবকিছু নিয়ে ঠাট্টা করার সহজাত ক্ষমতা ছিল; কিন্তু সৈয়দ মনজুর তো গম্ভীর গম্ভীর প্রবন্ধ লেখেন, একি তাহলে নিছকই তাঁর শৌখিন কাজ? এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল অচিরেই—না, শৌখিন নয়, এ তাঁর ফিরে আসার কৌশল, কথাসাহিত্যের কাছে, গল্পের কাছে।
এই যে পাঠককে তার অভ্যাস বা অভ্যস্ততা বা অভিজ্ঞতার বাইরে নিয়ে যাওয়া, সেটি ঘটতে লাগল তখনো, যখন তিনি গল্প লিখতে শুরু করলেন। সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি।
২.কেবল লেখক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে নয়, জনসমাজে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল আরও বহু পরিচয়ে। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ, চিন্তক ও দার্শনিক, গবেষক ও তাত্ত্বিক—এই রকম আরও অনেক কিছু।
শিক্ষক অনেক আছেন, কিন্তু আদর্শ শিক্ষক? সেই সংখ্যা নিতান্তই অঙ্গুলিমেয়। আদর্শ শিক্ষক আমরা কাকে বলব? যিনি শ্রেণিকক্ষে ভালো পড়ান তাঁকেই? ভালো পড়ানো আদর্শ শিক্ষক হওয়ার অন্যতম শর্ত, তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু একমাত্র শর্ত নয়। ভালো শিক্ষকমাত্রই শ্রেণিকক্ষকে আনন্দময় করে তোলেন। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল আনন্দমুখরই করেন না; বরং শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে শেখান, প্রশ্নমুখর করে তোলেন, নিজের বিষয়ের বাইরে গিয়ে আরও নানা বিষয় নিয়ে আগ্রহী ও কৌতূহলী করে তোলেন; কেবল জ্ঞানই বিতরণ করেন না, প্রজ্ঞার আলোয় উদ্ভাসিত করে তোলেন শ্রেণিকক্ষকে। কেবল তা-ই নয়, শ্রেণিকক্ষের বাইরেও আরও বহু মানুষ তাঁকে আদর্শ শিক্ষক হিসেবেই মান্য করেন। যেমন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আমার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক নন, তিনি পড়াতেন ইংরেজি সাহিত্য আর আমি পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, তবু তাঁকে সব সময় শিক্ষক হিসেবে মান্য করে এসেছি, যদিও তাঁর নির্দেশে সব সময় ‘ভাই’ বলে ডাকতে হয়েছে, ‘স্যার’ বলে ডেকে বকাও খেয়েছি কয়েকবার।
ভালো শিক্ষকমাত্রই শ্রেণিকক্ষকে আনন্দময় করে তোলেন। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল আনন্দমুখরই করেন না; বরং শিক্ষার্থীদের চিন্তা করতে শেখান। অবশ্য তাঁকে শুধু শিক্ষক বললেও কম বলা হয়। শিক্ষার ধরন ও মানোন্নয়ন নিয়ে ক্রমাগত ভেবেছেন, লিখেছেন, কথা বলেছেন।আরেকটি বিশেষ গুণ থাকে একজন আদর্শ শিক্ষকের। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভাজন করেন না। শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী ইত্যাদির বিভিন্নতা তিনি মানেন না, তাঁর কাছে সবাই সমান। এমনকি ভালো ছাত্র, খারাপ ছাত্র বলেও কিছু নেই তাঁর কাছে, নেই ব্যাকবেঞ্চার বলে কেউ। সবার জন্য সমান মনোযোগ, সমান ভালোবাসা। সৈয়দ মনজুর ছিলেন সেই ধরনের শিক্ষক।
অবশ্য শুধু শিক্ষক বললেও কম বলা হয়। শিক্ষার ধরন ও মানোন্নয়ন নিয়ে, আদর্শ শিক্ষার স্বরূপ ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ক্রমাগত ভেবেছেন, লিখেছেন, কথা বলেছেন। কেবল শিক্ষা নয়, জ্ঞানের বিবিধ শাখা নিয়ে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের পরিচয় আমরা সব সময় পেয়েছি লেখায়, বলায়, আলোচনায়। স্বল্প পরিসরের এই লেখায় সব বলার সুযোগ নেই।
৩.তাঁর সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ বিকশিত রূপ ধরা পড়েছিল গল্প রচনার সময়। ১৯৭৩ সালে তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হলেও এরপর প্রায় দুই যুগ তিনি গল্পচর্চা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছিলেন। এই দীর্ঘ বিরতিকালের মধ্যেই প্রাবন্ধিক ও সমালোচক হিসেবে তিনি রীতিমতো খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। কথাসাহিত্য রচনায় তিনি ফিরে আসেন নব্বই দশকে, এরপর গত তিন দশকে লিখেছেন শতাধিক গল্প এবং গোটা পাঁচেক উপন্যাস। এ ছাড়া বিবিধ বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধও লিখেছেন এ সময়ে।
মাসুক হেলালের আঁকা সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতিকৃতিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রবন ধ উপন য স কর ন ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সালাতুল হাজাত’ নামাজে যে দোয়া পড়বেন
ইসলামে মানুষের যেকোনো বৈধ প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতি অত্যন্ত সরল ও সুস্পষ্ট। এটি কোনো নির্দিষ্ট ধরনের নামাজের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য, বিশ্বাস ও মনোযোগের ওপর।
প্রয়োজন পূরণের জন্য কিছু সাধারণ আমল সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত, যার মধ্যে একটি হলো নামাজ পড়া। এই নামাজকে বলে ‘সালাতুল হাজাত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ।
হাদিসের বর্ণনাবিশুদ্ধ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ পূর্ণভাবে আদায় করে, আল্লাহ তাকে তার চাওয়া জিনিস দ্রুত অথবা বিলম্বে দান করেন।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬৯০০)
অর্থাৎ, সে যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত হয় (অর্থাৎ, হালাল পথে থাকে ও আনুগত্যশীল হয়), তবে আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন। এ ক্ষেত্রে এই সাধারণ আমলের ওপর নির্ভর করাই উত্তম।
নবীজি (সা.) একজন অন্ধ সাহাবীকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দোয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন, যা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তবে প্রয়োজন পূরণের জন্য নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা বা নির্দিষ্ট দোয়ার বিষয়ে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার অধিকাংশই সহীহ নয়।
মূল বিষয় হলো, নির্দিষ্ট কোনো প্রকার বা সংখ্যার নামাজের ওপর নির্ভর না করে, একজন মুসলিমকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুল হওয়ার যোগ্য হতে হবে। আর তা সম্ভব হয় আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকা এবং পাপ কাজ বর্জন করার মাধ্যমে।
আরও পড়ুনসালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম১১ আগস্ট ২০২৫প্রয়োজন পূরণের দুটি প্রধান মাধ্যমশায়খ আতিয়্যাহ সকর (রহ.) বলেছেন, বিশেষত জাগতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য দুটি মাধ্যম রয়েছে:
১. আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্ম: আল্লাহর আদেশ পালন এবং তাঁর নিষেধগুলো বর্জন করাই হলো তাকওয়া (আল্লাহভীতি)। এই তাকওয়াই নিজে নিজেই কল্যাণের চাবিকাঠি। আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেন। আর তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” (সুরা ত্বালাক, আয়াত: ২-৩)
“যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ তাদের ওপর উন্মুক্ত করে দিতাম।” (সুরা আরাফ, আয়াত: ৯৬)
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের কষ্ট দূর করে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সহজ করে দেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দার সাহায্যে থাকেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)
হাদিসে বর্ণিত গুহার সেই তিন ব্যক্তির ঘটনা এর উত্তম দৃষ্টান্ত, যারা নিজেদের সৎকাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া করে পর্বত-শিলার মুখ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
২. দোয়ার শর্ত ও আদব: দোয়ার দ্বিতীয় মাধ্যম হলো— দোয়ার সকল শর্ত ও আদব পালন করা, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একাগ্রতা (খুশু), আন্তরিকতা (ইখলাস) এবং হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ বলেছেন, “আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের জন্য তা কবুল করব।” (সুরা গাফির, আয়াত: ৬০)
“আর যখন আমার বান্দারা আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন (তাদের বলুন যে) আমি তো নিকটেই। যখন কোনো আহবানকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার আহবানে সাড়া দিই।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
দোয়া অবশ্যই বিনয় ও মনোযোগ সহকারে করতে হবে, কারণ নামাজ ও দোয়ার ফলাফল এর সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহ পূর্ববর্তী নবীগণ—আইয়ুব, যুন নুন এবং জাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া কবুলের পর বলেন, “নিশ্চয় তারা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করত। আর তারা আশা ও ভয়ের সাথে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী (খাশেঈন)।” (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)
দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারও দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭১৪৫; আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৮৪; তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭৩)
তা ছাড়া এটি নিশ্চিত যে, হারাম উপার্জনের এক লোকমা পেটে থাকলে দোয়া কবুল হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
আরও পড়ুননামাজ যেভাবে শারীরিক–মানসিক সুস্থতা বাড়ায়১৪ আগস্ট ২০২৫নির্দিষ্ট দোয়াএকটি নির্দিষ্ট দোয়ার কথা হাদিসে এসেছে। একজন অন্ধ ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন। তখন নবীজি (সা.) তাকে উত্তমরূপে ওযু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ার পর এই দোয়াটি পড়তে শিখিয়েছিলেন:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রাহমাতি। ইয়া মুহাম্মাদু ইন্নি ক্বাদ তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রব্বী ফী হা-জাতী হা-যিহী লিতুক্বদা-লী। আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিইয়্যা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকে মনোনিবেশ করি আপনার নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে, যিনি দয়ার নবী। হে মুহাম্মাদ, আমি আমার এই প্রয়োজনের জন্য আপনার মাধ্যমে আমার রবের দিকে মনোনিবেশ করেছি, যেন তা পূর্ণ হয়। হে আল্লাহ, আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবুল করুন।”
ওই ব্যক্তি ফিরে এসে দেখেন, আল্লাহ তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই হাদিসটি ইমাম তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ প্রমুখ বর্ণনা করেছেন এবং ‘সহিহ’ বলেছেন।। উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) এই দোয়াটি উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর কাছে প্রয়োজন থাকা এক ব্যক্তিকে শিখিয়েছিলেন এবং সেই ব্যক্তিরও প্রয়োজন পূর্ণ হয়েছিল।
দুই রাকাত নামাজের পর, আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠের পর আরও একটি দোয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়:
উচ্চারণ: লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল হা'লীমুল কারীম। সুবহা'-নাল্লা-হি রব্বিল ‘আ'রশিল ‘আ'যীম। আ'লহা'মদু লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীন। আস্আলুকা মূজিবা-তি রহ'মাতিক, ওয়া ‘আ'যা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গনীমাতা মিন কুল্লি বিররিন, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন। লা- তাদা' লী যাম্বান ইল্লা- গফারতাহু, ওয়ালা- হাম্মান ইল্লা- ফাররাজতাহু, ওয়ালা- হা-জাতান হিয়া লাকা রিদ্বা-ন ইল্লা- ক্বদ্বাইতাহা- ইয়া আরহা'মার র-হি'মীন।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি সহনশীল ও মহান। পবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান আরশের রব। সকল প্রশংসা জগতসমূহের রব আল্লাহর জন্য। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার রহমতের কারণগুলো, আপনার ক্ষমার দৃঢ় সংকল্পগুলো, সকল প্রকার নেক আমলের লাভ এবং সকল পাপ থেকে মুক্তি। আপনি আমার কোনো পাপ ক্ষমা না করে ছেড়ে দেবেন না, কোনো দুশ্চিন্তা দূর না করে ছেড়ে দেবেন না, এবং আপনার সন্তুষ্টি হয় এমন কোনো প্রয়োজন পূরণ না করে ছেড়ে দেবেন না, হে দয়াবানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান।
যদিও এই দোয়াটি উত্তম, তবে এটিকে নবী (সা.)-এর সাথে নির্দিষ্টভাবে সম্পর্কিত করার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। অন্যান্য বিশুদ্ধ দোয়া হাদীসের কিতাবে পাওয়া যেতে পারে।
দোয়া কখন করবেনদোয়া সসিজদায় উত্তম। হাদিসে বর্ণিত আছে, “বান্দা তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় যখন সে সসিজদায় থাকে। অতএব তোমরা সেজদায় বেশি বেশি দোয়া করো।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৮২)
আরেকটি হাদিসে আছে, “রুকুতে তোমরা রবের মহিমা বর্ণনা করো এবং সিজদায় খুব দোয়া করো, তাহলে তোমাদের দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত হবে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৭৯)
একজন মুসলিমকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, সে তার রবের ইবাদত ও তাঁর কাছে চাওয়া-পাওয়ার কাজগুলো শরীয়তের অনুমোদিত পথেই করছে। আল্লাহকে কেবলমাত্র সেইভাবেই ডাকা উচিত, যা কোরআন ও সহিহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। আর এই প্রমাণিত পথেই অসংখ্য বরকত নিহিত আছে।
আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫