যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের সংঘাতে জড়াল পাকিস্তান-আফগানিস্তান
Published: 18th, October 2025 GMT
৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। শুক্রবার দেশ দুটির মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর, উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) তিনজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও একজন আফগান তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরো পড়ুন:
আফগান সীমান্তে ৩০ জনেরও বেশি ‘অনুপ্রবেশকারীকে’ হত্যার দাবি পাকিস্তানের
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই দোহায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার সকালে আফগান সীমান্তের কাছে এক হামলায় সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ১৩ জন আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার কথা জানা যায়।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার একটি সামরিক শিবিরে জঙ্গিরা বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি দিয়ে হামলা চালায়। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কার্যালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, সেনা সদস্যদের গুলিতে ৬ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল আরিয়ানা নিউজকে বলেন, “পাকিস্তান যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আক্রমণ থেকে বিরত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাবুল তাদের বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে।”
এর আগে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মাওয়াইয়া জানান, পাকিস্তান বারমাল এবং উরগুন জেলায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তিনি হতাহতের বিস্তারিত বিবরণ দেননি।
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ নাসিম সাদাত বলেন, হামলায় আট স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন, যারা একটি ম্যাচ খেলে উরগুন জেলায় ফিরে যাচ্ছিলেন।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেউই বিমান হামলার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নতুন বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন যে, যুদ্ধবিরতি আফগান তালেবানদের সঙ্গে করা হয়েছে, আফগানিস্তানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে নয়, যারা পাকিস্তানে আক্রমণ চালায়।
বুধবার দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে কয়েক দিনের ভয়াবহ লড়াইয়ের অবসান হয়, যেখানে কয়েক ডজন মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হোন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দোহায় যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
একসময়ের মিত্র ইসলামাবাদ ও কাবুল গত সপ্তাহে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষে জড়ায়। শুক্রবার ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তান তাদের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে বিমান হামলা চালায়।
২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিদায়ের পর কাবুলে ক্ষমতায় ফিরে আসা আফগান তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জঙ্গি সহিংসতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা।
ইসলামাবাদ কাবুলকে পাকিস্তানে হামলা জোরদারকারী জঙ্গিদের লাগাম টেনে ধরার দাবি করার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হয়, কারণ ইসলামাবাদ দাবি করে যে, তারা আফগানিস্তানের আশ্রয়ে থেকে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেন, ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে ধৈর্য হারিয়ে পাকিস্তান ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছে, তবে সংঘাত নিরসনের জন্য আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
তালেবান পাকিস্তানে হামলার জন্য জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার, সীমান্ত উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়ালেও, সাম্প্রতিক সংঘাত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। এটি সৌদি আরব এবং কাতারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যারা মধ্যস্থতা করছে ও লড়াই বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই সংঘাত নিরসনে সহায়তা করতে পারেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন র শ ক রব র
এছাড়াও পড়ুন:
মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের কর্মবিরতি, রোগী ভোগান্তি চরমে
চার বছর ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে বসবাস করছেন সিরাজগঞ্জের আব্দুল কাদের (৩০)। স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করা এই শ্রমিক রবিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে তার অসুস্থ মা জরিনা বেগমকে রক্ত দিতে নিয়ে যান কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাদের সঙ্গে ছিলেন রক্তদাতা।
কাদের জানান, পরিকল্পনা ছিল, মাকে রক্ত দেওয়া শেষে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে রাতে কারখানার কাজে যোগ দেবেন। সকাল ৯টার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখেন, দরজায় তালা ঝুলছে। সেখানে কর্মরতদের সবাই তখন বাইরে কর্মবিরতি পালন করেছেন। নিরুপায় হয়ে মাকে নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগ
বিয়ে বাড়ির খাবার খেয়ে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ১৭
শুধু কাদের একাই নন, কর্মবিরতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে আসা আরো অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। ‘মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে এই কর্মবিরতি পালিত হয়।
কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ উপজেলা শাখার সমন্বয়কারী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রবিবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছি। দাবি মানা না হলে, আগামী ৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপরও সমাধান না এলে ৪ ডিসেম্বর পূর্ণ কর্মদিবস ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর মাধ্যমে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
তিনি জানান, কর্মসূচি চলাকালে জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও অন্যান্য বিভাগে সেবা কার্যক্রম সীমিত রাখা হয়েছিল। তিনি দ্রুত দাবি মেনে নিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে দুর্ভোগের কথা জানান মামুন মিয়া। তিনি বলেন, “শরীরের প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে সকাল ৯টায় হাসপাতালে আসি। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও ওষুধ নিতে ফার্মেসির সামনে সাড়ে ৯টা থেকে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। ফার্মেসির কর্মীরা সবাই আন্দোলনে থাকায় ওষুধ না নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার ২২১ নম্বর কক্ষের সামনে ডিজিটাল এক্সরে করাতে বহু রোগী ও স্বজনের জটলা দেখা যায়। রুমের দরজাও তালাবদ্ধ। দীর্ঘ অপেক্ষা আর হতাশায় ক্ষুব্ধ হয়ে একজন রোগী জানান, কয়েকদিন পরপর আন্দোলন! শেষ ভোগান্তি তো পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত বৈষম্য নিরসন ও ন্যায্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন জানানো হলেও কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনের পথে নেমেছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানা রশীদ বলেন, “মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। তাদের আন্দোলনের কারণে কিছুটা সেবা বিঘ্নিত হলেও জরুরি সেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং সবাইকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/রফিক/মাসুদ