বড় কিংবা ছোট—কোনো মানুষেরই এক কাঁধে ব্যাকপ্যাক বহন করা উচিত নয়। এক কাঁধে ব্যাগপ্যাক বহন করলে মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শিক্ষার্থীরা বইভর্তি ব্যাগপ্যাক এক কাঁধে বহন করলে মেরুদণ্ডের গ্রোথ প্লেট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ শিশুদের হাড় নরম, তাদের পেশি ও লিগামেন্ট দুর্বল এবং খুবই সংবেদনশীল। প্রতিদিন এক কাঁধে ব্যাগপ্যাক বহন দীর্ঘ মেয়াদে তাদের মেরুদণ্ড ও ভঙ্গির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। 

আরো পড়ুন:

হাঁটার সময় না পেলে যে ব্যায়াম করতে পারেন

ভাইকিং গোষ্ঠীপতির মৃতদেহ সৎকারের নৃশংস প্রথা

এক কাঁধে ব্যাগপ্যাক বহন করার জন্য শিশুর হাঁটার ভঙ্গিতে পরিবর্তন হতে পারে বা অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে শিশু হাঁটতে পারে। 

বড়দের ক্ষেত্রে এক কাঁধে ব্যাগ প্যাক বহন করার ফলে আর্থ্রাইটিস দেখা দিতে পারে। মেরুদণ্ডে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে কাঁধের পেশিতে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া কাঁধের ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। এমনকি মেরুদণ্ড একটি নির্দিষ্ট দিকে বেঁকে যেতে পারে। তার ফলে ঘাড়ের পেশি শক্ত হয়ে গিয়ে ব্যথা শুরু হতে পারে।

কী কী খেয়াল রাখা উচিত

১)  কীভাবে ব্যাগপ্যাক বহন করবেন, আয়নায় দাঁড়িয়ে ভঙ্গি অনুশীলন করুন। সব সময়ে পিঠে হালকা ওজনের ব্যাকপ্যাক নিন।

২) অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগপ্যাকে বহন করবেন না। এবং কোনো ভাবেই ব্যাকপ্যাক এক কাঁধে বহন করবেন না।

৩) ব্যাকপ্যাকের  দুইটি হাতলের ভেতরে যেন নরম প্যাডিং থাকে তা দেখে নেওয়া উচিত।

৪) ব্যাগে যদি একাধিক ভাগ থাকে, তা হলে ওজনের সমবণ্টন করতে হবে।

৫) ব্যাকপ্যাকের আকার যেন কোনোভাবেই পিঠের আকৃতিকে ছাড়িয়ে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে।

উল্লেখ্য, ব্যাগপ্যাক বহন করার ফলে পেশিতে টান লাগলে স্ট্রেচিং করতে হবে। প্রয়োজনে প্লান্ক, ব্রিজিং এক্সারসাইজ, ওয়াল এনজেল, শোলআডর রিট্রাকশন এক্সারসাইজ প্রভৃতি ব্যায়াম করতে হবে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’

১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে। 

দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?

২.

২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্‌গ্রীব।

আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।

দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।

বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।

দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি

সম্পর্কিত নিবন্ধ