কিলোফ্লাইটের ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদের মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে দান
Published: 17th, October 2025 GMT
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পরও নিজের দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে দান করে গেলেন। জীবিত থাকাকালেই তিনি মৃত্যুর পর দেহদানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে ক্যাপ্টেন (অব.
অধ্যক্ষ দিলরুবা জেবা বলেন, সমাজের মহৎ ব্যক্তিরাই মরণোত্তর দেহ দান করে যান। সাহাবউদ্দিন আহমেদ তাঁদেরই একজন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁর জন্য বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মৃত্যুর পরও তিনি এই দেহদানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতি আরেকটি মহান ব্রত পালন করে গেলেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অপারেশন কিলোফ্লাইটের অন্যতম বৈমানিক ছিলেন ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ঢাকার গুলশানের নিজ বাসায় তিনি বার্ধক্যের কারণে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাতে মরদেহ দানের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে আনা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মরহুমের স্ত্রী রোকেয়া নার্গিস, ছেলে তাপস আহমেদ, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকীসহ স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা।
সাহাবউদ্দিন আহমেদ ফরিদপুর পৌরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের চরকমলাপুর মহল্লার মৃত গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও লাইলী রশিদ দম্পতির ছেলে। তিনি স্ত্রী রোকেয়া নার্গিস, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাহাবউদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ) বৈমানিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর তিনি স্থলযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। হবিগঞ্জের শাহজিবাজারের টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্র বিস্ফোরণের অপারেশনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বেসামরিক পাইলট হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি।
অপারেশন কিলোফ্লাইটের মোট ৮৫টি অপারেশনের মধ্যে ১২টি অপারেশনে ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম হামলায় অংশ নেন ৬ ডিসেম্বর। এদিন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার নিয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, শেরপুর ও সাদিপুরের দুটি ফেরিঘাটে থাকা পাকিস্তানি অবস্থান ধ্বংস করেন।
আরও পড়ুনঅপারেশন কিলোফ্লাইটের ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম আর নেই১৬ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ল ফ ল ইট র র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ যাচ্ছে না, জুলাই সনদে যা যা আছে
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) চারটি বামপন্থী দলের আপত্তির পর জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫ এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না।
প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সনদের অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি–সংক্রান্ত ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আজকের সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না আসার ঘোষণা দেন সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। সনদে কেন স্বাক্ষর করবেন, তার যে কারণগুলো তাঁরা বলেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশের বিষয়টি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।
এরপর জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না।
সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল যুক্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চম তফসিলে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ষষ্ঠ তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সপ্তম তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে থাকবে।
আরও পড়ুনস্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না সিপিবিসহ চার দল১৬ অক্টোবর ২০২৫আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষর করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। সংস্কারের লক্ষ্যে দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রণীত এই জুলাই জাতীয় সনদ হুবুহু নিচে তুলে ধরা হলো—
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষরের পর সনদের কপি তুলে ধরেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়