৬ গোলের ম্যাচে স্ত্রাসবুর্গের সঙ্গে পিএসজির ড্র
Published: 18th, October 2025 GMT
ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের ম্যাচে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতের ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়াল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ও স্ত্রাসবুর্গ। তিনবার পিছিয়ে থেকেও ৩-৩ গোলের দারুণ এক ড্র করে শীর্ষস্থান ধরে রাখল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
প্যারিসে শেষ ৩৪ ম্যাচে জয়হীন স্ত্রাসবুর্গ ইতিহাস গড়ার আশা নিয়েই নামছিল মাঠে। কিন্তু শুরুটা হয়েছিল তাদের জন্য হতাশার। ম্যাচের মাত্র ষষ্ঠ মিনিটেই ব্র্যাডলি বারকোলা দারুণ এক ওয়ান-টু পাসের পর জালে বল জড়ান, পিএসজিকে এনে দেন দ্রুত লিড।
আরো পড়ুন:
ভারত ম্যাচের আগে ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের গর্বিত স্পন্সর টেক জায়ান্ট
তবে নাটকীয়তা তখনও বাকি ছিল। বারকোলার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলেছিলেন দেজিরে দুয়ে, যিনি ফিরেছিলেন ইনজুরি কাটিয়ে। অন্যদিকে তার বড় ভাই গ্যেলা দুয়ে খেলছিলেন প্রতিপক্ষ স্ত্রাসবুর্গের হয়ে। দুই ভাইয়ের এই দ্বন্দ্বই ম্যাচের গল্পে বারবার জায়গা করে নেয়।
প্রথমে গ্যেলা দুয়ের ক্রস থেকেই চমৎকার হেডে গোল করে সমতায় ফেরান হোয়াকিন পানিচেল্লি। এরপর বিরতির চার মিনিট আগে ছোট ভাই দেজিরে দুয়ের একটি ভুল পাস পিএসজির বিপদ ডেকে আনে। তার পাস কেটে নিয়ে ভ্যালেন্টিন বারকো বল বাড়ান দিয়েগো মোরেইরার কাছে, যিনি নিখুঁত লবে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। তাতে ২-১ করে এগিয়ে যায় স্ত্রাসবুর্গ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরও একবার আঘাত হানে অতিথিরা। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে পানিচেল্লি আবার গোল করেন, এবার মোরেইরার ক্রস থেকে। শারীরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকা এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড টানা দুই ম্যাচে জোড়া গোলসহ শেষ আট ম্যাচে করেছেন সাতটি গোল।
৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও হাল ছাড়েনি পিএসজি। ঘণ্টা পার হতেই ম্যাচে ফেরার আশা দেখেন তারা। যখন দেজিরে দুয়ে পেনাল্টি এরিয়ায় পড়ে যান গোলরক্ষক মাইক পেন্ডার্সের ধাক্কায়। স্পট কিক থেকে নির্ভুল শটে গোল করেন গনসালো রামোস ৩-২।
শেষ মুহূর্তের তীব্র চাপে অবশেষে সমতায় ফেরে প্যারিসের দল। ম্যাচের ৮১ মিনিটে সেনি মাইউলুর শট পেন্ডার্স ঠেকালেও ফিরে আসা বলটি মাথা দিয়ে জালে পাঠান এই ১৯ বছর বয়সী তরুণ ৩-৩।
রোমাঞ্চে ভরা এই ড্রয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ ওয়ানের শীর্ষেই রইল পিএসজি। এক পয়েন্ট পেছনে দ্বিতীয় স্থানে স্ত্রাসবুর্গ।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল প এসজ স ত র সব র গ প এসজ
এছাড়াও পড়ুন:
তালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’
১০ অক্টোবর। শরতের বাতাসে দিল্লির পাতা ঝরছে। ভারতের মাটিতে পা রাখলেন কাবুলের প্রভাবশালী নেতা মৌলভি আমির খান মুত্তাকি, যিনি আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতে তাঁর ছয় দিনের সফর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির নতুন মানচিত্র আঁকছে।
দিল্লিতে নেমে মুক্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বসলেন নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হলো, কাবুলে ভারত আবার দূতাবাস খুলবে, যা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বন্ধ। এরপর ১১ অক্টোবর মুত্তাকি গেলেন সাহারানপুরের দারুল উলুম দেওবন্দে; যা ইসলামিক ইমারতের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতার প্রথম এই ভারতীয় মাদ্রাসা পরিদর্শন।
ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কীভাবে কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের একজন মন্ত্রীকে গ্রহণ করল—এ রকম প্রশ্ন নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে নিশ্চয়ই। কাবুলের সঙ্গে দিল্লি এমন এক সময়ে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যখন পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে, সীমান্তে রক্তাক্ত সংঘর্ষ চলছে। তাহলে দেওবন্দ পরিদর্শন কি শুধু প্রতীকী, নাকি এর মধ্যে কোনো গভীর রাজনৈতিক ইঙ্গিতও রয়েছে?
২.২০২১ সালের আগস্ট তো বেশি দূরের সময় নয়। মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে ভারত। চার বছর ‘সম্পর্কহীন’ থাকার পর তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার দিল্লিতে এসে বললেন, অমৃতসর-কাবুল ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। চার দশকের যুদ্ধে ক্লান্ত আফগানিস্তানের মানুষ উন্নয়নের জন্য উদ্গ্রীব।
আফগানিস্তানের আগের সরকারের সময় ভারত সেখানে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সালমা ড্যাম, জারঞ্জ-দেলারাম হাইওয়ে ও পার্লামেন্ট ভবনের মতো প্রকল্পে। এবার মুত্তাকি এসে আফগানিস্তানের খনিজ ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এটা ‘তালেবান ২.০’-এর ইঙ্গিত। আসলেই কি তাই, নাকি এটা ‘শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু’ কৌশলের খেলা? ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান, যারা এখন আফগানিস্তানের ইসলামিক ইমারতের শত্রু।
■ দেওবন্দের যে চিন্তাধারা তালেবানকে প্রভাবিত করেছে, সেটি এসেছে পাকিস্তানের ‘ছাঁকনি’ দিয়ে। ■ প্রথমবারের মতো দেওবন্দ মাদ্রাসার সঙ্গে এবং দেওবন্দি ভারতীয় রাজনীতিকদের সঙ্গে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক রচিত হলো পাকিস্তানের ছায়ার বাইরে গিয়ে।বোঝার জন্য বলি, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয়। ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বটে; কিন্তু নানা যৌক্তিক কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত ছাড়া আমাদের আবার চলেও না। চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ এমনকি ঈদের বাজার করতে ভারতেই ভরসা ছিল এতকাল; এমনকি বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদেরও ‘শেষ আশ্রয়স্থল’ ভারত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের যদিও আগ্রাসী ভারতের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রয়েছে, কিন্তু দেওবন্দ মাদ্রাসার কারণে ভারতের আলেম-ওলামার সঙ্গে তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগও রয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশে বড় কোনো ইসলামি সম্মেলন মানেই ভারতের কোনো আলেমের আগমন।
দিল্লি সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি