দুর্গাপূজায় প্রতিকূলতার আশঙ্কা ছিল, সবার সহযোগিতায় সেটা ঠেকানো গেছে: বিজন কান্তি সরকার
Published: 17th, October 2025 GMT
এবারের দুর্গাপূজায় নানা ধরনের প্রতিকূলতার আশঙ্কা তৈরি হলেও সরকার, রাজনৈতিক দল ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কারণে সেটা ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বিজন কান্তি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। দেশের এ বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সরকার, রাজনৈতিক দল ও পুলিশ, প্রশাসনের ভূমিকায় সে আশঙ্কা ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে।
সরকারের কর্মকাণ্ডে হিন্দুদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে অভিযোগ করে বিজন কান্তি সরকার বলেন, যখন যে সরকার আসবে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। ভোটেও ভূমিকা থাকতে হবে। বারবার গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। গণতন্ত্র না এলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কেউ ভালো থাকতে পারবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশিষ পাল বলেন, কিছু অসুর শান্তির পরিবেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়। তখন মা দুর্গার আগমন ঘটে অসুরকে বিনাশ করার জন্য।
সত্য ও ন্যায় সেটা যে–ই বলুক, তার পক্ষে থাকা ধর্মের শিক্ষা বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান আবু সায়েম। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দেশে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষ যদি নিরাপদ থাকে, সেটাই সুন্দর সমাজ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান শান্টু বড়ুয়া বলেন, ‘দেবীদুর্গার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল দুর্গতি নাশ করতে। সমাজে প্রতিনিয়ত হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ, দুর্গতির কোনো শেষ নেই। দেবীদুর্গার শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি দশ হাত একত্র করে যেকোনো দুর্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি, তাহলে এ দুর্গতি নাশ করা সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডি রোজারিও বলেন, এ বছর দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সমাজের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন হিসেবে কাজ করে যেতে পারে সর্বজনীন এ পূজা।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা হাজি সেলিম আহমদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর ৫১ থানা থেকে পূজা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাদ্যযন্ত্রশিল্পীদের নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল সোয়া চারটার দিকে। এরপর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত মিলন চক্রবর্তী পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করে শোনান। পরে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী। অনুষ্ঠান শেষে এবারের পূজামণ্ডপের সাজসজ্জা, প্রতিমা ও প্রকাশনায় যারা শ্রেষ্ঠ হয়েছে, তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রতিমা, সাজসজ্জা ও প্রকাশনায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জন ক ন ত অন ষ ঠ ন দ র গত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০ লাখ ভোটকর্মীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে একটি প্রস্তাব
লেখাটি ছোট। প্রস্তাবও সহজ। কিন্তু ব্যাপ্তি অনেক। এ দাবি মানা উচিত, মানতে হবে! বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের বেশির ভাগই ভোট দিতে পারেন না। এটি গণতন্ত্রের এক চাক্ষুষ বৈষম্য। এ বৈষম্য রোধ করতে রাষ্ট্রকে সহজ পথ খুঁজে বের করতে হবে।
সামনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটু পেছনে ফিরলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন দেশে ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল। ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ৪২ হাজার ১৪৯ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন।
একটি কেন্দ্রে একাধিক বুথ বা ভোটকক্ষ থাকে। দ্বাদশ নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। প্রতিটি ভোটকক্ষের দায়িত্বে থাকেন একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। সুতরাং সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাও ছিল ২ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। প্রতি কক্ষে দুজন করে পোলিং এজেন্ট ছিলেন, সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এ হিসাবে দ্বাদশ নির্বাচনে শুধু ব্যালটের সঙ্গে যুক্ত ভোটকর্মীই ছিলেন ৮ লাখের বেশি। আসন্ন নির্বাচনেও এ সংখ্যা প্রায় এমনই থাকবে।
এর বাইরে সাধারণত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার মিলে নিরাপত্তাকর্মী থাকেন প্রায় ১৬ জন। এ হিসাবে মোট ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা সাত লাখের মতো। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে এ সংখ্যা আরও বেশি হয়। এ ছাড়া রিজার্ভ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা রয়েছেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন স্তরে ২০ লাখের মতো মানুষ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
নিজ শহর ছেড়ে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করা গণমাধ্যমকর্মীদের সংখ্যা অনেক। হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, থানাসহ জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অনেক। ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও এ মানুষদের অনেকের পক্ষেই ভোট দেওয়া সম্ভব হয় না। অথচ এ মানুষগুলো গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ অংশীদার। এ মানুষগুলো তাঁদের কর্মের কারণে দেশের ভালো–মন্দের বিষয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন। সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্ট সাধারণত শিক্ষকদের মধ্য থেকে হয়ে থাকেন। এ মানুষগুলো রাষ্ট্রের নাগরিক গড়ার মূল কারিগর। অথচ তাঁরা নির্বাচনে তাঁদের রায় দিতে পারেন না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এ ভোটকর্মীদের জন্য পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু তা অত্যন্ত জটিল। নির্বাচনী প্রজ্ঞাপন জারির ১৫ দিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর সংশ্লিষ্ট ভোটারকে আবেদন করতে হয়। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই ভোটারের ঠিকানা বরাবর ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠাবেন। সেটি আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করে আরেকজন ব্যক্তির দ্বারা সত্যায়ন করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে হবে। এই পদ্ধতি পড়তে গেলেই মাথা ঝিম করে ওঠে। এ ঝক্কি পেরিয়ে কয়জনের পক্ষে এ পোস্টাল ভোট দেওয়া সম্ভব?
কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন—এমন ১০ জন শিক্ষককের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তাঁদের কেউই তাঁদের পোস্টাল ভোটিং সম্পর্কে অবগত নন। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সাতজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা জানালেন, ভোটকর্মীদের পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়টি মোটাদাগে নির্বাচনী নথি ও আরপিওর ভেতরই সীমাবদ্ধ, জনপরিসরে চর্চিত নয়।
সহজ প্রস্তাবরিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আনসার পর্যন্ত সব ধরনের ভোটকর্মীর ভোটাধিকার সহজ করা হোক। এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হলো, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্ক্যান করে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া। এর জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য টেমপ্লেট ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কারণ, জাতীয় পরিচয়পত্রের কল্যাণে ব্যক্তির আঙুলের ছাপ তাঁদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, স্মার্ট কার্ডধারীদের আইরিশও আছে। আর এই ডিভাইসগুলোও পর্যাপ্ত আছে বলে মনে করি। এনআইডি স্ক্যানের পর ক্রস চেকের জন্য শুধু আঙুলের ছাপ নিতে চাইলে সিম বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনের দিনের জন্য কিছু বায়োমেট্রিক মেশিনও ধার নিতে পারে কমিশন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একটি মেশিন সেটআপের বেশি প্রয়োজন হবে না।
মনে রাখতে হবে, এই যে কমবেশি ২০ লাখ ভোটকর্মীর ধারণা দেওয়া হলো, তাঁরা সবাই কিন্তু রাষ্ট্রে সচেতন শ্রেণির নাগরিক, শিক্ষিত শ্রেণির নাগরিক। তাঁদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাই এই মানুষগুলোর নির্বাচনী রায় অনেকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। তাঁরা একজন প্রার্থীকে বা একটি দলকে অনেক কিছুর ওপর ভিত্তি করে রায় দেবেন। তাঁদের পাশাপাশি পুলিশ স্টেশন, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা-পরিষেবামূলক খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও এনআইডি স্ক্যান করে কর্মস্থলের পাশের কোনো কেন্দ্রে ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এটা একটি নাগরিক অধিকার বলে মনে করি।
মো. ছানাউল্লাহ প্রথম আলোর সহসম্পাদক
*মতামত লেখকের নিজস্ব