এবারের দুর্গাপূজায় নানা ধরনের প্রতিকূলতার আশঙ্কা তৈরি হলেও সরকার, রাজনৈতিক দল ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কারণে সেটা ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বিজন কান্তি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রতিকূলতা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল। দেশের এ বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সরকার, রাজনৈতিক দল ও পুলিশ, প্রশাসনের ভূমিকায় সে আশঙ্কা ঠেকিয়ে দেওয়া গেছে।

সরকারের কর্মকাণ্ডে হিন্দুদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে অভিযোগ করে বিজন কান্তি সরকার বলেন, যখন যে সরকার আসবে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। ভোটেও ভূমিকা থাকতে হবে। বারবার গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। গণতন্ত্র না এলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কেউ ভালো থাকতে পারবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ দেবাশিষ পাল বলেন, কিছু অসুর শান্তির পরিবেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়। তখন মা দুর্গার আগমন ঘটে অসুরকে বিনাশ করার জন্য।

সত্য ও ন্যায় সেটা যে–ই বলুক, তার পক্ষে থাকা ধর্মের শিক্ষা বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান আবু সায়েম। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দেশে সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষ যদি নিরাপদ থাকে, সেটাই সুন্দর সমাজ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান শান্টু বড়ুয়া বলেন, ‘দেবীদুর্গার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল দুর্গতি নাশ করতে। সমাজে প্রতিনিয়ত হানাহানি, হিংসা, বিদ্বেষ, দুর্গতির কোনো শেষ নেই। দেবীদুর্গার শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি দশ হাত একত্র করে যেকোনো দুর্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি, তাহলে এ দুর্গতি নাশ করা সম্ভব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডি রোজারিও বলেন, এ বছর দুর্গাপূজা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সমাজের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন হিসেবে কাজ করে যেতে পারে সর্বজনীন এ পূজা।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা হাজি সেলিম আহমদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর ৫১ থানা থেকে পূজা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাদ্যযন্ত্রশিল্পীদের নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল সোয়া চারটার দিকে। এরপর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিত মিলন চক্রবর্তী পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করে শোনান। পরে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী। অনুষ্ঠান শেষে এবারের পূজামণ্ডপের সাজসজ্জা, প্রতিমা ও প্রকাশনায় যারা শ্রেষ্ঠ হয়েছে, তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রতিমা, সাজসজ্জা ও প্রকাশনায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জন ক ন ত অন ষ ঠ ন দ র গত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: আলী রীয়াজ

একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সেই অভীষ্ট জায়গা গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রত্যাশা জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে, যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি। সেটি হচ্ছে, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত, আমরা সকলে এক জায়গায় যে আমরা যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব।’

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন অধ্যাপক আলী-রীয়াজ। যিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হিসেবে আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব এবং অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি হচ্ছে আমাদের দীর্ঘ পথের যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের যে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা তা, ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে। এরপরও দেশের নাগরিকেরা গণতন্ত্র এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় আজকে এই জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছে।

এই জুলাই জাতীয় সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এটা নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ও রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সবার যে চেষ্টা, তা এক দিনে সাফল্য অর্জন করবে না এবং একটি দলিল কেবল সেই নিশ্চয়তা দেবে না বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিক দিশা নির্দেশক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মত ও পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: আলী রীয়াজ
  • ‘নোট অব ডিসেন্টগুলো’ লিপিবদ্ধ হলে বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে: মির্জা ফখরুল
  • ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান দুদুর
  • আরবের অন্ধযুগ ও মহানবী স. এর আগমন
  • কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিলেন জেলা বিএনপির সম্পাদক মাজহারুল
  • ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে মারা গেলেন কেনিয়ার বিরোধী নেতা
  • মিত্রদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে হিসাব কষছে বিএনপি