সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি এলাকার ফুটপাত ও প্রধান সড়কের একাংশ হকারদের দখলে ছিল। প্রতিদিনই হাজারো হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন। এতে যানজট হতো, পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন না। অবশেষে প্রশাসনের তৎপরতায় ভোগান্তির অবসান হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের তৎপরতায় ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হকার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। সে সময় নগরের লালদিঘির পাড় এলাকায় হকারদের জন্য আগে থেকে নির্ধারিত স্থানটি আবার সংস্কারের পর ব্যবসার উপযোগী করে পুনর্বাসনের যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরপর হকারদের ফুটপাত ছেড়ে ওই নির্দিষ্ট স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে সেখানে চলে গেছেন। যাঁরা যাননি, তাঁদের উচ্ছেদে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটা থেকে অভিযান শুরু হয়। এ অবস্থায় কোনো হকারকেই ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতার কারণে কোনো হকার ফুটপাতে বসেননি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নগরের কিনব্রিজ, সুরমা পয়েন্ট, তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, মহাজনপট্টি ও চৌহাট্টা এলাকায় সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েক শ সদস্য গতকাল রোববার অভিযানে নামেন। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতা আছে। এখন থেকে যাঁরাই ফুটপাত দখল করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, গতকালের অভিযানসংশ্লিষ্ট স্থানগুলোয় হকার নেই। পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন। দোকানমালিকদেরও তাঁদের সামনের ফুটপাতের অংশ দখল করে পণ্য রাখতে বাধা দেয় পুলিশ। গতকালের মতো আজও যানজট ছিল সহনীয় পর্যায়ে। তবে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাও হকারমুক্ত করার দাবি জানান নগরের বাসিন্দারা।

গতকাল বিকেলে বন্দরবাজার এলাকার পথচারী মমতাজুর রহমান বলেন, এখন ফুটপাত ও সড়কের একাংশ হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট কমেছে। তবে আগে কালেক্টরেট মসজিদের সামনের সড়কের আশপাশের যে অংশে হকারেরা বসতেন, এখন তা দখলমুক্ত হওয়ায় সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। এটাও রোধ করতে হবে। তবেই ভোগান্তি পরিপূর্ণভাবে নিরসন হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, অন্তত আড়াই হাজার হকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো হকারকে ফুটপাত কিংবা রাস্তায় ব্যবসা করতে দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অস্থায়ী স্ট্যান্ডগুলোতে কতটি সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা একসঙ্গে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে, সেটা ট্রাফিক পুলিশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বেশি সড়কে থাকলেই সংশ্লিষ্ট চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.

সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরটা আমাদের সবার। এই শহর যদি সুশৃঙ্খল থাকে, তাহলে এর সুফল আমরা সবাই পাব। শহরের ফুটপাত দখল করা হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই কোনো ধরনের অজুহাত আর মানা হবে না। নগরের ফুটপাত ও রাস্তাঘাট এখন থেকে হকারমুক্ত থাকবে। এ জন্য প্রশাসনের জিরো টলারেন্স থাকবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র তৎপরত র ফ টপ ত গতক ল র ব যবস থ র ব যবস নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি আরবে নজরকাড়া ‘ব্লু হোলস’

লোহিত সাগরের চোখজুড়ানো নীলাভ পানি। পাখির চোখে এই সাগরের একাংশের তলদেশে দেখা পাওয়া যাবে সারি সারি খাদের। খাদগুলোর গাঢ় নীল পানি সাগরে যোগ করেছে অনন্য এক রূপ। রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্লু হোলস’ বা ‘নীল খাদ’।

এই ব্লু হোলসের অবস্থান সৌদি আরবে। দেশটির দক্ষিণ–পশ্চিমে পবিত্র মক্কা থেকে জাজান শহর পর্যন্ত সাগরের উপকূলজুড়ে রয়েছে খাদগুলো। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে একে সৌদি আরবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বলা হচ্ছে। তবে এই সৌন্দর্য এক–দুই দিনে নয়, গড়ে উঠেছে লাখ লাখ বছর ধরে।

ছোটখাটো কোনো ঘটনার জেরেও এই খাদগুলো সৃষ্টি হয়নি। সাগরের গভীরে পাথরে ধরা ফাটল, পানির সঙ্গে মিশে যাওয়া চুনাপাথর, ভূগর্ভস্থ টেকটোনিক প্লেটের স্থানবদল এবং সাগরের নিচের গুহাগুলো ধসে পড়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই খাদগুলো তৈরি হয়েছে। তাই তো এই খাদগুলোকে বলা হচ্ছে ভূতাত্ত্বিকদের জন্য অমূল্য তথ্যের ভান্ডার।

খাদগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ফিরে যেতে পারবেন সুদূর অতীতে। খাদের দেয়াল ও নিচে স্তরে স্তরে জমে থাকা পলিমাটি থেকে জানতে পারবেন প্রাচীনকালের জলবায়ুর ধরন সম্পর্কে। বুঝতে পারবেন, কীভাবে বদল এসেছে সমুদ্রপৃষ্ঠে। গবেষণার সুযোগ রয়েছে, লোহিত সাগরের অববাহিকা কীভাবে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে, তা নিয়েও।

মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ ও চীনেও সাগরের অগভীর তলদেশে এমন খাদ দেখা যায়। সৌদি আরবের প্রতিবেশী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতেও তুলনামূলক ছোট আকারের এই খাদ রয়েছে। এমন খাদগুলোয় ভিন্ন একধরনের বাস্তুসংস্থান সৃষ্টি হয়। এখানে ঠিকানা তৈরি করে নেয় কচ্ছপ, প্রবাল প্রাচীর ঘিরে বসবাস করে মাছ, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী—এমনকি অমেরুদণ্ডী প্রাণীও।

পরিবেশগত এসব কারণ এবং বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের কথা চিন্তা করে লোহিত সাগরের খাদগুলোকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। ১৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা এবং ২০টির বেশি দ্বীপ নিয়ে এই অঞ্চল এখন সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় সংরক্ষিত এলাকা। সংরক্ষণের এই উদ্যোগের সঙ্গে মিল রয়েছে দেশটির ‘ভিশন–২০৩০’–এর লক্ষ্যেও।

ভিশন–২০৩০–এর একটি লক্ষ্য হলো, সংরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকার আকার বাড়ানো আর এর মাধ্যমে দেশি–বিদেশি মানুষকে পর্যটনে আগ্রহী করে তোলা। লোহিত সাগরের নজরকাড়া খাদগুলোর মাধ্যমে সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। আর এই খাদগুলো সম্পর্কে যত নিত্যনতুন রহস্য সামনে আসবে, তখন পর্যটকদের আগ্রহ আরও বাড়বে, তা বলাই চলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ