‘আমি তোমাদেরই লোক’—এই পরিচয়ই চেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য কথাটা এভাবে বলেননি, কিন্তু সারা জীবন গণমানুষের পাশে থেকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ছিলেন আজন্ম নিবেদিতপ্রাণ সংগ্রামী। তাই কবির কথাটি ঘুরিয়ে তাঁকে স্মরণ করলেন অনুরাগীরা ‘আমাদেরই লোক’ বলে।

আজ শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে মোড়ক উন্মোচন হলো ‘আমাদেরই লোক’ নামে জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য স্মারকগ্রন্থের। রাজধানীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেন্দিয়ার জাহেদ মিলনায়তনে প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্য স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা বাংলা ধরিত্রী।

বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিক থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, অধিকার আন্দোলনকারী, পরিবেশবিদ, নারীনেত্রী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১৩২ জনের লেখা রয়েছে এই গ্রন্থে। তাঁরা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক ভূমিকার মূল্যায়ন, ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সাহিত্য–সংস্কৃতিতে তাঁর অবদানসহ বিভিন্ন বিষয় নানা কৌণিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তুলে এনেছেন প্রায় ৬০০ পাতার গ্রন্থটিতে। এর সঙ্গে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের বেশ কয়েকটি নির্বাচিত লেখা, পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকার ও তাঁর কর্মময় জীবনের আলোকচিত্রের সংযুক্তি গ্রন্থটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। এতে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের পক্ষে এই নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে জানতে সহায়ক হবে।

আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল আনন্দম শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের গাওয়া পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রিয় দুটি গান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ পরিবেশনা দিয়ে। এরপর তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদের প্রধান নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। পঙ্কজ ভট্টাচার্যের জীবনকে কেন্দ্র করে গত শতকের ষাট দশকের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, দেশের বাম আন্দোলন, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে সামাজিক–সাংস্কৃতিক কর্মোদ্যোগের বিবিধ বিষয় উঠে আসে বক্তাদের আলোচনা ও স্মৃতিচারণায়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় যাঁরা দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, নানাভাবে পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সাহচর্য লাভ করেছেন, তাঁদের বিপুল সমাগম ঘটেছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই পারস্পরিক সাক্ষাৎ হলো অনেক দিন পর। ফলে অনেকটা মিলনমেলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও তার পরের চা পান পর্বে। প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। আয়োজকেরা জানালেন, স্মরকগ্রন্থটি পঙ্কজ ভট্টচার্যের প্রথম মৃতুব্যার্ষিকী গত বছরের ২৩ এপ্রিল প্রকাশের পরিকল্পনা থাকলেও বিশেষ কারণে তা সম্ভব হয়নি (তিনি ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রয়াত হন)।

পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মরণে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ঢাকা, ১০ জানুয়ারি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর: রানে মুশফিক, উইকেটে সাকিব ও আরও যাঁরা সেরা

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্তি হলো আজ। ২০২০ সালের এই দিনে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক বাংলাদেশের। ২৫ বছরের পথযাত্রায় টেস্টে বাংলাদেশের পথচলা কেমন ছিল। আর সেই পথচলায় পরিসংখ্যানের আলোয় সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেনই বা কারা। গ্রাফিকস: মো. আসাদ আলীএকনজরে টেস্টে বাংলাদেশ

১৫৪ টেস্টে বাংলাদেশের জয় ২৩টি। এই ২৩ জয়ের তিনটি বাংলাদেশ পেয়েছে ইনিংস ব্যবধানে। সবচেয়ে বড় জয়টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

টেস্টে বাংলাদেশের ১১২ হারের ৪৭টিই ইনিংস ব্যবধানে। সবচেয়ে বড় জয়ের মতো সবচেয়ে বড় হারটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে কেউ চাইলেও বিরাট কোহলি হতে পারবে না ৫ ঘণ্টা আগে

টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসেই ৪০০ করেছিল বাংলাদেশ। তবে ৫০০–র দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০১২ সাল পর্যন্ত। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ৫০০ করে বাংলাদেশ। চার মাস পরেই ২০১৩ সালের মার্চে ৬০০–র দেখাও পেয়ে যায় বাংলাদেশ। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করে ৬৩৮ রান। টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিসং সেটিই। এরপর আরও ১০ বার ৫০০ ছুঁলেও আর ৬০০ ছোঁয়া হয়নি।

১০০ রানের নিচে অলআউট হতে কেমন লাগে সেই অভিজ্ঞতা প্রথম টেস্টেই হয়েছিল বাংলাদেশের। অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ৪০০ করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট ৯১ রানে। এরপর আরও ১২ বার টেস্টে ১০০ রানে নিচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এর একটিই ৫০ রানের কমে, ২০১৮ সালে অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৩।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলা সেই ১১ জন এখন কে কোথায়১০ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৯৮টি টেস্ট খেলেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। সবকিছু ঠিক থাকলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেই ১০০ টেস্টের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন সাবেক অধিনায়ক।

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার মতো টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টসও করেছেন মুশফিকুর রহিম। ৩৪ টেস্টে অধিনায়কত্ব করা মুশফিকের নেতৃত্বেই সবচেয়ে বেশি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ—৭টি।

আরও পড়ুন‘আমি দলেই ঢুকতে পারি কি না, এমন একটা অনিশ্চয়তা ছিল’ ৮ ঘণ্টা আগে

সবচেয়ে বেশি খেলার মুশফিকুর রহিমই টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। একমাত্র তাঁরই ৬ হাজার রান আছে। ৩৮.১২ গড়ে ৬৩২৮ রান করা মুশফিকের সেঞ্চুরি ১২টি, এর তিনটি আবার ডাবল সেঞ্চুরি।

সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডের মতো ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসও মুশফিকুর রহিমের। ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দেওয়া মুশফিক ২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেন রেকর্ড ২১৯ রানের ইনিংস।

টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটিতেও আছেন মুশফিকুর রহিম। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রান যোগ করেন মুশফিক।

টেস্টে বোলিংয়ে বাংলাদেশের এক নম্বর সাকিব আল হাসান। ৭১ টেস্টে ২৪৬ উইকেট তাঁর। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল আর ১০ উইকেট পেলেই ছাড়িয়ে যাবেন সাকিবকে। এ দুজনের বাইরে ২০০ উইকেট আছে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের।

টেস্টে ইনিংস–সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটা ২০১৪ সাল থেকেই তাইজুল ইসলামের। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসানের রেকর্ড ভেঙেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

টেস্টে এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো বোলার সর্বোচ্চ ১২ উইকেট পেয়েছেন তিনবার, দুবারই মেহেদী হাসান মিরাজ। সেরা ১১৭ রানে ১২ উইকেট, ২০১৮ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। টেস্টে আটবার বাংলাদেশের বোলাররা ম্যাচে ১০ বা এর বেশি উইকেট পেয়েছেন।

আরও পড়ুনটানা আট বলে ছক্কা মারলেন আকাশ কুমার, গড়লেন দ্রুততম ফিফটির বিশ্বরেকর্ড০৯ নভেম্বর ২০২৫

সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড জমেছে বেশ। ৪২ ক্যাচ নিয়ে সবার ওপরে মুমিনুল হক, ৪১ ক্যাচ নিয়েই এরপরই আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

উইকেটকিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল লিটন দাসের—১১৪টি। ৯৯টি ক্যাচ নেওয়ার লিটন স্টাম্পিং করেছেন ১৫টি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ