থানা থেকে যুবদল নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ বৈষম্যবিরোধীদের
Published: 11th, January 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে গ্রেপ্তার যুবদল নেতাকে থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজাসংলগ্ন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।
অবরোধে অংশ নেওয়া শ্রীনগর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম হাওলাদার বলেন, ‘আইন যেন সবার জন্য সমান হয়, সেটা কোনো ব্যক্তি বা নেতার জন্য যেন ভিন্ন না হয়। থানা থেকে যে আসামি পালিয়ে গিয়েছে তাঁকে ধরতে হবে। যাঁরা ওই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাঁদেরকে ধরতে হবে। যে বা যাঁরা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওপর থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ যেন কোনো নেতার সঙ্গে লিয়াজু না করে আমাদের সবাইকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’
আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীরা শ্রীনগর থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামি এবং যাঁরা আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁদেরকে দুই ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দেন।
অবরোধের কারণে মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে জরুরি সেবা ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেওয়া হয়। হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় এক ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরে আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিলে ছাত্ররা মহাসড়ক থেকে সরে যায়। পরে আবারও এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক।
থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই আসামির নাম তরিকুল ইসলাম। তিনি শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে থানার অফিসকক্ষ থেকে তরিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পুলিশ ও থানা সূত্রে জানা যায়, একটি মারামারির ঘটনায় গত ১৯ নভেম্বর শ্রীনগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তরিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানাহাজতে রাখে। সে সময় তরিকুলকে ছাড়িয়ে নিতে প্রথমে থানায় আসেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা তরিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন। পুলিশ রাজি না হলে হাফিজুল ইসলাম খান সন্ধ্যা সাতটার দিকে অন্য নেতা-কর্মীদের থানায় রেখে বেরিয়ে যান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী থানা প্রাঙ্গণে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁরা বাগ্বিতণ্ডা শুরু করেন। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে জোর করে ওসি ও সার্কেল এসপির সামনে থেকে আসামি তরিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।
মামলায় বিএনপির ৩১ জন
থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আজ বেলা দেড়টার দিকে শ্রীনগর থাকায় মামলা হয়েছে। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও ২০১ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করেন থানার উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মামলায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলামসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আরও ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় সঙ্গে যাঁরা জড়িত, সবাইকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ইয়াকিন’ কীভাবে অর্জন করা যায়
কোরআনে ইয়াকিনের গুরুত্ব
কোরআনে ইয়াকিনের বিশেষ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে:
সফলতার মানদণ্ড: আল্লাহ মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াকিনকে হেদায়েত ও সফলতার কারণ বলেছেন, ‘এরাই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর রয়েছে এবং এরাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৫)
চিন্তা ও নিদর্শনের ভিত্তি: আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের (ইয়াকিনকারীদের) জন্য রয়েছে নিদের্শনাবলি, ‘এবং পৃথিবীতে ইয়াকিনকারীদের জন্য নিদের্শনাবলি রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ২০)
নেতৃত্ব লাভের উপায়: আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলের নবী ও শাসকদের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘যখন তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল এবং আমাদের নিদের্শনাবলিতে দৃঢ়বিশ্বাস করত তখন আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা বানিয়েছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ দেখাত।’ (সুরা সাজদা, আয়াত: ২৪)
অবিশ্বাসের নিন্দা: যারা ইয়াকিন রাখে না, তাদের আল্লাহ নিন্দা করেছেন, ‘এবং যখন তাদের বলা হতো, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী—এতে কোনো সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলতে: কিয়ামত কী, তা আমরা জানি না; আমরা কেবল ধারণা করি, আমরা তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি না।’ (সুরা জাসিয়া, আয়াত: ৩২)
আরও পড়ুন‘ইয়াকিন’ অর্থ কী১৫ ঘণ্টা আগেহাদিসে ইয়াকিনের অবস্থাননবীজি (সা.) বহু হাদিসে ইয়াকিনের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন:
জান্নাতের সুসংবাদ: তিনি আবু হুরায়রাকে (রা.) বললেন, ‘তুমি তোমার এই দুটি জুতা নিয়ে যাও। এই দেয়ালের বাইরে যার সঙ্গে তোমার দেখা হবে এবং সে যদি তার হৃদয়ে দৃঢ়বিশ্বাস রেখে সাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩)
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ নিয়ামত: তিনি বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা (আফিয়াত) প্রার্থনা করো। কেননা ইয়াকিনের পর আর কাউকে আফিয়াত (সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তি) অপেক্ষা উত্তম কিছু দেওয়া হয়নি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৫৮)
ইয়াকিন অর্জনের উপায়গুলোইয়াকিন কোনো আশা বা অলসতার মাধ্যমে অর্জিত হয় না; বরং এটি আন্তরিক প্রচেষ্টা, ধৈর্য ও সুদৃঢ় ইমানি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।
১. জ্ঞান অর্জন
ইয়াকিনের প্রথম স্তর: ইয়াকিনের প্রথম সোপান হলো সহিহ জ্ঞান (ইলম) অর্জন করা। জ্ঞানই মানুষকে কর্মের দিকে চালিত করে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘স্মরণ ও জ্ঞান ইয়াকিনকে পূর্ণতা দান করে।’ (ইবনে তাইমিয়া, মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ২৩৫)
জ্ঞান মানুষকে আল্লাহ ও আখিরাতের পুরস্কার সম্পর্কে নিশ্চিত করে, ফলে সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর পথে অর্থ ও জীবন উৎসর্গ করে। ইয়াকিন অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞান হৃদয়ে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে তা বান্দাকে কাজ করার জন্য বাধ্য করে।
২. আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান
আল্লাহর ইয়াকিন অর্জনের জন্য আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলি (আসমা ওয়া সিফাত) সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা অপরিহার্য। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
আরও পড়ুনফরজে কিফায়া: একের পালন, সবার মুক্তি১০ জুলাই ২০২৫রবুবিয়্যাত: আল্লাহ সবকিছুর প্রতিপালক, পরিচালক ও রিজিকদাতা—এই জ্ঞানে হৃদয় স্থির হয়ে যায়। ফলে বান্দা তার রিজিক, হায়াত ও ভাগ্যের ব্যাপারে চিন্তামুক্ত থাকে এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকে।
উলুহিয়্যাত: আল্লাহই একমাত্র উপাস্য—এই জ্ঞানে হৃদয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দিকে ফিরে তাকায় না বা কারও সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে না।
আসমা ওয়া সিফাত: আল্লাহ পরাক্রমশালী, সর্বশক্তিমান ও সদা তত্ত্বাবধানকারী—এই জ্ঞানে বান্দা একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করে এবং হারাম থেকে বিরত থাকে।
৩. নফস ও সৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান
নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা এবং সৃষ্টির অধীনতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখলে বান্দা কখনো নিজের ওপর বা সৃষ্টির ওপর ভরসা করে না।
শফিক ইবনে ইবরাহিম বলখি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে নিজের জ্ঞান জানতে চায়, সে যেন দেখে, আল্লাহ তাকে যা ওয়াদা করেছেন আর মানুষ যা ওয়াদা করেছে, কার ওয়াদার ওপর তার হৃদয়ের ভরসা বেশি।’ (আবু নুয়ায়েম, হিলয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৬৪)
৪. অভ্যন্তরীণ জিহাদ
প্রবৃত্তি ও সন্দেহের মোকাবিলা: ইয়াকিন অর্জনের জন্য দুটি স্তরে শয়তানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত জিহাদ বা সংগ্রাম করতে হয়:
সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসার জিহাদ: ইয়াকিনকে দুর্বল করে দেয় এমন সব সন্দেহ ও কুচিন্তা (শুবহাত) থেকে নিজেকে দূরে রাখা। সন্দেহ সৃষ্টিকারী বই পড়া বা তাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানো থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্দ প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষার জিহাদ: ইবনে তাইমিয়ার মতে, ধৈর্য (সবর) ও ইয়াকিনের মাধ্যমেই দ্বীনের ইমামত লাভ করা যায়। ধৈর্য সব অবৈধ প্রবৃত্তি ও আকাঙ্ক্ষা (শাহওয়াত) দমন করে, আর ইয়াকিন সব সন্দেহ ও অস্পষ্টতা (শুবহাত) দূর করে। (মাজমুউল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৫৮)
৫. সৎকর্মে সুদৃঢ় সংকল্প
নেক আমল, যেমন তওবা, দান বা সাওম—এগুলো দৃঢ়সংকল্প নিয়ে করতে হবে, জাগতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব না করে। যে ব্যক্তি কেবল লাভের চিন্তা করে নেক আমল থেকে বিরত থাকে, সে ইয়াকিন অর্জনে ব্যর্থ হয়। মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
৬. প্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হওয়া
প্রবৃত্তি ও নফসের আকাঙ্ক্ষায় ডুবে থাকলে ইয়াকিন অর্জন করা অসম্ভব। ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘তাকওয়ার মূল হলো নিষিদ্ধ বিষয়াদি থেকে দূরে থাকা, আর এর মানে হলো নফস (প্রবৃত্তি) থেকে দূরে থাকা। প্রবৃত্তির সঙ্গ ছেড়ে দিলে ইয়াকিন অর্জিত হয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৩৯৯)
আরও পড়ুনইমান: শক্তি ও শান্তির রহস্য০২ অক্টোবর ২০২৫