মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে গ্রেপ্তার যুবদল নেতাকে থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অবরোধ করে প্রতিবাদ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ধলেশ্বরী টোল প্লাজাসংলগ্ন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।

অবরোধে অংশ নেওয়া শ্রীনগর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম হাওলাদার বলেন, ‘আইন যেন সবার জন্য সমান হয়, সেটা কোনো ব্যক্তি বা নেতার জন্য যেন ভিন্ন না হয়। থানা থেকে যে আসামি পালিয়ে গিয়েছে তাঁকে ধরতে হবে। যাঁরা ওই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তাঁদেরকে ধরতে হবে। যে বা যাঁরা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওপর থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ যেন কোনো নেতার সঙ্গে লিয়াজু না করে আমাদের সবাইকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’

আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীরা শ্রীনগর থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামি এবং যাঁরা আসামিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তাঁদেরকে দুই ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দেন।

অবরোধের কারণে মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে জরুরি সেবা ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দেওয়া হয়। হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাদের জিলানী জানান, এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় এক ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ ছিল। পরে আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দিলে ছাত্ররা মহাসড়ক থেকে সরে যায়। পরে আবারও এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল স্বাভাবিক।

থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ওই আসামির নাম তরিকুল ইসলাম। তিনি শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে থানার অফিসকক্ষ থেকে তরিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

পুলিশ ও থানা সূত্রে জানা যায়, একটি মারামারির ঘটনায় গত ১৯ নভেম্বর শ্রীনগর থানায় একটি মামলা হয়। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তরিকুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানাহাজতে রাখে। সে সময় তরিকুলকে ছাড়িয়ে নিতে প্রথমে থানায় আসেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা তরিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন। পুলিশ রাজি না হলে হাফিজুল ইসলাম খান সন্ধ্যা সাতটার দিকে অন্য নেতা-কর্মীদের থানায় রেখে বেরিয়ে যান।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী থানা প্রাঙ্গণে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁরা বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করেন। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও, লড়াই করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে জোর করে ওসি ও সার্কেল এসপির সামনে থেকে আসামি তরিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।

মামলায় বিএনপির ৩১ জন

থানাহাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আজ বেলা দেড়টার দিকে শ্রীনগর থাকায় মামলা হয়েছে। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ জনের নাম উল্লেখ ও ২০১ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলাটি করেন থানার উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মামলায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এমদাদুল হক, ছাত্রদলের সভাপতি আশরাফুল ইসলামসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আরও ১৬০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় সঙ্গে যাঁরা জড়িত, সবাইকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আপনাদের ভালোবাসায় আমি অভিভূত: দাগনভূঞায় আবদুল আউয়াল মিন্টু

ফেনী–৩ (দাগনভূঞা ও সোনাগাজী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু আজ বৃহস্পতিবার নিজ এলাকা ফেনীর দাগনভূঞায় আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। নেতা–কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যর্থনায় আবেগাপ্লুত হয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি এই প্রথম নির্বাচন করতে এসেছি। এর আগে আমি আমার বাবা ও ছোট ভাইয়ের জন্য নির্বাচন করেছি। আজ আপনাদের ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে।’

আজ সন্ধ্যায় ফেনী–নোয়াখালী মহাসড়কের দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টে আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন। এর আগে আজ দুপুরে আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনী পৌঁছে শহরের মহাম্মদ আলী এলাকায় পথসভা করেন। সেখান থেকে দাগনভূঞা বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। পরে দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে গাড়িবহর নিয়ে তিনি নিজ এলাকায় প্রবেশ করেন।

দলীয় মনোনয়ন লাভের পর এই প্রথম নিজ সংসদীয় এলাকায় যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। বর্ষীয়ান এই নেতাকে একনজর দেখতে ও শুভেচ্ছা জানাতে ভিড় করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের শত শত নেতা–কর্মী। ​নেতা–কর্মীরা হাতে ফুলের তোড়া ও মালা নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন পুরো এলাকা।

কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘দেশের এই কঠিন সময়ে আপনারা যে সাহস ও ঐক্য ধরে রেখেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। ইনশা আল্লাহ, আপনাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। নির্বাচনে ধানের শীষকে বিজয়ী করলে এলাকার উন্নয়নে আমি সর্বাত্মক কাজ করব।’

গাড়িবহরে হামলার অভিযোগ

এদিকে দাগনভূঞা উপজেলায় ঢোকার সময় আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে হামলা হয়। বাজারের জিরো পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। এতে বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হন। তবে হামলা সত্ত্বেও ওই জায়গায় তিনি পথসভায় বক্তব্য দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সিনিয়র সহসভাপতি কাজী জামশেদ আলমের অনুসারীরা আজ বিকেলে ফেনী–নোয়াখালী মহাসড়কের দাগনভূঞা চৌরাস্তা এলাকায় কয়েকটি বালুবাহী ও খালি ট্রাক দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। এ সময় জিরো পয়েন্ট এলাকায় জামশেদ আলমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছিল।

হামলা প্রসঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই আকবর হোসেন ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ফেনী জেলা বিএনপির নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে আজ দাগনভূঞা বাজারে আবদুল আউয়াল মিন্টুর নির্বাচনী গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। আমি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে কাজী জামশেদ আলম বলেন, আকবর হোসেনের অনুসারীদের মিথ্যা মামলায় গত কয়েক দিন তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। বুধবার রাতে তিনি জামিনে বের হয়েছেন। তাঁর অনুসারীরা আজ দুপুরে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করেন। এ জন্য দলীয় নেতা–কর্মীরা দুপুর থেকে তাঁকে বরণ করতে দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। তাঁদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুকেও বরণ করে নেওয়ার কর্মসূচি ছিল। কিন্তু মিন্টুর বহরে থাকা জেলা যুবদল নেতা মামুনের নেতৃত্বে বেশ কিছু নেতা–কর্মী প্রথমে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তবে কেউ আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়িবহরে হামলা কিংবা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেননি বলে দাবি করেন জামশেদ আলম।

হামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত গণমাধ্যমের কর্মীদের বলেন, ‘আমার গাড়িবহরে হামলার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। খুব শিগগির আপনারা এর উত্তরণ দেখবেন। আমি মনে করি, সব অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে।’

দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুর রহমান বলেন, দাগনভূঞায় প্রার্থীর গাড়িবহরে কোনো রকম হামলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো আহতের খবরও পুলিশের কাছে জানা নেই। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কেউ কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ করেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ