পাকিস্তানে ফিরতে পেরে দারুণ খুশি মালালা ইউসুফজাই
Published: 11th, January 2025 GMT
ইসলামিক বিশ্বে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে আজ শনিবার পাকিস্তানে পৌঁছেছেন মালালা ইউসুফজাই। নিজ দেশে ফিরতে পারার অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে মালালা বলেছেন, তিনি ‘অভিভূত’।
মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মালালা। ২০১২ সালে তিনি যখন স্কুলে পড়তেন, সে সময়ে পাকিস্তানের তালেবান জঙ্গিরা স্কুলবাসের ভেতরে তাঁকে গুলি করেছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা মালালা নারীদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কাজ করছেন।
প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকায় ২০১২ সালের পর মালালা হাতে গোনা দু–একবার পাকিস্তানে গেছেন।
শনিবার মা–বাবার সঙ্গে ইসলামাবাদের কনফারেন্সে আসার পর মালালা বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরতে পেরে আমি সত্যি সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
ইসলামিক বিশ্বে নারীদের শিক্ষা নিয়ে দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে যোগ দিতে মুসলমান–অধ্যুষিত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা পাকিস্তানে এসেছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার সকালে সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন। স্কুলশিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলনে রোববার মালালার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। তিনি এএফপিকে বলেছেন, তিনি আফগানিস্তানে নারীশিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে চান। আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়েশিশু ও নারীদের বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেওয়া হয় না। মেয়েদের জন্য সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিষিদ্ধ।
সম্মেলনে যাওয়ার আগে গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মালালা লেখেন, ‘আমি মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অধিকারের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলব এবং আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য তালেবান নেতাদের কীভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা যায়, সে বিষয়েও কথা বলব।’
আরও পড়ুনআনুষ্ঠানিকভাবে অক্সফোর্ড স্নাতক হলেন মালালা২৭ নভেম্বর ২০২১পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকি বলেছেন, তাঁরা আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান প্রশাসনকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তালেবান প্রশাসন কোনো জবাব দেয়নি।
পাকিস্তান তালেবান ও আফগান তালেবান দুটো ভিন্ন গ্রুপ। কিন্তু তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। দুই দলের বিশ্বাসও প্রায় এক। উভয়ই নারীশিক্ষাকে তাদের বিশ্বাসের পরিপন্থী মনে করে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আট দশক পর দেশের মাটিতে ফিরে যাওয়া
জাপানের টোকিওর নগরকেন্দ্রের ব্যস্ত এক জায়গাজুড়ে আছে বিতর্কিত একটি শিন্তো মন্দির। জাপানে যেটা ইয়াসুকুনি মন্দির নামে পরিচিত। ১৮৬৯ সালে যাত্রা শুরু করা শিন্তো ধর্মের এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল মূলত এক বছর আগে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সামন্ত্রতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে আধুনিক জাপানের ভিত্তি তৈরি করে নেওয়া মেইজি পুনরুত্থানের সময় গৃহযুদ্ধে নিহত বিজয়ী পক্ষের সৈন্যদের ‘দেবতুল্য’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। ফলে বিজয়ী পক্ষের নিহত সব সৈনিকের নাম সেখানে দেবতার সারিতে সন্নিবেশিত আছে, পরাজিতদের নয়।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দেওয়ার বিনিময়ে পাওয়া এ রকম প্রতিদানের মধ্যে বিতর্কের কিছু থাকার কথা নয়। দীর্ঘকাল ধরে এটা নিয়ে কোনো রকম বিতর্কও ছিল না। তবে সেই হিসাব পাল্টে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়া জাপানের সেই সময়ের কয়েকজন নেতাকে ১৯৭০–এর দশকের শেষ দিকে ইয়াসুকুনির দেবতার তালিকায় যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে।
ফলে যুদ্ধের পুরো সময় ধরে জাপানের যে কয়েক লাখ তরুণ দেশপ্রেমে নিবেদিত থেকে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, ইয়াসুকুনির সেই ঘটনার আলোকে তাঁদেরও এখন ধরে নেওয়া হচ্ছে ‘বিতর্কিত’ হিসেবে। জাপানের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের বাইরে অন্য একটি মর্মান্তিক দিক হচ্ছে এটা।
যেকোনো যুদ্ধের বলি সর্বাগ্রে হতে হয় যুদ্ধে জড়িত কোনো একটি দেশের তরুণদের। নিজেরা না চাইলেও দেশপ্রেমের দোহাই দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে যাঁদের সাধারণত বাধ্য করা হয়। এর পরোক্ষ ফলশ্রুতিতে নেতৃত্বের স্খলনের জন্য নেতারাই কেবল নয়, সেসব তরুণকেও চিহ্নিত করা হয় ‘খলনায়ক’ হিসেবে।
এমনটাই সম্ভবত ঘটেছে আট দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত জাপানের কয়েকজন তরুণ সৈনিকের জীবনে। তাঁদের অনেকেরই সম্ভবত জানা ছিল না কেন তাঁরা যুদ্ধে জড়িত। আর যাঁরা তাঁদের যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা ধরে নিয়েছিলেন যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সেই তরুণদের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে, তা নিয়ে খুব বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করার দরকার সম্ভবত নেই।
সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িত জাপানিদের নামফলক