দলবদলে মাত্র ৭ দিন আগে ব্রাইটন থেকে চেলসিতে যোগ দেন হোয়াও পেদ্রো। সেদিনই তাঁকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় চেলসির ক্লাব বিশ্বকাপ দলে। তিন দিন পর স্বদেশী ক্লাব পালমেইরাসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিষেকও হয় তাঁর। সেদিন ৩৬ মিনিট মাঠে থেকে বিশেষ কিছু করতে পারেননি।

পালমেইরাসের বিপক্ষে অভিষেক হলেও গতকাল রাতে ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই প্রথমবারের মতো একাদশে জায়গা পান ২৩ বছর বয়সী পেদ্রো। আর চেলসির হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই সুযোগ পেয়ে করেছেন বাজিমাত। শৈশবের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে করেছেন জোড়া গোল। তাতে ফ্লুমিনেন্সকে ২–০ গোলে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে চেলসি।

আর এর মধ্য দিয়ে থামল ক্লাব বিশ্বকাপে ফ্লুমিনেন্সের চমক জাগানো অভিযাত্রাও।
ফ্লুমিনেন্সের বিদায়ের মধ্য দিয়ে টানা ১৩ বারের মতো ফিফা আয়োজিত ক্লাব পর্যায়ের টুর্নামেন্টের শিরোপা ইউরোপিয়ান ক্লাবের হাতে থাকা নিশ্চিত হলো। সর্বশেষ ২০১২ সালে চেলসিকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল করিন্থিয়ান্স।আগামী রোববার রাতে ফাইনালে চেলসির মুখোমুখি হবে আজ রাতে অপর সেমিফাইনালে পিএসজি ও রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে জয়ী দল।

আরও পড়ুনক্লাব বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে এগিয়ে যে দুজন০৭ জুলাই ২০২৫

নিউইয়র্কের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে চেলসি ও ফ্লুমিনেন্স। তবে আক্রমণ, প্রতি–আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে ১৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে চেলসিকে এগিয়ে দেন পেদ্রো। আক্রমণে ওঠার একপর্যায়ে বাঁ পাশে ফ্লুমিনেন্স বক্সের কাছাকাছি জায়গায় বল পান পেদ্রো। সেখান থেকেই দূরের পোস্ট তাক করে শট নেন। ফ্লুমিনেন্স গোলরক্ষক ফাবিও ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি বলের।

নিজের শৈশবের ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে অবশ্য উদ্‌যাপন করেননি পেদ্রো।
গোল খেয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে ফ্লুমিনেন্স। একটু পর মার্ক কুকুরেয়া গোললাইন থেকে বল ফিরিয়ে না দিলে তখনই সমতায় ফিরতে পারত ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। ৩৬ মিনিটে হ্যান্ডবলের কারণে রেফারি প্রথমে ফ্লুমিনেন্সের পক্ষে পেনাল্টি দিলেও পরে ভিএআর সেটি বাতিল করেছে।

বিরতির পরও একই ধারায় চলতে থাকে লড়াই। ৫৬ মিনিটে ফ্লুমিনেন্সের ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা একরকম বন্ধই করে দেন ক্লাবটির ঘরের ছেলে পেদ্রো। এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে বল পেয়ে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে দারুণ এক গোল করেন। এই গোলের পরও উদ্‌যাপন করেননি পেদ্রো।

আরও পড়ুনক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নায়ক হতে পারেন যাঁরা১৬ ঘণ্টা আগে

এরপর ফ্লুমিনেন্স চেষ্টা করেও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। তৃতীয়বারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে চেলসি। এর আগে ২০১২ ও ২০২১ সালে ফাইনাল খেলেছে ইংলিশ ক্লাবটি। ২০১২ সালে রানার্সআপ হলেও ২০২১ সালে শিরোপা জিতেছিল তারা।

ম্যাচ শেষে চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেন, ‘এটা দারুণ অর্জন। মৌসুমটা দারুণ গেল। লিগে সেরা ছিলাম, কনফারেন্স লিগ জিতলাম এবং এখন এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলাম। আমরা দারুণ আনন্দিত। আমরা এখন মৌসুমের শেষ ম্যাচে পৌঁছে গেছি। আশা করি টুর্নামেন্টটা জিততে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প র ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারকে টেকসই সমাধান বের করতে হবে

ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষাকে মেগা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। অথচ দশকের পর দশক ধরে আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাছে শিক্ষা খাত গৌণ বিষয় হিসেবেই থেকে গেছে। এর একটা চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত হতে পারে বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর–সুবিধা পেতে ভোগান্তি বাড়ার ঘটনাটি। শিক্ষকেরা সারা জীবন ধরে পড়ান, সমাজের নানা জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন, অথচ অবসরের পর তাঁদেরকেই প্রাপ্য সুবিধার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়—এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবসর ও কল্যাণসুবিধা পান। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তাঁদের অবসর–সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে এই সুবিধা পেতে তিন–চার বছর সময় লেগে যায়। স্কুলপর্যায়ের ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত যেসব শিক্ষক-কর্মচারী আবেদন করেছেন, তাঁরা সুবিধা পেয়েছেন। কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। অবসর–সুবিধার জন্য নিষ্পত্তি না হওয়া আবেদনের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৭৫। আর কল্যাণ ট্রাস্টের ক্ষেত্রে ৪৪ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অপেক্ষায় আছে। ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরাই এখান থেকে টাকা পেয়েছেন।

দেখা যাচ্ছে যে অবসরে যাওয়ার পর অবসর–সুবিধা পেতে শিক্ষকদের তিন–চার বছর পার হয়ে যাচ্ছে। ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ–সুবিধা কম। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরও শোচনীয়। ফলে বেশির ভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষককে নিম্ন বেতনে কষ্ট করেই জীবন চালাতে হয়। অবসরের পর সময়মতো অবসর ভাতা না পাওয়ায় তাঁদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা ও বিয়ে, হজ ও অন্যান্য ধর্মীয় ব্রত পালনে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতেই জানা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষক অবসর–সুবিধার টাকা পাওয়ার আগেই মারা যান।

এই ট্র্যাজিক বাস্তবতা সৃষ্টির কারণ হলো তহবিল–সংকট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবসর–সুবিধার জন্য ৭ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তহবিলের ঘাটতিটা এত বড় অঙ্কের হলো কীভাবে? শিক্ষক–কর্মচারীদের অবসর–সুবিধার টাকাটা কীভাবে আসবে, তার একটা উপায় ঠিক করা আছে। অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা মিলিয়ে প্রতি মাসে শিক্ষকদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এ ছাড়া প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। বাকি টাকা সরকারের থোক বরাদ্দ ও চাঁদা জমার সুদ থেকে সমন্বয় করে দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা অবসরের পর যে সুবিধাটা পান, এর বেশির ভাগটাই নিজেদের অর্থ।

শিক্ষকদের অবসর–সুবিধার ক্ষেত্রে তহবিলের যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বন্ড করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা অপ্রতুল। শিক্ষকেরা অবসরের পর ছয় মাসের মধ্যেই যাতে তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধাগুলো বুঝে পান, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমরা আশা করি, অবসরে যাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষককেরা প্রতিদিন যেসব রূঢ় ও দুঃসহ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন, সরকার অনুধাবন করে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক পদক্ষেপ নেবে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেবে। তবে মাঝেমধ্যে থোক বরাদ্দ এ ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নয়। সরকারকে অবশ্যই টেকসই সমাধান বের করতে হবে।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারকে টেকসই সমাধান বের করতে হবে
  • বাইডেনকে দুষলেও সন্দেহভাজন আফগান নাগরিকের আশ্রয়–আবেদনে অনুমোদন দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন