গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর দাম উঠেছিল ৮০ টাকা পর্যন্ত। তাতে এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ভালো লাভ করেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলুচাষি হামিদুর রহমান। বেশি লাভের আশায় এবার ঋণ করে এক একর জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু বাজারে এখন আলুর দাম কমছে। ১৫ দিন আগে হামিদুর যে আলু প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, সেই আলু গত সপ্তাহে বিক্রি করেন ১১ টাকা কেজিতে। তাতে লাভের আশা তো দূরের কথা, চাষের দেনা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

শুধু হামিদুর নয়, আগাম আলু চাষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো কৃষক এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঠাকুরগাঁও আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে এই জেলায় ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। গতবার ভালো লাভ পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে।

ঠাকুরগাঁও সদরের বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাভের আশায় এবারও চাষিরা নানা জাতের আগাম আলুর চাষ করেছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষে আলু রোপণ করে নভেম্বরে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। তবে এবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে খেতের বীজ নষ্ট হয়ে যায় কৃষকের। এ কারণে নতুন বীজ রোপণ করতে হয়েছে। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাষের খরচও বেড়েছে। কিন্তু আগাম জাতের সেই আলু বিক্রি করে এখন লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা জানান, জেলায় মৌসুমের শুরুতেই প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। এখন মাঠে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাটের ধর্মপুর গ্রামের কৃষক সত্যেন বর্মণ বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকার বেশি। আলু পাওয়া গেছে ২ হাজার ৬০০ কেজি। তাতে প্রতি কেজি আলু চাষে খরচ পড়েছে ২৩ টাকার বেশি। সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকায়। তাতে কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

জেলার বালিয়াডাঙ্গী দুওসুও এলাকার আলুচাষি সোহেল রানা জানান, তিন বিঘা জমিতে গ্র্যানুলা জাতের আলু আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকার বেশি। আলু পেয়েছেন ১৯৫ মণ। ১২ টাকা দরে সেই আলু বিক্রি করে পান ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা। তাতে তাঁর লোকসান হয়েছে ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা।

রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে দুই বিঘার আলুর বিক্রি করেছি। তখন অল্প কিছু লাভ হয়েছে। কিন্তু এখন ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। আলু যে রেখে দেব, তারও উপায় নেই। কারণ, আগাম আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায় না।’

সদর উপজেলার ফকদনপুর গ্রামের আলুচাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে দাম বাড়লে মানুষ কত কথা বলে। সরকারও দর বেঁধে দেয়। এখন প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। সরকারেরও কোনো পদক্ষেপ নেই।

কৃষকের মাঠ ঘুরে ঘুরে আলু কেনেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ব্যবসায়ী মমতাজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এবার মৌসুমের শুরুতে এক কেজি আলু ৮৫ টাকায় কিনেছি। গত সপ্তাহেও মাঠ থেকে ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিতে আলু কিনেছি। এখন সেই আলু কিনছি ১১ থেকে ১২ টাকায়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার কৃষক যখন একটি ফসলে লাভ পান, তখন অন্যরাও সেটাতেই ঝোঁকেন। চলতি বছরে আলুর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচটাও একটু বেশি পড়ছে। কিন্তু বাজারে দাম কম। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের লাভ কম হলেও লোকসান হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছিলেন যে বাঙালি পাইলট

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ চলছে, চারপাশে গর্জে উঠছে যুদ্ধবিমান আর গোলার শব্দ। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান যখন একে একে ধ্বংস করছে আরব বাহিনীর বিমানঘাঁটি, তখন জর্ডান থেকে উড়ে আসা একজন পাইলট গুলি করে ভূপাতিত করেন ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিমান। এতেই হঠাৎ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সাইফুল আজম নামের ওই পাইলট ছিলেন বাঙালি।

১৯৬৭ সালের ছয় দিনের সেই ভয়ংকর যুদ্ধে তিনটি ভিন্ন দেশের হয়ে যুদ্ধ করে চারটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেন সাইফুল আজম নামের ওই পাইলট। তখন তিনি ছিলেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পাইলট, পরে স্বাধীন বাংলাদেশের বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। এই সাহসিকতা তাঁকে বানিয়েছে বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য বাঙালি নায়ক।

১৯৬৭ সালের ৫ জুন। ওই দিন বিকেলে ইসরায়েলের চারটি যুদ্ধবিমান জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করে। উদ্দেশ্য ছিল, ছোট্ট দেশটির বিমানবাহিনীকে শেষ করে দেওয়া। এর আগে তারা মিসরীয় বিমানবাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেদিন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী মাটিতে থাকা দুই শতাধিক মিসরীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়েছিল।

কিন্তু জর্ডানের মাফরাক বিমানঘাঁটি ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই ইসরায়েলের একটা যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেন তৎকালীন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম। জর্ডান বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান ওড়ানোর সময় তিনি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন।

এ ঘটনার দুই দিন পর ৭ জুন ইরাকের বিমানবাহিনীর একটা বিমান ওড়ানোর সময় ইসরায়েলের আরও দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেন তিনি।

এ ছাড়া ১৯৬০ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন পাওয়া সাইফুল আজম ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনীরও একটা বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছিলেন।

পাকিস্তান থেকে জর্ডান

পাকিস্তানের ফ্লাইট লেফটেন্যান্টের পদে থাকাকালে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর সাইফুল আজমকে পাকিস্তান সরকার ‘সিতারা-ই-জুরাত’ সামরিক পদক দিয়ে সম্মানিত করে।

এরপর ১৯৬৬ সালের শেষের দিকে সাইফুল আজম জর্ডান বিমানবাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ওই যুদ্ধে একদিকে ছিল ইসরায়েল, অন্যদিকে জর্ডান, মিসর, সিরিয়া, ইরাকসহ আরব দেশগুলোর জোট।

সাইফুল আজম ও লেফটেন্যান্ট এহসান শারদুম

সম্পর্কিত নিবন্ধ