আলুতে লাভের বদলে বড় লোকসানে চাষিরা
Published: 11th, January 2025 GMT
গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর দাম উঠেছিল ৮০ টাকা পর্যন্ত। তাতে এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ভালো লাভ করেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলুচাষি হামিদুর রহমান। বেশি লাভের আশায় এবার ঋণ করে এক একর জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু বাজারে এখন আলুর দাম কমছে। ১৫ দিন আগে হামিদুর যে আলু প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি করেছিলেন, সেই আলু গত সপ্তাহে বিক্রি করেন ১১ টাকা কেজিতে। তাতে লাভের আশা তো দূরের কথা, চাষের দেনা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
শুধু হামিদুর নয়, আগাম আলু চাষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো কৃষক এখন লোকসানের মুখে পড়েছেন। ঠাকুরগাঁও আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে এই জেলায় ২৬ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। গতবার ভালো লাভ পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে।
ঠাকুরগাঁও সদরের বিভিন্ন এলাকার আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লাভের আশায় এবারও চাষিরা নানা জাতের আগাম আলুর চাষ করেছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষে আলু রোপণ করে নভেম্বরে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। তবে এবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বৃষ্টির কারণে খেতের বীজ নষ্ট হয়ে যায় কৃষকের। এ কারণে নতুন বীজ রোপণ করতে হয়েছে। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাষের খরচও বেড়েছে। কিন্তু আগাম জাতের সেই আলু বিক্রি করে এখন লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা।
কৃষকেরা জানান, জেলায় মৌসুমের শুরুতেই প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। এখন মাঠে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাটের ধর্মপুর গ্রামের কৃষক সত্যেন বর্মণ বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকার বেশি। আলু পাওয়া গেছে ২ হাজার ৬০০ কেজি। তাতে প্রতি কেজি আলু চাষে খরচ পড়েছে ২৩ টাকার বেশি। সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১১ থেকে ১২ টাকায়। তাতে কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জেলার বালিয়াডাঙ্গী দুওসুও এলাকার আলুচাষি সোহেল রানা জানান, তিন বিঘা জমিতে গ্র্যানুলা জাতের আলু আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকার বেশি। আলু পেয়েছেন ১৯৫ মণ। ১২ টাকা দরে সেই আলু বিক্রি করে পান ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা। তাতে তাঁর লোকসান হয়েছে ৮৭ হাজার ৪০০ টাকা।
রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে দুই বিঘার আলুর বিক্রি করেছি। তখন অল্প কিছু লাভ হয়েছে। কিন্তু এখন ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। আলু যে রেখে দেব, তারও উপায় নেই। কারণ, আগাম আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা যায় না।’
সদর উপজেলার ফকদনপুর গ্রামের আলুচাষি গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে দাম বাড়লে মানুষ কত কথা বলে। সরকারও দর বেঁধে দেয়। এখন প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। কিন্তু কারও মুখে কোনো কথা নেই। সরকারেরও কোনো পদক্ষেপ নেই।
কৃষকের মাঠ ঘুরে ঘুরে আলু কেনেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ব্যবসায়ী মমতাজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এবার মৌসুমের শুরুতে এক কেজি আলু ৮৫ টাকায় কিনেছি। গত সপ্তাহেও মাঠ থেকে ২২ থেকে ২৪ টাকা কেজিতে আলু কিনেছি। এখন সেই আলু কিনছি ১১ থেকে ১২ টাকায়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ এলাকার কৃষক যখন একটি ফসলে লাভ পান, তখন অন্যরাও সেটাতেই ঝোঁকেন। চলতি বছরে আলুর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচটাও একটু বেশি পড়ছে। কিন্তু বাজারে দাম কম। এতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তবে উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের লাভ কম হলেও লোকসান হবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত প্রার্থীর বাড়িতে সালাহউদ্দিন আহমেদ
নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে চকরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান তিনি। সন্ধ্যায় এই আসনে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত ইসলামের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ফারুকের বাসায় যান সালাহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে দুই নেতা একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
আরো পড়ুন:
বেগম জিয়াকে কারাগারে স্লো পয়জন দেওয়া হয়েছিল: সালাহউদ্দিন আহমেদ
খালেদা জিয়া বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় কি না, দেখার পর তারেকের ফেরার সিদ্ধান্ত
জামায়াত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ফারুকের বাসা চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের কালা সিকদারপাড়ায় অবস্থিত। সেখানে গিয়ে জাময়াত প্রার্থীর বাবা নুরুল কবিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় দুই নেতা একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
গত সোমবার দুপুরে নুরুল কবির মারা যান। খবর পেয়ে সেদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, “আব্দুল্লাহ আল ফারুক আমার এলাকারই সন্তান। তার বাবা মারা গেছেন। যেহেতু আমি এলাকায়ে এসেছি, তাই তার পরিবারের খোঁজ নিতে তার বাসায় গেছি।”
এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে ছিলেন- তার স্ত্রী ও সাবেক সাংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হকসহ দলীয় নেতারা।
ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ