জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, হঠকারিতা করে, ভুল সিদ্ধান্ত বা ভুল পদক্ষেপের কারণে সেই সম্ভাবনা যাতে বিনষ্ট না হয়, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচন হলে আমাদের শক্তি আরও বাড়বে এবং যেসব সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো দূর হয়ে যাবে।’

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। এবি পার্টির নতুন চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে বিএনপি, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান মির্জা ফখরুল। এবি পার্টির তরুণ নেতারা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির নেতা–কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাঁচ মাস পরে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন যে আমাদের অর্জন কী। আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে-নির্ভয়ে কথা বলতে পারছি, এটা একটা বড় অর্জন। সশস্ত্র ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে, হাসিনার বিরুদ্ধে উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে সফল করেছেন। আমরা একটা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। এখন একটা পরিবেশ এসেছে, যে পরিবেশে আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণের স্বপ্ন দেখছি। এই পরিবেশ ও স্বপ্নটাকে আমরা যেন নষ্ট করে না দিই। আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, বৈষম্য দূর করতে চাই।’

‘কিছু মানুষ ঐক্যে ফাটল

ধরানোর চেষ্টা করছেন’

বাংলাদেশের তরুণদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চান উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দেশেরই কিছু মানুষ বিভিন্নভাবে এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানি, সেই চেষ্টা সফল হবে না।.

..আমরা আগেও বলেছি, আবার বলছি, আমরা সংস্কার চাই। কিছু কিছু মানুষ বোঝানোর চেষ্টা করেন যে আমরা সংস্কারের আগেই নির্বাচন চাই। বিষয়টা কিন্তু সেটা নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, নির্বাচনটা কেন দ্রুত চাই। এই কারণে দ্রুত চাই যে নির্বাচনটা হলে আমাদের শক্তি আরও বাড়বে এবং যেসব সংকট সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো দূর হয়ে যাবে। আমরা নির্বাচনের পরে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার করতে চাই, সবাই মিলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে চাই।’

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। হঠকারিতা করে, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে, ভুল পদক্ষেপ করে আমরা যেন সেই সম্ভাবনাকে বিনষ্ট না করি। হ্যাঁ, দেশের অবস্থা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে খুব ভালো নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও ভঙ্গুর অবস্থানে আছে। সবাই মিলেই আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই। সবাই মিলে একসঙ্গে হয়ে যদি আমরা সেই দানব ও ফ্যাসিস্টকে সরাতে পারি, তাহলে আমরা কেন পারব না নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে?’ অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পুলিশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পুলিশ একাডেমির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বৈঠকে দুই দেশের পুলিশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, অপরাধী হস্তান্তর, সেফ সিটি নির্মাণসহ দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি পাকিস্তান সফর করেছেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। সিনিয়র সচিব পা‍কিস্তানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে তাদের “সেফ সিটি” প্রকল্প আমাদের দেশেও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’

দুই দেশের পুলিশ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে একটি সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দুই দেশের অপরাধীদের পারস্পরিক বিনিময় বা হস্তান্তরে বর্তমানে কোনো আইনি কাঠামো নেই। ২০০৪ সালে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা কার্যকর করা হয়নি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পুনরায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

হাইকমিশনার এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের জন্য সাঁজোয়া নিরাপত্তা যানবাহন, ড্রোন সংগ্রহ ও ক্রয় এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণে পাকিস্তান সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে জানান।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান, পাকিস্তান দূতাবাসের কাউন্সেলর কামরান দাঙ্গাল উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ