সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কৌশলে পরিবর্তন আসছে
Published: 4th, February 2025 GMT
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক ভুয়া সুবিধাভোগী থাকার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে সরকার। কর্মসূচিগুলো অডিট বা নিরীক্ষার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। আগামীতে এ কর্মসূচির কৌশল বদলানো হবে। নিখুঁত টার্গেটিংয়ের জন্য নির্ভুল পদ্ধতিতে যেতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এ কর্মশালার আয়োজন করে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভুয়া বা ত্রুটিপূর্ণ সুবিধাভোগী থাকার কথা বিষয়টি তুলে ধরেছে। এমনটি হলে বাজেটে এ খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তার প্রায় অর্ধেকই অপচয় হয়েছে– যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যদি সত্যিকারার্থে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হয়, তাহলে এটিকে নির্ভুল করতে হবে। এতদিন কাজটি কেন করা হয়নি বিস্ময়ের।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, একজন মায়ের জন্য ৮০০ টাকা মাসিক ভাতা কোনো কাজেই আসে না। এটি একটি প্রহসন। ৮০০ টাকা দিয়ে নারীর কী ক্ষমতায়ন হবে? বিশ্বব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তার ব্যয় করা হয় খুবই দুর্বল মানুষদের জন্য। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা। তাদের সুস্থ রাখার দায়িত্বও রাষ্ট্রের।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, নগদ অর্থের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। জীবিকা নির্বাহ, প্রশিক্ষণ, আচরণগত পরিবর্তন এবং পুষ্টি গ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি আর্থিক সহায়তা একত্র করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি মানব পুঁজি তৈরি ও দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে সহায়তা করে।
কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। এ কর্মসূচির অধীন অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ৩৬ মাস পর্যন্ত মাসিক ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়। বয়স্ক ও বিধবারা মাসে ভাতা পান ৫৫০ টাকা। প্রতিবন্ধীরা পান ৮৫০ টাকা। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ।
উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন খাতের উন্নয়নকর্মী কর্মশালায় অংশ নেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি
‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’
কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।
হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।
হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’
অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’
একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’
খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’
ঢাকা/তারা