জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেক প্রকল্প দাবি চসিক মেয়রের
Published: 5th, February 2025 GMT
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি প্রকল্প নিতে চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তা চেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শাহাদাত হোসেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নগরের উন্নয়নে বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের অর্থ ছাড় ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রকল্প নিতে সরকারের সহায়তা চান মেয়র।
রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চসিক জানায়, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছেন শাহাদাত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর পরিকল্পনাকে ইতিবাচকভাবে নেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাক্ষাতে শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বর্তমানে ৩৬টি খালে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে এ প্রকল্পের আওতার বাইরে আরও ২১টি খাল রয়েছে, যা জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র এসব খালেরও উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আদায়ের জন্য ১ শতাংশ মাশুল নিয়েও আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, এই মাশুলের একটি অংশ চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। অর্থ ছাড় দ্রুত হলে উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি বাড়বে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা দীঘিনালা মাইনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার এখনো আশানুরূপভাবে কমেনি। বিশেষ করে, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের গরিব শিশুদের অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে আর পড়ালেখা করতে পারেন না। এসব ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ২০২৩ সালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম এলাকা বটতলীতে দীঘিনালা বন ভিক্ষু সংঘের উদ্যোগে স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠা করেছেন মাইনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এটি যেন সেখানকার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শেষ ভরসা।
দীঘিনালা বন ভিক্ষু সংঘের সদস্য ধুতাংঙ্গ টিলা বনবিহারের অধ্যক্ষ দেব ধাম্মা মহাস্থবির ভান্তে ও সাধনাটিলা বনবিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধ বংশ মহাস্থবির ভান্তের উদ্যোগে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি দীঘিনালা বটতলীতে তিনজন ব্যক্তির দান করা এক একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে এখন ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হচ্ছে। সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী আছে। তাদের মধ্যে ৮৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী। তারা বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।
নারাইছড়ি থেকে আসা এই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেশমি চাকমা ও রাঙ্গামাটির লংগদু বড় উল্টাছড়ি গ্রাম থেকে আসা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী পুষ্পিতা চাকমা জানিয়েছে, তারা দুর্গম এলাকা থেকে এখানে এসে পড়াশুনা করছে বিনামূল্যে। এ প্রতিষ্ঠানটি না হলে হয়ত তাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত। তারা চিকিৎসক ও প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সানন্ত কিতাশ চাকমা , পরিচালনা কমিটির সদস্য সম্প্রতি চাকমা, ধর্ম সিদ্ধি চাকমা ও শিক্ষক প্রিয়া চাকমা জানান, এই গ্রামে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে, তাদের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বা মাইনী নদী পাড় হয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের পর ঝরে পড়ে। তাদের কথা চিন্তা করে এ প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নেন দীঘিনালা বনভিক্ষু সংঘ ও স্থানীয়রা। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কলেজ পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। একটি ট্রাস্ট গঠন করে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হবে। ট্রাস্ট গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৮৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী আছে। তাদের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। এতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় পরিচালনা কমিটিকে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আর্থিক সহযোগিতা সাদরে গ্রহণ করা হবে। যারা এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেবেন, তারা আজীবন সদস্য পদ পাবেন।
প্রধান শিক্ষক রেনা চাকমা জানান, তাদের বিদ্যালয়ের বিশেষত্ব হচ্ছে দীঘিনালা বনবিহার ভিক্ষু সংঘের সহযোগিতায় অহায়, গরিব ও এতিম শিক্ষার্থীদের আবাসিকে রেখে সম্পূর্ণ ফ্রিতে পড়ানো হয়। তবে, নতুন বিদ্যালয় হিসেবে অবকাঠামো সংকট ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডাইনিং স্পেস নেই।
বিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা দেব ধাম্মা মহাস্থবির ভান্তে ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধন প্রদীপ চাকমা জানান, দুর্গম এলাকার অসহায়, গরিব ও এতিম শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে, বিশেষ করে যারা পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করা সুযোগ পায় না। এখানে যারা আবাসিক থাকে, তারা খাবারসহ একদম ফ্রিতে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়।
ঢাকা/রূপায়ন/রফিক