নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি প্রকল্প নিতে চান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তা চেয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শাহাদাত হোসেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নগরের উন্নয়নে বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের অর্থ ছাড় ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রকল্প নিতে সরকারের সহায়তা চান মেয়র।

রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চসিক জানায়, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছেন শাহাদাত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর পরিকল্পনাকে ইতিবাচকভাবে নেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাক্ষাতে শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বর্তমানে ৩৬টি খালে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে এ প্রকল্পের আওতার বাইরে আরও ২১টি খাল রয়েছে, যা জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র এসব খালেরও উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আদায়ের জন্য ১ শতাংশ মাশুল নিয়েও আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, এই মাশুলের একটি অংশ চসিকের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। অর্থ ছাড় দ্রুত হলে উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি বাড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিনের জন্য মোদির প্রোটকল ভাঙা যে বার্তা দিল ট্রাম্পকে

বরাবরের মতো এই সপ্তাহেও রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে তারা কোনো প্রকৃত শান্তি আলোচনা শুরু করার ইচ্ছা রাখে না। এর মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নয়াদিল্লিতে লালগালিচায় অভ্যর্থনা পেলেন।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রোটোকল ভেঙে বিমানবন্দরের রানওয়েতে পুতিনকে করমর্দন ও আলিঙ্গন করে স্বাগত জানান। দৃশ্যটি মনে করিয়ে দেয়—বিশ্বের বহু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে রাশিয়া মোটেও রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন প্রদর্শনের সুযোগও পেয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি দেখিয়ে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ হার। মার্কিন বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো তো রাশিয়ার চলমান ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘মোদির যুদ্ধ’ পর্যন্ত বলেছেন, কারণ ভারত রুশ তেল কেনা বিপুলভাবে বাড়িয়েছে। আগের হার যেখানে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, এখন তা বেড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ। নাভারোর মতে, ‘শান্তির পথ আংশিকভাবে নয়াদিল্লির মধ্য দিয়েই যায়।’

আরও পড়ুনট্রাম্পের চাপে মোদি: নতুন কূটনৈতিক পথের খোঁজে দিল্লি২৫ আগস্ট ২০২৫

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগোলেও বাণিজ্য, এইচ-১বি ভিসা, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে জি-২ গঠনে ট্রাম্পের আগ্রহ—এসব বিষয়েই দুই দেশের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। আর জি-২ গঠনের ধারণা বাস্তবায়িত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের বহু দশকের সেই নীতি বদলে দেবে, যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থান মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে দেখা হতো।

ট্রাম্প প্রশাসনের নয়াদিল্লি-সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি যে সংকীর্ণ—তা স্পষ্ট। এর প্রমাণ শুধু পুতিনের বর্তমান ভারত সফর নয়; বরং গত সেপ্টেম্বর তিয়াংজিনে সাংহাই কো-অপারেশন সামিটে মোদির অংশগ্রহণেও মিলেছে, যেখানে তিনি পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মিলিয়েছেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ট্রাম্প ও তার কয়েকজন শীর্ষ উপদেষ্টা যেভাবে প্রকাশ্যে ভারতকে অবজ্ঞা করেছেন, তা মোদির জন্য দেশে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং গত দুই দশকে নয়াদিল্লির ওয়াশিংটনের কাছাকাছি সরে আসা নিয়ে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতার পথে বিদ্যমান বাধা দেখে স্বস্তি পেতে পারে। কিন্তু পুতিনের এই সফর ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা—ভারতের প্রতি তাদের বর্তমান নীতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

পুতিনের সফরের কর্মসূচিতে রয়েছে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, বেসামরিক বিমান পরিবহন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, বিনিয়োগ প্রকল্প এবং শ্রম অভিবাসন। ভারত এখনো চায়, রাশিয়া যেন জরুরি সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের চুক্তির দুটি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যার সরবরাহ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিলম্বিত হয়েছে। দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও একমত হয়েছে।

যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতে রুশ অস্ত্র আমদানির পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে, মস্কো এখনো ভারতের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ভারতের অস্ত্রের উৎস বৈচিত্র্যকরণ ও রাশিয়ার ইউক্রেনে যুদ্ধজনিত ব্যস্ততা—এই দুটি বিষয় দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনাকে সীমিত করে দিচ্ছে।

এ কারণেই পুতিনের সফরে বাণিজ্য ও অর্থনীতি প্রাধান্য পেয়েছে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন ও মোদি ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তবে রেকর্ড বাণিজ্যের বড় অংশই তেলনির্ভর—আর সেটিও এখন শেষের পথে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি রসনেফট ও লুকঅয়েল—রাশিয়ার বৃহত্তম তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এই বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিনের ইউক্রেন ছকের বিরুদ্ধে কতক্ষণ টিকবে ইউরোপ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ভারতের বড় বড় রিফাইনারি ইতিমধ্যে নতুন রুশ তেল কেনা স্থগিত করেছে। তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রাশিয়ার পক্ষে ভারসাম্যহীন হওয়ায় ভারত এখন রাশিয়ায় আরও বেশি বাজার সুবিধা চাইছে—বিশেষ করে ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্যে।

ভারতীয় অর্থনীতিতে গতি ধরে রাখতে পুতিন ‘নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অনেক দিক থেকেই পুতিনের সফরটি প্রতীকী—খুব বেশি বাস্তব সাফল্যভিত্তিক নয়। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে কোনো বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি এবং জাহাজ নির্মাণ নিয়ে চুক্তি হলেও এগুলোর গুরুত্ব বর্তমান তেল-বাণিজ্যের তুলনায় সীমিত। মোদি অবশ্য সতর্কভাবে বলেছেন যে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের বিষয়ে ভারত নিরপেক্ষ নয় এবং ‘শান্তির পক্ষে’ অবস্থান করছে।

নতুন ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ভারত ও রাশিয়া উভয়ই বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। মোদি ও পুতিন দুজনই পরিষ্কার করেছেন—তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবেন। তবে তাঁরা এটাও বুঝছেন, ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বা অস্থায়ী তেল-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করেই দুই দেশের সম্পর্ক টেকসই হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতার পথে বিদ্যমান বাধা দেখে স্বস্তি পেতে পারে। কিন্তু পুতিনের এই সফর ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা—ভারতের প্রতি তাদের বর্তমান নীতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

হর্ষ ভি পন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন

টাইম থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ