প্রত্যেক ক্যানসার রোগীই আলাদা। তাঁদের স্বাতন্ত্র্য আছে। এটা বিবেচনায় নিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা দিতে হয়। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও দেশে ক্যানসার চিকিৎসার সক্ষমতা নিয়ে আরও বেশি প্রচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার এসকেএফ অনকোলজির আয়োজনে ‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এ কথা উঠে আসে। এ আলোচনা সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।

নাসিহা তাহসিনের উপস্থাপনায় এ পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের মেডিকেল অনকোলজিস্ট ও চিফ মেডিকেল অফিসার ডা.

এ টি এম কামরুল হাসান এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ক্যানসার স্পেশালিস্ট ও মেডিকেল অনকোলজিস্ট ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থাপক জানতে চান, এ বছর ক্যানসার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক’-এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে।

উত্তরে এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘“ইউনাইটেড বাই ইউনিক” কথাটি ছোট হলেও এর অর্থ অনেক ব্যাপক। প্রত্যেক ক্যানসার রোগী ইউনিক। তাঁদের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য আছে। আরেক দিকে আমাদের লক্ষ্য একটাই; প্রতিটি ক্যানসার নির্মূল করা। আমরা সব রোগীকে স্বতন্ত্র বিবেচনা করে তাঁদের চিকিৎসা দেব। এই বিষয়কে মাথায় রেখেই এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’

ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কাদের বেশি আর ক্যানসারের লক্ষণগুলো কী কী? এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ক্যানসার বিভিন্ন রকমের রয়েছে। নারীদের কিছু ক্যানসার হয়, পুরুষের কিছু আলাদা ক্যানসার আছে। মোটাদাগে বলতে গেলে, কিছু রিস্ক ফ্যাক্টরের কারণে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ধূমপান, বায়ুদূষণ, জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার ওজন বেশি থাকলে ক্যানসার হতে পারে। বয়সের কারণেও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

ক্যানসারের লক্ষণ প্রসঙ্গে সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘একেকটা ক্যানসারের একেক ধরনের লক্ষণ রয়েছে। তারপরও বড় লক্ষণ যদি বলতে চাই, সেগুলো হচ্ছে, শরীরের কোথাও চাকা বা টিউমারজাতীয় কিছু দেখা দেওয়া, ওজন কমে যাওয়া, অস্বাভাবিকভাবে নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া, কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্ত বোধ করা ইত্যাদি। ত্বকের ক্যানসারের ক্ষেত্রে নতুন করে চামড়ায় ক্ষত দেখা দেবে, যেটা আগে ছিল না। এসব লক্ষণ দেখলে সাধারণত ধারণা করা হয় যে ক্যানসার হয়েছে।’

স্ক্রিনিং ও ক্যানসার নির্ণয়ের প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে এ টি এম কামরুল হাসান বলেন, ‘স্ক্রিনিং একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। এর দ্বারা কোনো মানুষের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু, সেটা যাচাই করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম স্ক্রিনিং হয়, আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যানসারের স্ক্রিনিং অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। ব্রেস্ট ক্যানসারের স্ক্রিনিংও হচ্ছে।’

এ টি এম কামরুল হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের মতো দরিদ্র দেশে স্ক্রিনিং বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোনো রোগীর যদি শুরুর দিকে ক্যানসার শনাক্ত হয়ে যায়, তাহলে সেই ক্যানসার সহজেই নিরাময়যোগ্য, আর্থিক চাপটাও কম পড়ে। আর আমরা পারিবারিক ইতিহাস ও বিভিন্ন লক্ষণ বিচার করে পরীক্ষা করে রোগটা নির্ণয় করে থাকি।’

বিশ্ব ক্যানসার দিবস, বাংলাদেশে ক্যানসারের বর্তমান অবস্থা, ডায়াগনোসিস, রোগ নির্ণয়ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে পরামর্শ দেন ডা. এ টি এম কামরুল হাসান ও ডা. সৈয়দ মো. আরিফুল ইসলাম

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বেইজিংয়ে ড. ইউনূসকে রাজকীয় সংবর্ধনা

চারদিনের চীন সফরের দ্বিতীয় দিনে বোয়াও শহরে ব্যস্ততম দিন পার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম অংশ নিয়ে চীনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেইজিং এসে পৌঁছেছেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লালগালিচা অভ্যর্থনা জানান চীনের উপমন্ত্রী সান ওয়েইডং।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টাকে রাজকীয় লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে চীন। চীনের উপমন্ত্রী সান ওয়েইডং বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় অধ্যাপক ইউনূস হাইনান প্রদেশের বোয়াও শহর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হন।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা শুক্রবার সকাল ১০টায় বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রেসিডেন্সিয়াল বেইজিংয়ে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগে’ অংশগ্রহণ করবেন।

চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা একই স্থানে টেকসই অবকাঠামো ও জ্বালানি বিনিয়োগ, বাংলাদেশ ২.০ উৎপাদন ও বাজার সুযোগ এবং সামাজিক ব্যবসা, যুব উদ্যোক্তা এবং তিন শূন্যের বিশ্ব- এই তিনটি বিষয়ের ওপর তিনটি গোলটেবিল আলোচনায়ও যোগ দেবেন।

বৈঠককালে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সামাজিক ব্যবসা সার্কেলের অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ, বিখ্যাত চীনা কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ