ফ্রান্সের এক বিজ্ঞানীর মোবাইল ফোনে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে সমালোচনামূলক বার্তা পাওয়া যাওয়ায় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টন শহরের কাছে একটি স্থানে বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলনে তাঁর অংশ নেওয়া কথা ছিল। ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণামন্ত্রী ফিলিপ ব্যাপটিস্ট গত সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ফিলিপ ব্যাপটিস্ট বলেন, ‘আমি উদ্বেগের সঙ্গে জানতে পেরেছি, এক ফরাসি গবেষক হিউস্টনের কাছাকাছি স্থানে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এরপর বহিষ্কার করা হয়।’ ওই বিজ্ঞানী ফরাসি জাতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের (সিএনআরএ) পক্ষ থেকে সেখানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।

ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের গবেষণা নীতি নিয়ে ওই গবেষক তাঁর সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে ব্যক্তিগত মতামত বিনিময় করেছিলেন। তাঁর মোবাইলে সেগুলো পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

ব্যাপটিস্ট বলেন, ‘মতামতের স্বাধীনতা, বাক্‌স্বাধীনতা এবং গবেষণার স্বাধীনতা এমন ধরনের মূল্যবোধ আমরা গর্বের সঙ্গে অব্যাহত রাখব। যতক্ষণ পর্যন্ত ফরাসি গবেষকেরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁদের অধিকার রক্ষা করব।’

একটি কূটনৈতিক সূত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, ফ্রান্সের ওই গবেষককে ৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বাধা দেওয়া হয়েছিল।

এএফপিকে আরেকটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষগুলো ওই ফরাসি গবেষকের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণ্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক বার্তার’ অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে (এফবিআই) ওই ফরাসি গবেষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কার করার আগে তাঁর বিরুদ্ধে আনা ‘অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করা’ হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাৎক্ষণিক কিছু বলতে রাজি হয়নি।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ কমানোয় ট্রাম্প প্রশাসন ও ইলন মাস্কের খোলামেলা সমালোচনা করে থাকেন ফিলিপ ব্যাপটিস্ট।

এদিকে ওই ফরাসি বিজ্ঞানী ঠিক কোনো সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন, তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গত ১০-১৪ মার্চ হিউস্টনের কাছাকাছি জায়গায় ৫৬তম চন্দ্র ও গ্রহবিজ্ঞান সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত