তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশটির নানা শহরে প্রতিদিনই রাজপথে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ করছেন হাজারো মানুষ। গত রোববার পৌর সদর দপ্তরের বাইরে সারাচান চত্বরে এসব বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছোড়া হয়েছিল কাঁদানে গ্যাসের শেল। বাতাসে দীর্ঘ সময় সেই গন্ধ ছিল।

তুরস্কের প্রধান বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারের আগে ১৯ মার্চ আটক করা হয়। যেদিন এই জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়, সেই দিনই তাঁকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। তখন থেকে তুরস্কের প্রধান শহরগুলোতে প্রতিদিন বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা এখন দীর্ঘদিনের শাসক প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।

ইমামোগলুর সমর্থকেরা মনে করেন, তাঁকে গ্রেপ্তার এবং দায়িত্ব থেকে সরানোর মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা আরও পোক্ত করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

কিন্তু এরদোয়ান সরকার ও তাঁর সমর্থকদের দাবি, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁকে আটক–পরবর্তী গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২৮ বছর বয়সী সিনার ইলেরি নিজেকে ‘নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক’ মনে করেন। তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি কোনোভাবেই ইমামোগলুকে সমর্থন করি না। আমি তাঁকে ভোট দিইনি। কিন্তু আমি মনে করি, যা হয়েছে তা যেকোনো রাজনীতিবিদের প্রতি অন্যায়। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে যে আইনি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, তা সাদামাটা কোনো আইনি মামলা নয়, এটা রাজনৈতিক মামলা।’

তুরস্কের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলজুড়ে দুর্নীতির অভিযোগ পৌরসভাগুলোকে জর্জরিত করে তুলেছে। দেশটির পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দুর্নীতির এই চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি দমনের জন্য নজরদারি ও জবাবদিহির যে ব্যবস্থা ছিল, তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

অনেকে মনে করেন, সরকার যে এখন বিরোধীদলীয় নেতাদের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, তাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দৃশ্যপট ঢেলে সাজাতেই কর্তৃপক্ষ এসব কিছু করছে।

বিক্ষোভের সময় মোবাইলের ফ্ল্যাশ বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। ইস্তাম্বুলে, ২৫ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ব দ ত রস ক র এরদ য় ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র কি ইচ্ছা করেই পার্ল হারবার অরক্ষিত রেখেছিল

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট। সবাই ছুটির মেজাজে। কেউ কেউ তখন ধর্মীয় প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ওয়াহু দ্বীপের পার্ল হারবার। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এই পার্ল হারবারে ছিল ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি।

পার্ল হারবারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান থেকে একের পর টর্পেডো ছোড়া হচ্ছিল জাপানি যুদ্ধবিমান থেকে। সেই সঙ্গে চলে প্রচণ্ড বোমা হামলা ও মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ। হামলা চালানো হয় সেখানকার বিমানঘাঁটিতেও।

দুই ধাপে এ হামলায় অংশ নেয় জাপানের ৩৫৩টি যুদ্ধবিমান। দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১৬টি। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন বাহিনীর ১৮৮টি যুদ্ধবিমান। জাপানের এই হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৪০০ জন সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক। আহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০।

অতর্কিত আক্রমণে নৌঘাঁটির সদস্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। পাল্টা আক্রমণ করা দূরের কথা, আক্রমণ প্রতিহত করাই তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সকাল ১০টার মধ্যে জাপানি বাহিনী আক্রমণ শেষ করে জাহাজে ফিরে যাওয়ার আগেই মার্কিন বাহিনী তাদের ২৯টি বিমান ও পাঁচটি ছোট ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। মার্কিন পাল্টা হামলায় নিহত হন ৬৪ জাপানি সেনা।

আসলেই কি সেদিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা ঠেকাতে এতটাই অপ্রস্তুত ছিল? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কিছু। এ নিয়ে রয়েছে ইতিহাসবিদদের নানা মত ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যেমন, হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিমানবাহী রণতরির একটিও সেদিন পার্ল হারবারে ছিল না। সেগুলো অন্যত্র মোতায়েন ছিল। সাধারণত এই রণতরিগুলো পার্ল হারবারে থাকত। পরবর্তী সময়ে জাপানি বাহিনীকে এসব রণতরি দিয়েই কাবু করেছিল মার্কিন বাহিনী।

এ ছাড়া পার্ল হারবারে হামলায় জাপানের প্রস্তুতির বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করেছিল জাপানস্থ দেশটির দূতাবাস। ছিল গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তাও। কেন মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেছিল। তাহলে এর পেছনে কি ছিল অন্য কোনো হিসাব–নিকাশ।

উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি। ঘাঁটিটি বানানো হয় ১৯০৮ সালে। এরপর ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নৌঘাঁটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে স্থানান্তর করা হয়। কৌশলগত দিক দিয়ে এই ঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার মাইল ও জাপান থেকে প্রায় চার হাজার মাইলে দূরে অবস্থিত ছিল এই নৌঘাঁটি।ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই জাপান আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। চীনের সঙ্গে পরপর দুটি যুদ্ধজয়ের পর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধজয়ে জাপান আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে জাপান আধিপত্যবাদী নীতি নেয়। এরই অংশ হিসেবে ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের মধ্য দিয়ে জাপান তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।

জাপানের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে ফরাসি ইন্দোচীন দখল করার সময় জাপান জানত যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

আগ্রাসী আচরণের বিষয়ে জাপানকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে ফল না আসায় ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়। লৌহ আকরিক, স্ক্র্যাপ লোহা ও ইস্পাত রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। আশা ছিল, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা চীন ও ইন্দোচীনে জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অগ্রযাত্রা থামাতে পারে। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি।

১৯৪১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জাপানের সব সম্পদ জব্দ করে। গ্রেট ব্রিটেন, চীন ও নেদারল্যান্ডস জাপানে তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র কি ইচ্ছা করেই পার্ল হারবার অরক্ষিত রেখেছিল
  • গাজা যুদ্ধবিরতি ‘জটিল’ পর্যায়ে রয়েছে: কাতার
  • শ্যানেলের রানওয়েতে একঝাঁক নতুন মডেল, তাঁরাই কি পরবর্তী জিজি হাদিদ বা কাইলি জেনার?
  • শনিবার থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় আবার সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ