চাকরি হারালেও মাদ্রিদকেই ধন্যবাদ জানাবেন আনচেলত্তি
Published: 17th, April 2025 GMT
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে দুই লেগেই হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। এমিরেটসের পর এবার নিজেদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও পরাজয়ের তেতো স্বাদ নিতে হয় ১৫ বারের ইউরোপসেরা দলটিকে। এই ব্যর্থতার পর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ক্লাবটির প্রধান কোচ কার্লো আনচেলত্তি।
২০২৬ সাল পর্যন্ত রিয়ালের সঙ্গে চুক্তিতে থাকলেও চলতি মৌসুমে বেশ কয়েকবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন ৬৫ বছর বয়সী এই ইতালিয়ান কোচ। বিশেষ করে এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে বড় দুই ম্যাচে হারের পর সমালোচনার ঝড় আরও তীব্র হয়। এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আর্সেনালের কাছে হারের পর সেই চাপ যেন দ্বিগুণ হয়েছে।
এই ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে আনচেলত্তি জানান, যদি ক্লাব তাকে বরখাস্ত করে, তাহলেও তিনি কৃতজ্ঞতাভরেই বিদায় নেবেন। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ক্লাব চাইলে কোচ বদল করতে পারে। এটা হতে পারে এই মৌসুমেই, নাও হতে পারে। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। যদি আমি বিদায় নেই, তাহলে ক্লাবকে আমি শুধু ধন্যবাদ জানাব।’
রিয়ালের সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় আসতে পারে বলেও জানান অভিজ্ঞ এই কোচ। ‘এটা হতে পারে আগামীকাল, দশ দিন পরে কিংবা এক মাস বা এক বছরের মধ্যেও। আমি তখনও ক্লাবকে ধন্যবাদ জানাব। আমার চুক্তি রইলো কি না, সেটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই’, বলেন আনচেলত্তি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিলেও আনচেলত্তি এখনই সব আশা ছাড়ছেন না। তার বিশ্বাস, লা লিগা, কোপা দেল রে ও ক্লাব বিশ্বকাপে এখনও প্রতিযোগিতায় টিকে আছে তার দল। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছে। মানসিকতায় ঘাটতি ছিল না। কিন্তু আর্সেনাল খুব ভালোভাবেই রক্ষণ করেছে। জায়গা বের করতে আমাদের যথেষ্ট কষ্ট হয়েছে। ইনটেনসিটি ভালো থাকলেও সেটাই শেষ কথা নয়।’
এখন রিয়াল সমর্থকদের মনে একটাই প্রশ্ন, এই পারফরম্যান্সের পর ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ কী সিদ্ধান্ত নেন? রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যৎ কোচ হিসেবে এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে বায়ার লেভারকুসেনের কোচ জাবি আলোনসো ও লিভারপুলের সাবেক কোচ জার্গেন ক্লপের নাম।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছে
রোজা থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকায় গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন। ঈদুল আজহার সপ্তাহখানেক পার না হতেই চালের দাম ফের বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে অস্বস্তি ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরনভেদে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, এই সময়ে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। আর মোটা ও মাঝারি চালের কেজিতে বেড়েছে দুই-তিন টাকা।
দেশে ধান-চালের অন্যতম উৎপাদনস্থল নওগাঁ জেলা। সেখানকার চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার প্রথম আলোকে বলেন, জিরাশাইল ও কাটারিভোগ ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল ধানের দাম মণপ্রতি ১২৫-১৫০ টাকা ও কাটারিভোগ ধানের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে নওগাঁয় পাইকারিতে প্রতি কেজি চালে এক থেকে তিন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাধারণত সরবরাহ কম ও চাহিদা বেশি থাকলে চালের দাম বাড়ে। কিন্তু বাজারে প্রচুর চাল থাকার পরও হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে রেকর্ড ২ কোটি ১৪ লাখ টন বোরো ধান উৎপন্ন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশের বেশি বোরো ধান কাটা শেষ হলেও কিছু এলাকায় কৃষকেরা ধান কাটছেন।
বাজার বিশ্লেষক ও কৃষি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিলমালিকেরা ধান মজুত করে রেখেছেন এবং এখন কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন। তাঁরা ঈদের আগেই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে গুদামে মজুত করেছেন। এখন নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
সব সময় কৃষকের হাতে যখন ফসল থাকে, মিলমালিক ও মজুতদারেরা কম দামে তাঁদের কাছ থেকে ধান কেনেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার যখন কৃষকের হাত থেকে পণ্য চলে যায়, তখন তাঁরা দাম বাড়িয়ে দেন। সরকার মৌসুমের শুরুতে কৃষকের কাছ থেকে বেশি বেশি ধান চাল কিনলে মিলমালিক ও মজুতদারেরা সুবিধা করতে পারেন না। কৃষকও ভালো দাম পেতে পারেন। সরকার প্রতিবছর ধান ও চাল কেনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে, তা পূরণ হয় না নানা কারণে। এ ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে।
ইতিমধ্যে মিলমালিক ও আড়তদারদের কাছে যে চাল চলে গেছে, সেটা হয়তো সরকার ফেরত আনতে পারবে না। কিন্তু নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম দামে যে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এসব দোকান ও টিসিবির সামনে ক্রেতাদের লম্বা সারি দেখে ধারণা করা যায়, গরিব মানুষ অনেক কষ্টে আছে। তাদের কষ্টটা কোনোভাবে বাড়তে দেওয়া যাবে না। যেকোনো উপায়ে হোক চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতেই হবে। প্রয়োজনে সরকার বিদেশ থেকেও চাল আমদানি বাড়াতে পারে।