জ্ঞানের উর্বর ভুবন খুবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
Published: 20th, April 2025 GMT
শুধু পৃষ্ঠা উল্টানো নয়—একটি বই কখনো হয়ে ওঠে ভাবনার খোরাক, কখনো গবেষণার উপকরণ, আবার কখনো নিজেকে নতুনভাবে চিনে নেওয়ার এক দরজা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ঠিক তেমনই এক জায়গা, যেখানে পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জ্ঞান, মনন ও সৃজনশীলতার চর্চা প্রতিদিনই ঘটে চলেছে।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সময়ের চাহিদা অনুযায়ী ধীরে ধীরে আধুনিকায়নের পথে হাঁটছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাঠ্যবই, গবেষণাপত্র, জার্নাল, উপন্যাস, জীবনীগ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী এ গ্রন্থাগারে আসেন বলে জানিয়েছেন ব্যক্তিগত সহকারী কম্পিউটার অপারেটর আবদুর রহমান।
আরো পড়ুন:
কুয়েটের ভিসিকে অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
খুলনায় ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল বাস চলাচল
গ্রন্থাগারের দুটি প্রধান অংশ—রেফারেন্স সেকশন ও জেনারেল রিডিং সেকশন। উভয় সেকশনই শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। এছাড়াও রয়েছে ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা পড়ার আলাদা ব্যবস্থা, কম্পিউটার সুবিধাসহ অনলাইন ক্যাটালগিং সিস্টেম, যা বই খোঁজার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ আহমেদ বিপ্লব বলেন, “লাইব্রেরির পরিবেশ একদম মনোযোগ ধরে রাখার মতো। আমি নিয়মিত গল্পের বই পড়ি, পাশাপাশি একাডেমিক রেফারেন্স বইও ব্যবহার করি। এখানে সময় কাটানো মানে কেবল পড়াশোনা নয়, বরং চিন্তাকে শাণিত করা।”
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের ২৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুহিন রুমি বলেন, “আমি প্রতিদিন লাইব্রেরি ব্যবহার করি। গবেষণামূলক বই ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ে নিজের জ্ঞানভাণ্ডার বাড়াই। লাইব্রেরির পরিবেশ আমার জন্য মানসিক প্রশান্তির জায়গা। তবে স্মার্ট আইডি কার্ড, ই-বুক অ্যাকসেস ও পুরোনো বই রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।”
লাইব্রেরিতে রয়েছে বই ইস্যু ও রিটার্ন ব্যবস্থাপনা, ওয়াইফাই সংযোগ, কম্পিউটার ও প্রিন্টিং সেবা। তবে চাহিদা অনুযায়ী সব বিষয়ের বই মজুদ রাখা সম্ভব হয় না, যা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। অনেক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করতে চায়। ফলে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করাটা সময়ের দাবি।
সহকারী গ্রন্থাগারিক মো.
তিনি বলেন, “থিসিসপত্রের ডিজিটাল সংগ্রহশালা তৈরি, দলগত আলোচনার কক্ষ স্থাপন ও প্রয়োজনীয় বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি—এ উদ্যোগগুলো আমাদের গ্রন্থাগারকে গবেষণাবান্ধব ও আধুনিক করে তুলবে।”
ঢাকা/হাসিব/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে উৎসাহ বোনাসের পৃথক নীতিমালা, ক্ষুব্ধ বেসরকারির কর্মকর্তারা
সরকারি মালিকানাধীন ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর জন্য উৎসাহ বোনাস প্রদানের পৃথক নীতিমালা জারি করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় সরকারি ব্যাংকগুলো লোকসানে থাকলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কর্মীদের একটি উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিশেষ ছাড় নিয়ে মুনাফা করলেও কর্মীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যদিও এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হওয়ায় তাঁরা সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উৎসাহ বোনাস সাধারণত এক মাসের মূল বেতনের সমান হয়। দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত উৎসাহ বোনাস দিয়ে থাকে। অতীতে কোনো কোনো ব্যাংক একজন কর্মকর্তাকে দুই কোটি টাকার বেশি উৎসাহ বোনাস দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করে উৎসাহ বোনাস প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করে।
সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর জন্য নীতিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর জন্য নীতিমালা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণ ও অগ্রিমের ওপর প্রভিশন রেখে এবং বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভিশন সমন্বয় করে নিট মুনাফা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে বোনাসের পরিমাণ নির্ধারিত হবে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তিনটির বেশি উৎসাহ বোনাস পাবেন না। তবে বোনাস প্রাপ্য না হলেও মন্ত্রণালয় একটি বোনাস দেওয়ার দাবি বিবেচনা করতে পারবে। এ নির্দেশিকা ২০২৪ সালের উৎসাহ বোনাস প্রদানের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বেসরকারি ব্যাংক নিট মুনাফা না করলে কর্মীদের উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন ও নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ঘাটতি থাকলেও বোনাস দেওয়া যাবে না। কোনো বিলম্ব সুবিধা দেওয়া হলেও তা মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে বিলম্বিত ছাড় সুবিধা নেওয়া হলেও উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকের উৎসাহ বোনাস আটকে যাবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, কেবল প্রকৃত আয়-ব্যয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করলেই বোনাস দেওয়া যাবে। পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শ্রেণীকৃত ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং বিভিন্ন ব্যাংকিং সূচকের বাস্তব উন্নতি থাকতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের কয়কজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও মূলধনে বড় ধরনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তাদের উৎসাহ বোনাস দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। অথচ অনেক বেসরকারি ব্যাংক এসব ঘাটতি পরবর্তী সময়ে সমন্বয়ের শর্তে মুনাফা করে থাকে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না।
বর্তমানে অনেক ব্যাংক বছর শেষ হওয়ার পরদিনই উৎসাহ বোনাস দেয়। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ছাড় নিয়ে মুনাফা দেখিয়ে কর্মীদের বোনাস দিয়ে থাকে। নতুন নির্দেশনার ফলে বেসরকারি ব্যাংকে এসব বোনাস কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের কর্মীরাই শুধু উৎসাহ বোনাস পাবেন।