মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতাশাই সঙ্গী রিয়াল মাদ্রিদের। সুপারকোপার ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে হার দিয়ে যাত্রা শুরু, আর কোপা দেল রে’র ফাইনালেও বার্সার কাছে ৩-২ গোলে হেরে শিরোপা হাতছাড়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। সব মিলিয়ে কোচ কার্লো আনচেলত্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা।

দে লা কার্তুহা স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে উত্তপ্ত এল ক্লাসিকোয় বার্সেলোনা তাদের ৩২তম কোপা দেল রে শিরোপা নিশ্চিত করে। প্রতিযোগিতার ইতিহাসে কারও নেই এত শিরোপা।

ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তিকে নিয়ে জোর গুঞ্জন, পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল দলে যোগ দিতে পারেন তিনি। কোচ এবং ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) উভয় পক্ষই তাকে দলে নিতে আগ্রহী। তবে রিয়াল ছাড়ার প্রসঙ্গে এখনই কিছু স্পষ্ট করেননি আনচেলত্তি।

বার্সার কাছে হারের পর ৬৫ বছর বয়সী কোচ বলেন, ‘আমি রিয়াল মাদ্রিদেই থাকতে পারি, আবার ছাড়তেও পারি। দেখা যাক কী হয়। আজ এসব নিয়ে নয়, এ বিষয়ে কথা হবে আগামী সপ্তাহে।’

হার স্বত্বেও শিষ্যদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট আনচেলত্তি যোগ করেন, ‘এটি ভালো একটি ম্যাচ ছিল। আমরা পুরোপুরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্য ছিল আমাদের। ছেলেরা জয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তাই তাদের কোনো দোষ দিতে পারি না। তবে হারের কষ্ট অবশ্যই আছে।’

এখন রিয়ালের সামনে আছে কেবল লা লিগার লড়াই। ৫ ম্যাচ বাকি থাকতে বার্সেলোনার চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। আগামী ১১ মে মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওই ম্যাচেই অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে লা লিগার শিরোপার ভাগ্য।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইশরাকের নামাজের সময়সূচি ও বিধান

ইশরাকের নামাজ ইসলামে একটি নফল নামাজ, যা ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের কিছু সময় পরে আদায় করা হয়। এটি সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা (ঐচ্ছিক সুন্নত) হিসেবে বিবেচিত এবং এর ফজিলত অনেক।

মহানবী (সা.) এই নামাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশেষ পুরস্কার অর্জন করতে পারেন।

ইশরাকের নামাজের সময়সূচি

ইশরাকের নামাজের সময় ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় এবং সূর্যোদয়ের পর শেষ হয়। নিচে এর সময়সূচি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

শুরুর সময় : ইশরাকের নামাজ সূর্যোদয়ের প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে শুরু হয়, যখন সূর্য সম্পূর্ণভাবে দিগন্তের উপরে উঠে যায়। এই সময়টি সাধারণত ফজরের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। (ফিকহুস সুন্নাহ, সাইয়্যিদ সাবিক, পৃষ্ঠা: ১৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

ধরা যাক, ফজরের সময় ঢাকায় সকাল ৪:৩০ এ শুরু হয় এবং সূর্যোদয় ৫:৪৫ এ। তাহলে ইশরাকের নামাজ সকাল ৬:০০ থেকে শুরু করা যায়।

শেষ সময়: ইশরাকের নামাজ জোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে পড়তে হয়। সাধারণত সূর্যোদয়ের পর থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। তবে, সর্বোত্তম সময় হলো সূর্যোদয়ের ১৫-৩০ মিনিট পর, যখন সূর্যের আলো পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়ে। (আল-লুলু ওয়াল মারজান, পৃষ্ঠা: ১৮৬, দারুল ইফতা প্রকাশনী, ২০০৫)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫সময় নির্ধারণের নীতি

ইশরাকের সময় স্থানভেদে ভিন্ন হয়, কারণ সূর্যোদয়ের সময় ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য স্থানীয় নামাজের সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত। সূর্যোদয়ের ঠিক সময়ে নামাজ পড়া মাকরুহ, তাই সূর্য সম্পূর্ণভাবে ওঠার পর পড়া উচিত। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮১)

ইশরাকের নামাজের বিধান

রাকাত সংখ্যা: ইশরাকের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত পড়া হয়। তবে, ৪ বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়, কারণ এটি নফল নামাজ।

প্রকৃতি: এটি সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ ঐচ্ছিক সুন্নত। তবে নবীজি (সা.) এটি পড়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।

নিয়ত: ইশরাকের নামাজের নিয়ত করা হয়, যেমন: “আমি ইশরাকের দুই রাকাত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি।” (ফাতাওয়া নূর আলা আদ-দারব, শাইখ ইবনে উসাইমিন, পৃষ্ঠা: ২০৮, দারুল ইফতা প্রকাশনী, ১৯৯৮)

ইশরাকের নামাজের ফজিলত

ইশরাকের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে। আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে পড়ে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকে এবং তারপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ পড়ে, তার জন্য একটি হজ্জ ও উমরাহর সওয়াব রয়েছে।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস:: ৫৮৬)

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫ব্যবহারিক পরামর্শ

ফজরের পর প্রস্তুতি: ফজরের নামাজের পর মসজিদে বা বাড়িতে জিকির করে সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করা। এটি হাদিসে উল্লিখিত ফজিলত অর্জনের সুযোগ দেয়।

সময়ের পরিকল্পনা: সকালের ব্যস্ততার মধ্যে ইশরাকের জন্য ৫-১০ মিনিট সময় রাখা। সকাল ৬:০০-৬:৩০ এর মধ্যে এটি পড়া সুবিধাজনক।

শিশুদের শিক্ষা: পরিবারে শিশুদের ইশরাকের নামাজ শেখানো, যাতে তারা এই সুন্নাহর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে।

মানসিক প্রস্তুতি: ইশরাকের নামাজ পড়ার আগে আয়াতুল কুরসি বা সুরা ইখলাস পড়ে মনকে আধ্যাত্মিকভাবে প্রস্তুত করা।

সতর্কতা

মাকরুহ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়ের ঠিক সময়ে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা, কারণ এটি নিষিদ্ধ সময়। সূর্য সম্পূর্ণ উঠে যাওয়ার পর পড়া উচিত।

নিয়তের স্পষ্টতা: ইশরাকের নিয়ত স্পষ্টভাবে করা, যাতে এটি নফল হিসেবে গণ্য হয়।

নিয়মিততা: ইশরাকের নামাজ নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে সপ্তাহে কয়েকবার, যাতে সুন্নাহর পুরস্কার পাওয়া যায়। কারণ, আমল ধারাবাহিকভাবে করাও একটি সুন্নাত।

ইশরাকের নামাজের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন এবং এটি দিনের শুরুতে আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায়। হাদিসে উল্লেখ আছে, ইশরাকের নামাজ একটি হজ্জ ও উমরাহর সমান পুরস্কার বয়ে আনে। এছাড়া, এটি মানসিক শান্তি ও দিনের কাজে বরকত আনে। (আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ১৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ