প্রিয়দর্শিনী নায়িকা মৌসুমী— বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ক্যারিয়ারে অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করে কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করেছেন, বারবার তার নাম উঠে এসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ আসনে। অভিনয়, পরিচালনা, প্রযোজনা— তিন ক্ষেত্রেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। অথচ আজ তিনি আড়ালে, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে নিজের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছেন।

ওমর সানী জানালেন, দেশে ফেরা এখন মৌসুমীর জন্য সম্ভব নয়। মেয়ে ফাইজার পড়াশোনা আর অসুস্থ মায়ের সেবাই এখন তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। সানীর কথায়, “মেয়েকে একা রেখে দেশে ফেরার প্রশ্নই ওঠে না।”

শুধু পারিবারিক দায় নয়, চলচ্চিত্রের বদলে যাওয়া জগত নিয়েও রয়েছে তার নীরব হাহাকার। সানী বলেন, “মৌসুমীর অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছা আর নেই। সে আমাকে বলেছে, ‘সানি, আমি ভুলে যেতে চাই আমি মৌসুমী ছিলাম।’ এই কথাটা বুকের ভেতর গুমরে ওঠা কষ্টের মতো।”

আরো পড়ুন:

শ্রদ্ধার আকাশচুম্বী পারিশ্রমিক

শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমার স্টান্টম্যানের মৃত্যু

নতুন প্রজন্মের তারকাদের সৌজন্যবোধের অভাবেও তিক্ত করে তুলেছে এই গুণী দম্পতির মন। সানীর অভিমানী উচ্চারণ, “যারা আজ সিনেমা জগতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারা ভাবেন তারা মৌসুমীর চেয়েও বড় তারকা। এই ফারাক শুধু প্রজন্মের নয়, এ যেন মূল্যবোধেরও গভীর বিভাজন।”

তবু সুদূর বিদেশের মাটিতেও থেমে যাননি মৌসুমী। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড অ্যান্ড ফেস্টিভ্যালে’ একটি গানে পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে— বাংলাদেশ তার রক্তে, সংস্কৃতি ধারণ করেন।

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে শুরু হয়েছিল মৌসুমীর পথচলা। সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করে প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করেন। তারপর একের পর এক হিট সিনেমা, জাতীয় পুরস্কার আর দর্শকদের ভালোবাসায় গড়া ইতিহাস। অথচ আজ সেই নায়িকা নিজেই তার অতীতকে ভুলে যেতে চান। এ যেন শুধু মৌসুমীর নয়, রূপালি পর্দার এক গৌরবোজ্জ্বল যুগের নীরব অবসান।

অন্যদিকে ওমর সানী এখনো অভিনয় দুনিয়া পুরোপুরি ছাড়েননি। সময় ও সুযোগ পেলেই আবার ফিরতে চান প্রিয় পর্দায়। তবে এই মুহূর্তে যুক্ত হয়েছেন একটি রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রেখেছেন এই নায়ক।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

রংতুলিতে আঁকা এক সকাল

সবুজ সমারোহে সজ্জিত প্রকৃতিকন্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পরিবার থেকে দূরে থাকায় জীবনটা কখনও কখনও নিঃসঙ্গ আর নিরস মনে হতে শুরু করে। সপ্তাহজুড়ে সারাদিন ক্লাস প্র‍্যাক্টিক্যাল করে সবাই যেন ক্লান্ত! তবে এই বাকৃবিরই কিছু মনোমুগ্ধকর রীতিনীতি যেন সে জীবনে মায়াবী রং মিশিয়ে দিতে প্রস্তুত।   প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতেই  ক্লাস করার সুবিধার্থে কয়েকটি প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপে ভাগ করা হয়। তেমনি কৃষি অনুষদের সেকশন ‘সি’-তে রয়েছে ৩টি গ্রুপ- ৭, ৮ এবং ৯। প্রতিবছরই প্র্যাকটিক্যাল গ্রুপ ৭ থেকে নবাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় এক গ্রুপ মিটআপ। গত বছর ৬১ ব্যাচের পক্ষ থেকে এমনই এক উষ্ণ স্বাগতম পেয়েছিল বর্তমান ৬২ ব্যাচ, যার কথা ভুলবার নয়। তখন ৬১ ব্যাচের গ্রুপ রিপ্রেজেন্টেটিভ সৌরভ  ভাই বলেছিলেন,  ‘আমরা যেমন তোমাদের জন্য আয়োজন করেছি সামনের বছর তোমরাও করবে। আয়োজনে কোনো কমতি করবে না।’ সিনিয়রদের সঙ্গে করা সেই অঙ্গীকার আর নিজেদের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকে ৬২ ব্যাচ এই বছর ১৯ এপ্রিল আয়োজন করে ৬৩ ব্যাচের সঙ্গে গ্রুপ মিটআপ। এটি একটি একবেলার আয়োজন হলেও এর পেছনে অবদান ছিল অনেকের। একবেলার ওই আয়োজনই আল্পনা এঁকে রেখেছে সাদা পায়রার মতো শুভ্র স্মৃতির। 
মিটআপ শুরুর আগেই ৬২ ব্যাচের গ্রুপ ৭-এর রিপ্রেজেন্টেটিভ সবাইকে অবহিত করেন। এরপর আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন আবদুল্লাহ আল মুকিত। এবার শুরু হলো দায়িত্ব বণ্টনের পালা। মুকিত নিজে কাগজ এনে সবার কাছ থেকে জুনিয়রদের জন্য উপদেশ ও শুভেচ্ছাবার্তা লেখার ব্যবস্থা করে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন ১৯ এপ্রিল। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই ৬২ ব্যাচের সবাই পৌঁছে যায় টিএসসি লেকভিউ ভেন্যুতে। শুরু হয় বেলুন ফোলানো, ফটোফ্রেম টানানো ও খেলাধুলার প্রস্তুতি। জুনিয়ররাও সকাল ১০টার কিছু আগেই পৌঁছায়। জুনিয়ররা সবাই অবাক কণ্ঠে বলে ওঠে, ‘আমাদের জন্য এতকিছু?’ গ্রুপ ৬২’র উষ্ণ অভ্যর্থনায় জড়তা কেটে সাবলীল হতে থাকে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্ক। এক এক করে সবাই বসে টিএসসির ছাতার নিচে। শুরু হয় পরিচিতি পর্ব। পরিচয় পর্বে বোঝা যায় পৃথিবী আসলেই অনেক ছোট। কাকতালীয়ভাবে একেকজনের এলাকা, কলেজ আরও কতভাবে যে মিল পাওয়া যায়! আর গড়ে উঠতে থাকে সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধন।
পরিচিতি শেষে জুনিয়রদের গোলাপ, চকলেট এবং একটি উপদেশবাণী দিয়ে বরণ করে নেয় সিনিয়ররা। এরপর শুরু হয় ৬৩ ব্যাচদের নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন।  
খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।  এরপর শুরু হয় আলোচনা ও আড্ডা। জুনিয়রদের একাডেমিক প্রশ্নের উত্তর দেয় সিনিয়ররা। ভাইভা সংক্রান্ত বিষয়, পড়াশোনার পদ্ধতি, হলে বা ক্যাম্পাসে সমস্যা হলে কী করতে হবে সব নিয়েই খোলামেলা কথা হয়।
৬২ ব্যাচের  মুকিত বলেন, অনেক কষ্ট করে আয়োজনটা করেছি, আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। ’৬৩ ব্যাচের তানভীর বলেন, ক্যাম্পাসে এসে সিনিয়ররা এত সুন্দর করে স্বাগত জানাবে, এটা ভাবতেও পারিনি। আমরা কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি। তানভীরের এই কথায় যেন 
এক বছর আগের নিজেকেই দেখতে পায় ৬২ ব্যাচ। ঠিক যেভাবে ৬১ ব্যাচ এক বছর আগে বলেছিল, ঠিক সেভাবেই ৬২ ব্যাচের সিনিয়ররা বলে, ‘পরের বছর যখন তোমাদের জুনিয়র 
আসবে তোমরাও এভাবে একটা মিটআপ 
করবে, কেমন?’ v

সম্পর্কিত নিবন্ধ