স্ক্যাবিস দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে
Published: 6th, May 2025 GMT
শরীরে অজানা কারণে ফুসকুড়ি উঠে এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে স্ক্যাবিস হয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। চিকিৎসকেরা বলছেন, স্ক্যাবিসের সঠিক চিকিৎসা না হলে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন চুলকানির ফলে হতে পারে ঘা। পরে ধীরে ধীরে এই ঘা সংক্রমিত হয়ে যায়।
ডা. আনজিরুন নাহার আসমা, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীল প্রধান, চর্ম ও যৌন রোগ পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বলেন, ‘‘মেয়েদের ক্ষেত্রে নিপলের চারপাশে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গলায় এবং এর চারপাশে ছোট ছোট গুটি গুটি হতে পারে। এবং যেটিতে অনেক চুলকানি থাকে। আবার হাতের আঙুলে হতে পারে। সাধারণত দেখা যায়, যে রোগী রয়েছেন তার আশপাশে যারা থাকে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা পারমিথ্রিন, প্রোটামিটেন, সালফার ক্রিম জাতীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। রোগীকে বলি এই ওষুধ থুতনি থেকে শুরু করে একেবারে পা পর্যন্ত লাগাতে হবে। এক ইঞ্চি জায়গা যেন শরীরের বাদ না যায়। সারারাত ওষুধ লাগিয়ে রেখে সকালে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করে ফেলতে হবে। এবং রোগীর ব্যবহৃত কাথাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কভার সিদ্ধ করে ধুয়ে নিতে হবে।’’
আনজিরুন নাহান আসমা আরও বলেন, ‘‘ পুরো শরীরে একবার ওষুধ লাগানোর সাতদিন পরে একই পদ্ধতিতে আবার ওষুধ লাগাতে হবে এবং বিছানাপত্র, কাপড় চোপড় পরিষ্কার করতে হবে।’’
আরো পড়ুন:
‘মেডিকেল ভিসা’ প্রক্রিয়া সহজ করলো চীন
প্রস্রাবের সঙ্গে ফেনা বের হওয়া মানেই কি কিডনী রোগ?
কোনো কোনো ক্ষেত্রে, স্ক্যাবিসের চিকিৎসায় প্রোটামিটেন এবং সালফার ক্রিম টানা ৫ দিন ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে। সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে, আইভারমেকটিন নামক মুখে খাওয়ার ওষুধ সপ্তাহে একটা করে চার সপ্তাহ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়
১.
২.নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করতে হবে।
৩.স্ক্যাবিস সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. স্ক্যাবিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৫. ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সতকর্তা মেনে চলতে হবে। এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে।
উল্লেখ্য, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না।
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনেক সফল উদ্যোক্তার গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের নাম
সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে শুধু পুঁজি বা পরিকল্পনা নয়, প্রয়োজন হয় অদম্য সাহস, দূরদৃষ্টি আর কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিকূল সময়েও সাহসের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকতে হয়। সফল উদ্যোক্তার এই সংজ্ঞা যদি খুঁজতে হয়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের শফিকুল ইসলাম সেলিম হতে পারেন উজ্জ্বল উদাহরণ। নিষ্ঠা, দূরদৃষ্টি ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই প্রতিষ্ঠান আজ দেশের বৈদ্যুতিক তারশিল্পের অন্যতম নির্ভরযোগ্য নাম।
শফিকুল ইসলামের পথচলাটা শুরু হয়েছিল অনেকটা শূন্য থেকে। সময়টা ১৯৯৪ সাল। পকেটে ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। সীমিত মূলধন ও স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া নেন একটি ছোট কারখানা। শুরু করেন বৈদ্যুতিক তার তৈরির কাজ। ওই সময় তিনি মাত্র ১৬ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করতেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২১ সালে শফিকুল ইসলাম ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। সেই থেকে তাঁর ছোট ছোট প্রতিটি পদক্ষেপে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক আর্থিক পরামর্শক ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের পাগলায় প্রায় ২০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রির আধুনিক কারখানা। সেখানে এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন বছরে ৩০০ ধরনের বৈদ্যুতিক তার উৎপাদন করে এবং প্রায় ১০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে পরিবেশগত নীতিমালা বাস্তবায়ন অনেক সময় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রেও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সহায়তায় ইস্টার্ন কেবল ইএসডিডি (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডিউ ডিলিজেন্স) রেটিং ‘লো’ বা নিম্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের টেকসই অর্থায়ন নীতিমালার আওতায় সাসটেইনেবল এমএসএমই শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান।
কেরানীগঞ্জের শুঁটকিরটেক গ্রামের তরুণ মো. শামীম হোসেনের ব্যবসা শুরু হয়েছিল বিরিয়ানি বা তেহারি বিক্রির মাধ্যমে। সেখানে ওয়ান টাইমন প্লেটের প্রচুর চাহিদা ছিল। এতে খরচ যেমন বেশি হতো প্রচুর, তেমনি মান নিয়েও ছিল অসন্তোষ। তাই ২০০৯ সালে ছোট পরিসরে ওয়ানটাইম প্লেট, বাটি, কাপ, গ্লাস ও বক্স তৈরির কাজ শুরু করেন শামীম। সময়ের সঙ্গে উৎপাদনসক্ষমতা বাড়াতে দরকার হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পেশাদার ব্যবস্থাপনা, যেখানে পাশে দাঁড়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। সহজ শর্তে এসএমই ঋণ নিয়ে তাঁর উদ্যোগ পায় নতুন গতি ও আকার। সেই ছোট উদ্যোগই পরবর্তী সময় রূপ নেয় ‘ডেরিক বাংলাদেশ’ নামে, যা এখন পরিবেশবান্ধব ওয়ানটাইম কিচেনসামগ্রী তৈরির একটি পরিচিত ব্র্যান্ড।
আবার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী গ্রামের সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান মো. জুয়েল রানার কথা ধরা যাক। জুয়েল রানা মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে অন্যের মতো চাকরি বা বিদেশে পাড়ি না দিয়ে ঠিক করলেন নিজেই কিছু করবেন। পৈতৃক জমি আর একটি পুরোনো গরুর খামারকে কেন্দ্র করে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে ধীরে ধীরে তিনি গড়ে তোলেন ‘গ্রাম বাংলা অ্যাগ্রো ফার্ম’।
প্রথমে পাঁচ থেকে ছয়টি দেশি গরু দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও বর্তমানে বছরে ২০০ গরু বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর খামারে রয়েছে ৬০টির বেশি দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভি। ডেইরি খাতের সফলতার পর তিনি পোলট্রি ও মৎস্য খাতের ব্যবসাতেও মনোযোগী হন। বর্তমানে তাঁর খামারে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মুরগির ডিম উৎপাদিত হয়। এ ছাড়া প্রায় ১০ একর জায়গায় মাছ চাষ করছেন তিনি। তাতে সব মিলিয়ে বছরে তাঁর আয় হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা।
শফিকুল ইসলামের ইস্টার্ন কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ কিংবা জুয়েল রানার গ্রাম বাংলা এগ্রো ফার্মের মতো এ রকম অসংখ্য সফল ও টেকসই উদ্যোগের গল্পে জড়িয়ে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নাম। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এভাবেই বিভিন্ন উদ্যোক্তার স্বপ্নের সারথি হয়ে কাজ করে চলেছে। হাজারো উদ্যোক্তার স্বপ্ন যখন পথে হাঁটতে শেখে, তখন পাশে থাকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নির্ভরতার হাত। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শুধু ঋণ দেয় না, এই ব্যাংক স্বপ্নে বিনিয়োগ করে।
ফরহাদ আহমেদ খান
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব এসএমই বিবিডি, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক