বিএসসি ডিগ্রিধারী কৃষিবিদদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার দাবিতে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সামনে থেকে কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।

পরে মিছিলটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান নেন তারা। প্রায় দেড়ঘন্টা পর রেললাইন ছেড়ে দিলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

আরো পড়ুন:

সিলেটে এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করে চা-শ্রমিকদের বিক্ষোভ

শাহবাগের অবরোধ প্রত্যাহার, যানচলাচল স্বাভাবিক

এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং এসব দাবি না মানা হলে সারা বাংলায় কৃষিবিদ ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। 

বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

বেলাল হোসেন বলেন, “ডিপ্লোমাধারীরা যদি একটি শরীরের হাত হয়, তাহলে কৃষিবিদরা সেই শরীরের মস্তিষ্ক। কৃষিবিদরা না থাকলে দেশের কৃষি সেক্টর ডিপ্লোমাধারীদের প্যারালাইজড হয়ে যাবে। কৃষিবিদদের যথার্থ মর্যাদা ছাড়া কৃষি সেক্টরকে কখনোই সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। তাই ইন্টেরিম সরকারকে বলব কৃষিবিদদের নিয়ে ভাবুন।”

একই অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইরফান ইউসুফ শিহাব বলেন, “মামার বাড়ির আবদারের মতো শুধু চাকরি চাইলেই হবে না, কাজ করে মেধা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আপনারা যেদিন যথাযথ শিক্ষা, যোগ্যতা, দক্ষতা নিয়ে আমাদের সমমানের হয়ে নবম গ্রেড নিতে আসবেন, সেদিনই আমরা আমাদের চাকরি ক্ষেত্রে জায়গা দিব। কৃষিবিদ আমাদের ট্যাগ, ঐক্য, নিষ্ঠা, মেধা, মনন। এর দিকে আপনারা আঙ্গুল তুললে পুরো বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের অবস্থান বুঝিয়ে দেবে।”

চতুর্থ বর্ষের সম্রাট আল হাসান বলেন, “সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তারা নিয়োগ চান। এখানে পদের মধ্যেই বিজ্ঞান কথাটা আছে। আমরা সবাই জানি, ডিপ্লোমা পড়ার জন্য বিজ্ঞান বিভাগে পড়া আবশ্যক নয়। তাহলে তাদের এ দাবি কতটুকু যৌক্তিক?”

অবরোধ শেষে দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার কাছে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে উপাচার্য বিএসসি কৃষিবিদদের পেশাগত অধিকার রক্ষা ও বৈষম্য নিরসনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

উপাচার্য বলেন, “ডিপ্লোমাধারীদের দাবির বিপরীতে শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। এসব দাবি যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। কৃষিবিদদের অস্তিত্ব রক্ষায় যেকোনো যৌক্তিক দাবিতে আমি পাশে আছি।”

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বিএডিসি ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দশম গ্রেডের পদ (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ উপসহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) বিএসসি কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে; ডিএইসহ অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতভাবে নবম ও অন্যান্য গ্রেডে পদোন্নতি এবং কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস করতে হবে; নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে নবম গ্রেডে (বিএডিসি কোটাভিত্তিক) পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না।

অন্য দাবিগুলো হলো- দশম গ্রেডের পদগুলো গেজেটের আওতার বাইরে রেখে পৃথক পদসোপান বা প্রচলিত কাঠামো বজায় রাখতে হবে; কৃষিবিষয়ক ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না—এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে; কৃষি বা কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ব্যতীত কেউ ‘কৃষিবিদ’ পদবী ব্যবহার করতে পারবে না, এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) অধীনেই রাখতে হবে।


 

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ইসির মতবিনিময়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা

বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী নেওয়াজ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে বরিশালে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ কে এম আলী নেওয়াজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ইসির সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীদের ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও এর চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন। এতে মাঠপর্যায়ের শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তারাও যোগ দেন।

বুধবার দুই দিনের সফরে ইউএনডিপি প্রতিনিধি, সুইডেন, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার বরিশালে আসেন। তাঁরা সফরের প্রথম দিন ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ, তা মোকাবিলায় কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়। আজ বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সভা হয়। তবে বৈঠক শেষে কোনো রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শেষে তাঁরা বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘বিদেশিরা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আইন সংস্কার ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা প্রসঙ্গও বৈঠকে আলোচনায় স্থান পায়। আমরা কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করে বলেছি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

ভবিষ্যতে নির্বাচন একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, এমন প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রদূতেরা। নির্বাচন কমিশনের এই অগ্রযাত্রায় তাঁরা শামিল হয়ে পাশাপাশি থেকে কাজ করার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান এ কে এম আলী নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনের জন্য একটি মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নির্বাচনটাকে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে।’

ইসির অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা বিশেষ করে জানতে চেয়েছেন, নারী ভোটারদের কীভাবে বেশি অংশগ্রহণ করানো যায়, সে বিষয়ে আমরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা তাঁদের বলেছি, এ বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর। তাঁরা আমাদের কাছে নির্বাচনের খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাঁরা আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়েছেন। ভবিষ্যতে এই নির্বাচন একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন।’

দুই দিনের সফরে কূটনীতিকেরা প্রথম দিনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও বরিশালের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ