৩এফ৪ডি সেচ পদ্ধতিতে চালে আর্সেনিক কমবে ৪০ শতাংশ
Published: 6th, May 2025 GMT
ধান চাষে আর্সেনিক দূষণ ও পানির অপচয় রোধে কার্যকর সমাধান উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
‘তিনদিন ভেজানো, চারদিন শুকনো’ (৩এফ৪ডি) পদ্ধতিতে পরিবর্তিত পর্যায়ক্রমিক সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করে চালের অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। একই সঙ্গে সেচের পানির ব্যবহারও ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয়ী করা যাবে ফলন অক্ষুণ্ন রেখেই।
এ দুটি বড় চ্যালেঞ্জের গবেষণাটি পরিচালনা করেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.
জাইকার সহায়তায় ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩ বছর ধরে ধারাবাহিক মাঠ গবেষণার মাধ্যমে তারা এ ফলাফল তুলে ধরেন।
গবেষকরা জানান, বাংলাদেশের অনেক এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দ্বারা দূষিত। অবিরাম জলাবদ্ধতার সময় ধান চাষ করলে চালের মধ্যে এই বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যেতে পারে। অবিরাম জলাবদ্ধতার মাধ্যমে ধান চাষ করলে মাটিতে রিডক্স অবস্থা নিম্ন হয়, যা গাছের মাধ্যমে চালের দানায় আর্সেনিক শোষণ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে চারদিন নিষ্কাশনের সময় মাটির আর্দ্রতা ৫ শতাংশ কমে যায় ও রিডক্স পোটেনশিয়াল বেড়ে ১৫০–৫০০ মিলিভোল্ট পর্যন্ত পৌঁছে। এতে গঠিত হয় একটি অক্সিডেটিভ পরিবেশ। এর ফলে গাছ তুলনামূলকভাবে কম আর্সেনিক শোষণ করে।
প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতার তুলনায় ৩এফ৪ডি পদ্ধতিতে সেচের মাধ্যমে পানির ব্যবহার ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব হয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এটি ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনে, যা পানি সংকটে থাকা অঞ্চলের জন্য একটি টেকসই সমাধান হতে পারে বলে জানান অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম।
অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চালে আর্সেনিক কমলেও ধানের ফলন অপরিবর্তিত থেকেছে। অর্থাৎ কৃষকের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে নিরাপদ চাল উৎপাদন করা যাবে, যা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (৬ মে) বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান মাঠ গবেষণাগারে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি মাঠ দিবস।
এতে প্রধান গবেষক মো. রফিকুল ইসলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সালমা লাইজু, বাকৃবির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. মোশাররফ উদ্দীন ভূঁঞা প্রমুখ।
গবেষণা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু জাফর মো. মোসলেহ উদ্দিন, অধ্যাপক মো. এনামুল হক, উপ-প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন সুমন, বিভাগীয় প্রধান মো. গোলাম কিবরিয়া, জাইকার প্রতিনিধি রিউচি কাটসুকি ও পিএইচডি ফেলো মো. সোহেল রানা।
এ সময় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু বলেন, “নতুন প্রযুক্তি মাঠে জনপ্রিয় করতে হলে তা কৃষকের জন্য সহজবোধ্য ও ঝামেলাবিহীন হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তিই কৃষকের কাছে পৌঁছায় না। এজন্য গবেষণা ও সম্প্রসারণকে একসঙ্গে এগোতে হবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়েই জ্যোতিদের বিশ্বকাপের মিশন
আইসিসি উইমেনস ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার অংশ নিতে মঙ্গলবার ঢাকা ছাড়বে নিগার সুলতানার দল। আগামী ২ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মূল লড়াই।
বিশ্বকাপের মিশনে ভালো করতে মরিয়া বাংলাদেশ। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তে বাংলাদেশ দলের সঙ্গী প্রস্তুতির ঘাটতি। কেননা পাঁচ মাস বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। কেবল নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতিতে কি আর বিশ্বকাপে ভালো করা সম্ভব? সেই প্রশ্নটা উঠতেই আশা দিয়ে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয়
বিশ্বকাপে রেকর্ড সেঞ্চুরিতে ফের এক নম্বরে হিলি
বিসিবিতে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে কোচ সরোয়ার ইমরান ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি পাশাপাশি বসে প্রায় একই কথা বললেন।
সারোয়ার ইমরান বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ম্যাচ ধরে খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও আমরা... কাউকে বড় করে দেখছি না। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব।”
লম্বা সময় ধরে যে ক্যাম্প করেছেন জ্যোতিরা সেটিকেই ভরসা মানছেন অধিনায়ক, “অবশ্যই (বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো) ..আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সবগুলো আমরা পেয়েছি। এখনো পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। চেষ্টা তো করা হয়েছে। তবে যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”
মূল মঞ্চে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কায় দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে৷ দুটি ম্যাচে ভালো কিছুর আশায় সরোয়ার ইমরান, “প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। তবু অস্ট্রেলিয়া বা আরো দু-একটা দলের যে স্ট্যান্ডার্ড, তাদেরকে আমরা নিজেদের চেয়ে অনেক ওপরে দেখব না। আমাদের মতো ভাবব এবং জেতার জন্যই খেলব প্রতিটি ম্যাচ। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরো কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।”
আগামী ২ অক্টোবর বাংলাদেশের মিশন শুরু হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এরপর ভারত সফর করবে নারীরা। ৭ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। খেলা হবে গৌহাটিতে। ১০ অক্টোবর একই মাঠে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড।
১৩ অক্টোবর বিশাখাপত্তনমে বাংলাদেশ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। একই মাঠে ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশের খেলা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। রাউন্ড রবিন লিগের শেষ দুই ম্যাচ হবে মুম্বাইয়ে। ২০ অক্টোবর শ্রীলঙ্কা ও ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।
মূল প্রতিযোগিতায় মাঠে নামার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কায় ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। একদিন পর বাংলাদেশ খেলবে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: নিগার সুলতানা জ্যোতি (অধিনায়ক), নাহিদা আক্তার (সহ অধিনায়ক), ফারজানা হক, রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক, শারমিন আক্তার সুপ্তা, সোবহানা মোস্তারি, রিতু মনি, স্বর্ণা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, রায়েয়া খান, মারুফা আক্তার, ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা, সানজিদা আক্তার মেঘলা, নিশিতা আক্তার নিশি ও সুমাইয়া আক্তার।
ঢাকা/ইয়াসিন/এসবি