পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে বরিশালের চরমোনাই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিমের বাড়িতে গিয়ে তার দলে যোগ দেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কলাপাড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেডএম কাওসার। 

অধ্যাপক মো.

মোস্তাফিজুর রহমান দল ত্যাগ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির নেতারা। তারা তাকে স্বার্থের প্রতি দুর্বল মানুষ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কলাপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মো. ফারুক বলেন, “তার (অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান) বরাবরই স্বার্থের প্রতি দুর্বলতা ছিল। শুরু থেকেই তার কথা ছিল, দলে পোস্ট পজিশন পেলে থাকবেন, না পেলে চলে যাবেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন আমি সবার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি, দল আমার কাছে কিছু না। সব সময় স্বার্থই তার কাছে বড় ছিল।” 

আরো পড়ুন:

শারীরিক ও মানসিকভাবে খালেদা জিয়া অনেকটাই সুস্থ: জাহিদ হোসেন

পঞ্চগড়ের সাবেক ৩ এমপি ও ডিসি-এসপির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

তিনি আরো বলেন, “গত ২৮ মার্চ কলাপাড়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় তিনি বলেছিলেন, বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। তারপরও তিনি নিজ স্বার্থের জন্য দল ত্যাগ করেছেন। আমি মনে করি, দল থেকে তার চলে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না।” 

কলাপাড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জুয়েল সিকদার বলেন, “অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান যখন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তখনই শুধু ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। এছাড়া, তিনি কখনো ধীনের শীষ প্রতীকে ভোট দেননি। বিএনপির জন্য তিনি অনেক কিছুই পেয়েছেন, কিন্তু তিনি সব সময় নিজের স্বার্থই দেখেছেন। তার চলে যাওয়ায় দলের কোনো সমস্য হবে না ইনশাআল্লাহ।”

কলাপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী রুহুল আমিন বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটা একেবারেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি কোনো সময়ই দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি। তার কাছে তার স্বার্থই ছিল সবচেয়ে বড়। তিনি চলে যাওয়ায় আমাদের দলের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

দল ছাড়া প্রসঙ্গ অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি মনে করি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সঠিক রাজনীতি করছে। জীবনের শেষ বয়সে এসে মানুষের জন্য কিছু করে যেতে পারি এজন্যই আমি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছি। প্রার্থী হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের কাছে আমি নোমিনেশন (মনোনয়ন) চাইব। দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে নির্বাচন করব।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কলাপাড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেড এম কাওসার বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য ফরম পূরণ করে এবং দলের আমির মুফতি সৈয়দ ফজলুল করিমের হাতে হাত রেখে তিনি (মো. মোস্তাফিজুর রহমান) যোগদান করেছেন। ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং ইসলামের পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে তার এ সিদ্ধান্ত।” 

অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৮১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি তরুণদের নিয়ে কলাপাড়া বিএনপিকে উজ্জীবিত করেন এবং উপজেলায় দলটির শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেন। ১৯৮৮ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। 

১৯৯০ সালে অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে অংশগ্রহণ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিট না পেয়ে ঘড়ি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে পরাজিত হন। এসময় বিএনপির হাই কমান্ড তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। 

২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীন আমলে নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি ফের বিএনপিতে ফিরে আসেন। তবে দলে তার পূর্বের অবস্থান আর ফিরে পাননি। ২০০৮ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। নির্বাচনে জিতে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে দীর্ঘদিন তিনি বিএনপিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। সর্বশেষ ২০২৪ সাল থেকে উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ২ নম্বর সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ম স ত ফ জ র রহম ন ব এনপ র স ব এনপ ত কল প ড় কর ছ ন ইসল ম সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট

শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।

একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।

পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবার ঐতিহ্য ধরে রাজনীতিতে এসে ফরিদপুরে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন দুই নারী
  • সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
  • ‘হুক্কা’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জাগপা