ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে বিত্তশালী ও সুবিধাবাদীর লাভ বেশি
Published: 6th, May 2025 GMT
সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচন নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল সমকালে প্রকাশিত নিবন্ধের ওপর মতামত দিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই একমত, একটি আসনে একই সঙ্গে সাধারণ ও সংরক্ষিত সংসদ সদস্য থাকলে দ্বৈত প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হবে; যার প্রভাব ভয়াবহ হতে বাধ্য। সে কারণে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেছে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এই ব্যবস্থা চালু হলে অদূর ভবিষ্যতে এক ঝাঁক নারী নেত্রীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে এবং তারা পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন।
কমিশন বর্তমান এক কক্ষের পরিবর্তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ চালুর সুপারিশ করেছে। বর্তমান ব্যবস্থার মতো প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষ। এর মধ্যে ১০০ জন নারী ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সংরক্ষিত আসন থেকে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। আইন পাসের ক্ষমতা থাকবে নিম্নকক্ষের কাছে, মেয়াদ চার বছর।
ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি কী? এ পদ্ধতিতে মোট ৪০০ আসনের মধ্যে ‘লটারি অথবা অন্য কোনো পদ্ধতি’তে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এসব আসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। চাইলে যে কোনো নারী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। এ ছাড়া পুরুষদের সঙ্গে সাধারণ আসনে নির্বাচন করতে পারবেন নারীরা। পরের নির্বাচনে ওই ১০০ আসন বাদে বাকি ৩০০ আসনের মধ্য থেকে নতুন করে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করা হবে। এভাবে চার মেয়াদে দেশের সব আসনে নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। কমিশন মনে করে, এভাবে চলতে থাকলে একসময় নারীরা পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়ে উঠবেন।
তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তাবটি ভালো। নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড.
রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে স্বপ্ন থাকে, তিনি এক সময় এমপি হবেন। সে জন্য ১০-১৫ বছর ধরে এলাকায় অবস্থান তৈরির চেষ্টা করেন। হঠাৎ সেই আসনটি নারীর জন্য সংরক্ষিত হয়ে গেলে তিনি মানবেন? কোনো দলের প্রধানের নির্বাচনী আসনটি রাতারাতি সংরক্ষিত নারী আসন হিসেবে ঘোষণা করা হলে তিনি কি মানবেন?
দেখা যাবে, কোনো আসন সংরক্ষিত ঘোষণা হওয়ার পর সেখানকার পুরুষ নেতা তাঁর মা, স্ত্রী বা মেয়েকে প্রার্থী করে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়বেন। মা জায়েদা খাতুনকে মেয়র বানিয়ে নিজে সব কাজ করতেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালীর হাতিয়া আসনের মোহাম্মদ আলী নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ায় তাঁর স্ত্রী সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
এমনকি নারীর প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। নির্বাচনের পর পুরুষ নেতারা ওই আসনের নারী প্রার্থীদের মামলা, হামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করতে পারেন, যাতে ভবিষ্যতে কোনো নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাহস না করেন। এমন পরিস্থিতিতে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে, না পিছিয়ে যাবে?
ঢাকার কথাই ধরা যাক। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকা জেলার মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৫, যার মধ্যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন হবে পাঁচটি। এই পাঁচ আসনে কি স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি করা নারী মনোনয়ন পাবেন? মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারবেন? দুই-একটি বাদে বাকি আসনে তৃণমূলে রাজনীতি করা নারীদের সংসদ নির্বাচন করার মতো আর্থিক ও সাংগঠনিক সক্ষমতাই নেই। এ অবস্থার সুযোগ নিতে পারেন টাকাওয়ালারা। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন কিনতে পারেন অর্থবান পুরুষের স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, কন্যা বা নিকটাত্মীয়। যেহেতু সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে, তারা আইন প্রণয়নে ব্যাপক প্রভাব খাটাতে পারেন ওই সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে।
দেখা যাবে, ঢাকায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী পরিবারের নারীরা নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে টাকা ছিটাতে শুরু করবেন। তাদের হয়ে কাজ করবেন পুরুষ টাউটরা। এদের টাকার কাছে স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি করা নারীরা অসহায় হয়ে যাবেন। এক পর্যায়ে তারাও টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাবেন। ফলে স্থানীয় রাজনীতি করবেন তৃণমূলের দরিদ্র নারীরা। আর সংসদ সদস্য হবেন ঢাকার এলিটরা।
২০০৯ সালে সংরক্ষিত আসন থেকে এমপি হওয়ার পর ২০১৪ এবং ’১৮ সালে মানিকগঞ্জের সিংগাইর আসন থেকে এমপি হন গায়িকা মমতাজ বেগম। তিনি সেখানে হাসপাতাল বানিয়েছেন। মানুষের সেবা করেছেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে মেনে নেননি; ২০২৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনেও হেরে গেছেন স্থানীয় এক পুরুষ নেতার কাছে। সরকার পতনের পর থেকে তিনি লাপাত্তা।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হয়ে এলাকায় কাজ করেছেন, সংসদে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেও পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি হবিগঞ্জ-১ আসনের আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। প্রচুর পরিশ্রম করে মানুষের মন জয় করেছেন। ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন।
বিএনপির আসিফা আশরাফী পাপিয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি করে হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে বিএনপির রাজনীতি করেন। তাঁর স্বামী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই তিনি। সেটি সম্ভব হয়েছে প্রান্ত থেকে রাজনীতি করেছেন বলেই।
তৃণমূল নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আরেকটি সুপারিশ করা উচিত নির্বাচনী সংস্কার কমিশনের। সেটি হলো, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন অথবা কোনো সংস্কার কমিশনের সদস্য হয়ে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে কোনো নারী যেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষ অথবা নিম্নকক্ষের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। অন্তত শুধু আগামীবারের জন্য। না করলে সেটি হবে স্বার্থের সংঘাত।
নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কথা এলেই বলা হয়– সংসদে নারীদের আনতে হবে। অবশ্যই নারীদের সংসদে আনতে হবে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনীতির সুযোগ না দিয়ে রাতারাতি বিভিন্ন আইনকানুনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সদস্য বানালে কী লাভ হবে? বরং সমাজে নারী-পুরুষ বিরোধ বেড়ে যাবে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বলেছে, পুরুষদের বিরোধিতার মুখে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি বাদ দেওয়া সঠিক কাজ হবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালু করে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বেড়েছে। আমরাও স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি শুরু করতে পারি। রাজনৈতিক দলগুলো এখন চাপের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় তাদের দিয়ে নারীর প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য ব্যবস্থা চালু করার জন্য রাজি করানো যাবে। কিন্তু সবকিছু চাপিয়ে দেওয়া হলে কোনোটিই বাস্তবায়িত হবে না।
কামরান রেজা চৌধুরী: সাংবাদিক, গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জন য ব যবস থ সদস য হ ব এনপ র ক জ কর পর য য় কর ছ ন প রব ন আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন
১৯৭২ সালে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫টি। পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে ২০১১ সালে এসে এই সংখ্যা ৫০–এ উন্নীত হয়। ১৫ থেকে ৫০-এ আসতে প্রায় ৩৯ বছর লেগেছে। অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী।
স্বাধীনতার পর শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত অনেক নারী এখনো ঠিকমতো মজুরিই পান না, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি তো দূরের কথা। স্বাস্থ্য উন্নয়নের ডামাডোলে সবচেয়ে নিচে চাপা পড়ে থাকে নারীর শিক্ষা।
এর মধ্যেই লড়াই করছেন নারীরা। লড়াই করতে গিয়ে সম্মুখসারিতে থাকছেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিসরে এসে পেছনের আসনে বসতে বাধ্য হচ্ছেন।
এত দিনের অভিজ্ঞতায় স্পষ্ট যে রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে নারী আসন বণ্টন করা হলে রাজনৈতিক নেতাদের স্ত্রী, কন্যা বা আশীর্বাদপুষ্টরা মনোনীত হন। অনেক ক্ষেত্রে মনোনয়ন পেতে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে সংসদে নারীর প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয় না। তাই সরাসরি নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণের দরকার রয়েছে।
কিন্তু বিদ্যমান অসম সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে হুট করে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে নারীদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে না। তাই প্রথমে কতগুলো সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে। ফলে ধীরে ধীরে সংরক্ষিত আসনের বাইরে সাধারণ আসনগুলোতেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং একসময় আর সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন হবে না।
গণ-অভ্যুত্থানে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণের পর অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনীতিতে তাঁদের অংশগ্রহণ নিয়ে দেশব্যাপী নারীদের সোচ্চার হতে দেখা গেছে। আবার একের পর এক নারীদের রাজনীতির ময়দান ছেড়ে দিতেও দেখা যাচ্ছে। তাঁদের রাজনীতির ময়দান ছেড়ে দেওয়ার গল্পগুলো যেমন আমাদের নিরাশ করে, তেমনি নারীকে সামাজিকভাবে হেয় করাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রাজনীতিতে তাঁদের অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করাটা ক্ষুব্ধও করে। এমন একটি সময়ে আমরা দেখলাম, ঐকমত্য কমিশন নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় একমত হতে পারেনি।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর গত ৩১ জুলাই ঐকমত্য কমিশন জানায়, ১০০ আসনে উন্নীত করার ব্যাপারে বেশির ভাগ দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) জানিয়েছে। তাই সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ৫০ রাখা এবং ৩০০ আসনের মধ্যে ন্যূনতম ৫ শতাংশ আসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী প্রার্থী মনোনীত করার আহ্বান জানায় কমিশন।
এখন দেখা যাক, নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিয়ে তিনটি ভিন্ন সংস্কার কমিশন কী কী প্রস্তাব দিয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছে, ৪০০ আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে। ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। আরও ১০০ নারী সদস্য সারা দেশের নির্ধারিত ১০০টি নির্বাচনী এলাকা থেকে কেবল নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উল্লেখ আছে, সংসদের (নিম্নকক্ষ) আসনসংখ্যা ১০০ বাড়িয়ে মোট সংখ্যা ৪০০ করা হোক। এই ৪০০ আসনের মধ্যে নারীদের জন্য নির্ধারিত ১০০ আসন ঘূর্ণমাণ পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিধান করা হোক, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট আসন থেকে নারীদের সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং দ্বৈত প্রতিনিধিত্বের অবসান হয়।
আর নারী সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে, সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সংসদীয় আসনসংখ্যা ৬০০-তে উন্নীত করা, যেখানে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একটি সাধারণ আসন এবং নারীদের জন্য একটি সরাসরি নির্বাচিত সংরক্ষিত আসন থাকবে। জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ করার সিদ্ধান্ত হলে সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন করা হবে, যেখানে নারী-পুরুষ মনোনয়ন পর্যায়ক্রমে জিপার পদ্ধতিতে দেওয়া হবে।
জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে নারী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বের জন্য কমপক্ষে পাঁচটি আসন সংরক্ষণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বিধান না মানলে দল পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা হারাবে, এমন বিধান রাখতে হবে।
লক্ষণীয় হলো, পুরুষপ্রধান সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নারীর জন্য সংরক্ষিত ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এই ১০০টি এলাকায় পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণমাণ পদ্ধতিতে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের কথা বলেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ১০০টি নির্ধারিত এলাকা থেকে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের কথা বললেও এলাকাগুলো কীভাবে নির্ধারিত হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেনি।
আর নারী সংস্কার কমিশন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব রেখেছে। এরপর এই প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য আনা হলো। নারী সংস্কার কমিশন আর ঐকমত্য কমিশনে রইল না। আমরা ঐকমত্য কমিশনে একটা ‘বয়েজ ক্লাব’ পেলাম। যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানকে নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেখানে কোনো নারী নেই। যদিও যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হয়তো নারীর প্রতি সংবেদনশীল ছিলেন, তবু এটাই সত্য যে সেখানে নারীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো কোনো নারী ছিলেন না। অন্যদিকে যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁরা বসেছেন, সেখানেও নারীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
ঐকমত্য কমিশন তিন ধরনের প্রস্তাব দিয়ে আলাপ শুরু করেছে, যেখানে আগেই মতৈক্য ছিল না। এরপর যুক্ত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দলের নিজ নিজ স্বার্থ। এখানে এসে আলোচনা হয়েছে বাস্তবায়ন কীভাবে হবে। সব দল নিজ সমস্যা নিয়ে এসেছে। ফলে ঐকমত্য না হওয়ারই তো কথা। আসনসংখ্যা বাড়ানো, সরাসরি নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের নারী প্রার্থী মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা নিয়ে একেক দলের একেক অবস্থান থেকে সরে না আসার প্রবণতা দেখা গেছে। এই প্রবণতা থাকবে ধরে নিয়ে কিছু বিষয় শুধু রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে না করে বরং জনসংখ্যার অনুপাতে নারীর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে হওয়া প্রয়োজন ছিল।
ড. মোশাহিদা সুলতানা: সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
*মতামত লেখকের নিজস্ব