ঘরের দেয়ালে টানানো মেডেল আর পুরস্কারের সারি, টেবিল জুড়ে সাজানো বই-খাতা আর ইতিহাস-ভূগোলের নানা বিচিত্র কাহিনি- সবই আছে আগের মতো। নেই শুধু আলিফ আহমেদ সিয়াম। সাভারের ইসলামনগরে ভাড়া বাসায় ছেলে সিয়ামের ঘরটি ঠিক যেমন ছিল, তেমনই গুছিয়ে রেখেছেন মা তানিয়া আক্তার।

১৫ বছরের এই কিশোরটি এক সময় বলত, বড় হয়ে পাইলট হবে। বাবা-মাকে হজ করাবে, আর আকাশ ছুঁয়ে ঘুরবে দেশ-বিদেশ। সেই স্বপ্ন আজ স্তব্ধ।

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীমুখী ছাত্রদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় আলিফ। সেদিন শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে সাভার থানা স্ট্যান্ড এলাকায় আনন্দ মিছিল চলছিল। সেই সময় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। 

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বিচারে গুলি চালায়।” সেখানেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় আলিফ।

আন্দোলনকারীরা প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান, পরে এনাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৭ আগস্ট বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

সিয়াম সাভারের ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বড় বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। বাবা বুলবুল কবীর, মা তানিয়া আক্তার—দুজনেই পেশাগত কারণে ঢাকায় থাকেন।

ছেলের মৃত্যুতে তানিয়া আক্তার বললেন, “আমার ছেলে বড় স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সেই স্বপ্ন কোনো দিন আর পূরণ হবে না। হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুরতায় সে শহীদ হয়েছে। এক বছর ধরে অপেক্ষা করছি, যদি একবার এসে ‘মা’ বলে ডাকে!”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছে, তারা এখন ক্ষমতায় ব্যস্ত। শহীদদের জন্য বিপ্লবী খেতাব দাবি জানানো হলেও, কেউ কর্ণপাত করছে না।”

আলিফের বাবা বুলবুল কবীর বলেন, “আমরা চাই, শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার হোক। আর আমার ছেলের নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সড়কের নামকরণ হোক। বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।”

তানিয়া আক্তারের আরও প্রশ্ন, “আর কতকাল আমাদের সন্তানেরা এইভাবে প্রাণ দেবে? আর কতকাল মায়েদের চোখের পানি ঝরবে?”

একজন মায়ের শোক, এক পরিবারের না-ফেরা সন্তানের গল্প-শুধু আলিফ নয়, এই দেশের বহু তরুণ আজ রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখছে। সেই ইতিহাস কি রাষ্ট্র মনে রাখবে?

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘সবাই সাবধান, শহরে নাগিন আজমেরী হক এসেছে’

গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যত্থানের মুখে দেশ ছাড়েন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আন্দোলনের শুরু থেকে জোরোলো ভূমিকা পালন করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। কখনো ফেসবুকে, কখনো দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের ব্যানারে রাজপথে দাঁড়িয়েছেন এই শিল্পী। 

চব্বিশের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ঘিরে তৈরি হওয়া মতপার্থক্য এখনো দূর হয়নি। ফলে বাঁধনকে নানাভাবে নানাজন কটাক্ষ করেছেন, আক্রমণ করেছেন। এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অন্তত, সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে পরিষ্কার বোঝা যায়। এবার বাঁধন জানালেন, গালি হিসেবে তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘নাগিন’ শব্দটি। 

আরো পড়ুন:

গায়ক জুবিনের প্রেম জীবন

‘ট্র্যাব এক্সিলেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন শিমুল খান

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বাঁধন তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি এখন জীবনের দুর্দান্ত সময় পার করছি (বিস্তারিত পরে বলব)। এরই মাঝে আমার ‘গালি’ সংগ্রহে নতুন এক সংযোজন হয়েছে, তা হলো— ‘নাগিন’।” 

খানিকটা ব্যাখ্যা করে বাঁধন বলেন, “মানুষ আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। কিন্তু এই নামটা একদম নতুন, স্টাইলিশ…। সত্যি বলতে, এটি আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তাই সবাই সাবধান—শহরে নাগিন আজমেরী হক এসেছে।” 

বাঁধনের এই স্যাটায়ার পোস্ট নিয়ে নেটিজেনদের অনেকে রসিকতা করছেন। কেউ কেউ মানসিক সমর্থন জানিয়ে অভিনেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। 

লাক্স তারকা থেকে রুপালি পর্দা, তারপর বিশ্ব মঞ্চ ও বলিউডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তবে তার এই চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কারণ পেশাগত নানা সংকটের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও সংগ্রামটা একাই করতে হয়েছে তাকে। 

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ