লাহোরে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘অকার্যকর’ করে দেওয়া হয়েছে: দাবি ভারতের
Published: 8th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের ‘একাধিক স্থানে’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার নিশানা করে আঘাত হানার দাবি করেছে ভারত। দেশটির দাবি, তাদের হামলার ফলে লাহোরে একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ‘অকার্যকর’ হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ভারত সরকার এই দাবি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছি, লাহোরে একটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে।’
তবে কীভাবে পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় হামলা চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে ভারত এখন পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, একাধিক স্থানে ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছে। অভিযান এখনো চলছে। এ ঘটনায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন পাকিস্তানের চার সেনাসদস্য।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে পাকিস্তান একাধিক স্থানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলেও দাবি করেছে ভারত। দেশটি বিবৃতিতে দাবি করেছে, ‘পাকিস্তান বিনা উসকানিতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মর্টার ও শক্তিশালী কামান ব্যবহার করে গোলাবর্ষণের মাত্রা বাড়িয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা, বারামুল্লা, উরি, পুঞ্চ, মেন্দার এবং রাজৌরি সেক্টরে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।’
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার পর পাকিস্তানের ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান। গতকাল কাশ্মীর সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, ভারতের হামলায় নারী-শিশুসহ ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৫৭ জন আহত হন।
অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনীর তথ্য অনুসারে, হামলার পর থেকে সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪৩ জন। গোলার আঘাতে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভিডিও বার্তায় দৃঢ় অবস্থান ইরানের সর্বোচ্চ নেতার
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি কোথায়—এমন প্রশ্ন কয়েক দিন ধরেই উঠছিল। ইরান–ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন ধরে চলা সংঘাতের সময় মাত্র দুবার বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। তবে জনসমক্ষে আসেননি। তাঁর মৃত্যু নিয়েও শুরু হয়েছিল গুঞ্জন। এরই মধ্যে খামেনির একটি ভিডিও বার্তা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। তাতে তাঁকে ইরানের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
খামেনির ভিডিও বার্তা সম্প্রচার করা হয়েছে ২৩ জুন ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি শুরুর দুই দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার। বার্তায় ইসরায়েলের পাশাপাশি দেশটির মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন খামেনি। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের গালে ‘ সজোরে চপেটাঘাত’ করেছে তেহরান।
১৩ জুন ইরান–ইসরায়েল সংঘাত শুরু হয়। প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে যাচ্ছিল। পরে ২১ জুন ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হয় ওয়াশিংটন। ওই হামলার এক দিন পর কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথম ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, এই ‘যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করেছিল, কারণ দেশটি বুঝতে পেরেছিল, তাদের হস্তক্ষেপ ছাড়া ‘জায়নবাদী’ ইসরায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসরায়েল ‘প্রায় ধসে পড়েছে।’ ইরানের হামলায় তারা ‘চূর্ণবিচূর্ণ’ হয়ে গেছে। ইরানের ওপর হামলার জন্য শত্রুদের চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ৮৬ বছর বয়সী এই নেতা।
ইরান কখনো ‘আত্মসমর্পণ’ করবে না বলেও উল্লেখ করেন খামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—তিনটি পরমাণু স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তারও একটি জবাব দেন তিনি। বলেন, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ছিল নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য। তাদের বোমা ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। তবে খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
এখনো খামেনিকে হত্যার শঙ্কাভিডিওতে খামেনির পেছনে ছিল বাদামি পর্দা। এক পাশে ইরানের পতাকা। আরেক পাশে তাঁর পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির ছবি। কোথায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। এর পরও খামেনির এই ভিডিও বার্তা ইরানিদের জন্য একটি স্বস্তির বিষয়। কারণ, তাঁর সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা না গেলেও অন্তত এটুকু জানা গেছে—তিনি বেঁচে আছেন।
খামেনির অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশায় ছিলেন ইরানের সরকারি কর্মকর্তারাও। যেমন খামেনির মহাফেজখানার দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি। এক টেলিভিশন উপস্থাপক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি কেমন আছেন, আমাদের বলতে পারবেন?’ এর সরাসরি কোনো জবাব দিতে পারেননি ফাজায়েলি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার দোয়া করা উচিত।’
ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনি একটি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন। ইলেকট্রনিক যোগাযোগব্যবস্থা থেকে বিরত রাখা হয়েছে তাঁকে। তিনি হত্যার শিকার হতে পারেন—এমন আশঙ্কা থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইরানের পত্রিকা খানেমান–এর সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, এই অনুপস্থিতির কারণে আর সবার মতো খামেনির মৃত্যু নিয়ে ভয় পেয়েছিলেন তিনিও।
খামেনি ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকেন। তিনি আড়ালে থাকার সময় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা ও যুদ্ধবিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তেহরানকে। এ সিদ্ধান্তগুলো কে নিয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজেদ সাফাভি বলেন, দূর থেকেই প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত খামেনি এখনো নিচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি।
সাফাভি বলেন, যুদ্ধবিরতি চলাকালেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করেন ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। এ জন্য সর্বোচ্চ নেতাকে ঘিরে চরম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। বাইরের জগতের সঙ্গে খামেনির যোগাযোগ কমানো হয়েছে। এমন সংকটের মধ্যে দেশ চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ অন্য নেতাদেরও ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
ভিন্নমতাবলম্বীদের সমালোচনাএরই মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে ভিন্নমতাদর্শের গোষ্ঠীগুলো। ইরানের কট্টরপন্থী রাজনীতিক সাঈদ জলিলির নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠী প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সমালোচনা করেছে। যুদ্ধবিরতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা শুরুর যে ইঙ্গিত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, তারও নিন্দা জানিয়েছেন তাঁরা।
এই গোষ্ঠীতে রয়েছেন কট্টরপন্থীরা, যাঁদের মধ্যে ইরানের পার্লামেন্ট সদস্য ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রয়েছেন। আইআরজিসির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফুয়াদ ইজাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, পেজেশকিয়ানের আলোচনার বার্তা এখন মনে করিয়ে দিচ্ছে—ইরানের প্রেসিডেন্টের দেশ পরিচালনার প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক দক্ষতা নেই।
বিরোধী এই গোষ্ঠীর পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা আলী আহমাদনিয়া। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমরা ১২ দিন ধরে দিনরাত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। এখন কি আপনাদের সঙ্গেও লড়তে হবে, যাঁরা কলম দিয়ে শত্রুর খেলায় ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।’
জনসমক্ষে খামেনির না থাকা ইরানের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল। তিনি বলেন, এ সময়টাতে দেশটির নেতাদের ‘চূড়ান্ত সতর্ক’ ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাচ্ছে।’ নেতাদের এই সতর্কতা, ইরানিদের শঙ্কা, বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যেই শেষ পর্যন্ত ভিডিও বার্তা দিয়ে খামেনি বললেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংঘাতে ইরান ‘জয়ী’ হয়েছে।