সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টানা ১০ দিন ছুটি দিতে সরকার যে পদ্ধতি নিয়েছে, তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে ১১ ও ১২ জুন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনিতেই ছুটি। ফলে ছুটির দিনে ‘নির্বাহী আদেশের ছুটি’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 
দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১ থেকে ১৯ জুন। প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে ৩ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত। কলেজে ঈদুল আজহার ছুটি থাকবে ৩ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত। এমনকি মাদ্রাসায় ১ জুন ছুটি শুরু হয়ে চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ১ থেকে ১৯ জুন টানা ছুটি থাকবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশের ছুটির প্রয়োজন পড়ছে না। কারণ, শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী দেশের সব কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা সে সময় এমনিতেই ছুটি থাকবে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এক সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ভ্যাকেশনাল (অবকাশকালীন) চাকরি করেন। সেজন্য আমলা বা অন্য সরকারি কর্মচারীর চেয়ে শিক্ষকরা অনেক আর্থিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন। সেখানে অন্য সব দপ্তরের মতো ছুটি মিলিয়ে দেওয়াটা অযৌক্তিক।’
তিনি বলেন, ‘সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১১ ও ১২ জুন শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী বন্ধ। ওই সময়ে ছুটি চলবে। তাহলে ওই সময়ের নির্বাহী আদেশের ছুটির জন্য কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদের আগের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হবে? যাদের ১১ ও ১২ জুন অফিস খোলা ছিল, তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে। কোন যুক্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি দিয়েছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।’

ছুটির দিনেও নির্বাহী আদেশের ছুটি প্রযোজ্য উল্লেখ করে ঈদের আগের দুই শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার আদেশ দিয়ে পাকানো ‘তালগোল’ বুঝে উঠতে পারছেন না শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও।
গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জাবের মো.

সোয়াইবের সই করা চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, সরকার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১১ ও ১২ জুন নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি এবং দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে ১৭ ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা রাখার ঘোষণা করেছে। এ অবস্থায় আগামী ১৭ ও ২৪ মে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী সচিব জাবের মো. সোয়াইব বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে যে নির্দেশনা দিতে বলেছে, আমি দিয়েছি। এটা নিয়ে সমস্যা কিছু একটা হচ্ছে, সেটি কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘ওটা তো মনে হয় সেভাবে খেয়াল করা হয়নি। যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একই নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে, সেজন্য চিঠিটি ইস্যু হয়েছে। এটি নিয়ে আলোচনা করে দেখতে হবে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য কিনা।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইন্সপেক্টর-সুপারিনটেনডেন্ট পদবি ফেরাতে পেশাগত প্রোফাইল পরিবর্তন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টম ও ভ্যাটের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা তাদের পুরোনো পদবি ইন্সপেক্টর-সুপারিনটেনডেন্ট পদ পুনর্বহালের দাবিতে সোচ্ছার হয়েছেন। সম্প্রতি পদবি ফিরে পেতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়ার পর এবার নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পেশাগত প্রোফাইল পরিবর্তন করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার এসব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাকাএভ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সমমানের পদবি হলো সুপারিনটেনডেন্ট এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের সমমানের পদবি হলো ইন্সপেক্টর। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০-১১ অর্থবছরে তাদের পুরোনো ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদ পরিবর্তন করে যথাক্রমে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তা পদবি দেওয়া হয়। পুরোনো এই পদ ফিরে পেতে এসব কর্মকর্তারা দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে। বর্তমানে কাস্টম-ভ্যাটের প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা এই দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন। 

এর আগে বাকাএভ গত ৪ মে পুরোনো এ পদ পুনর্বহালের দাবিতে তারা এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে কাস্টমস বিভাগের ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্টদের সঙ্গে কাজের সমন্বয়ে এমনকি সমুদ্রগামী জাহাজে কিংবা বিমানবন্দরে কার্যক্রমেও এনবিআরের রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা পরিচয় দিতে গিয়ে ‘পরিচয়সংকট’ বা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস অনুভব করেন। কারণ, বিদেশি জাহাজের ক্যাপ্টেন বা বিমানের পাইলট সবার কাছে ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবিতে পরিচিত। 

চিঠিতে বাকাএভের নেতারা বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি কাস্টমসের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের গৌরব ও ঐতিহ্য বহন করে। এটি আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তাই ইন্সপেক্টর ও সুপারিনটেনডেন্ট পদবি পুনর্বহাল করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ