যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের অর্ধেকটা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটা নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের একাধিক উদ্যোক্তা বলেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পাওয়া ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশ শুল্কের অর্ধেক বা পুরোটা দাবি করছে মার্কিন ক্রেতারা। পণ্য রপ্তানির এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্যের সঙ্গে সেই অর্থ সমন্বয় করা হচ্ছে। তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুনাফা করতে পারছে না রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য নতুন নতুন মার্কিন ক্রেতার কাছ থেকে অনুসন্ধানও আসছে। তাতে সামনের দিনে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে।

বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।

মার্কিন বড় ক্রেতারা ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের অর্ধেক এবং ছোটো ক্রেতারা পুরোটাই চাইছেন। শুল্ক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সমস্যাটি থাকবে বলে মনে হচ্ছেশোভন ইসলাম, এমডি, স্প্যারো গ্রুপ

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর বাজারটিতে বাংলাদেশ ৭৬০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা এ দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই বাজারে পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৩২৬ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

ক্ষতির মুখে রপ্তানিকারকেরা

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি মাসে গড়ে আড়াই থেকে তিন কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তার মধ্যে দেড় থেকে দুই কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানকে চলতি মাস থেকেই রপ্তানি হওয়া ক্রয়াদেশের এফওবি মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন বড় ক্রেতারা ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের অর্ধেক এবং ছোটো ক্রেতারা পুরোটাই চাইছেন। শুল্ক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সমস্যাটি থাকবে বলে মনে হচ্ছে। নতুন ক্রয়াদেশ আসছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসছে। তবে ক্রয়াদেশ ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটি প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ। গত অর্থবছরে তারা ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপকে মার্কিন ক্রেতাভেদে পাল্টা শুল্কের অর্ধেক বা পুরো অর্থ ক্রয়াদেশের এফওবি মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কেউ এফওবি মূল্যের ৫ শতাংশ, কেউ ১০ শতাংশ মূল্যছাড় চাইছে। তবে কোনো কোনো ক্রেতা আবার মূল্যছাড় চাইছে না। ফলে সব ধরনের ঘটনাই আছে। তবে ৫-১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিলে মুনাফা হওয়ার সুযোগ নেই।

স্থগিত ক্রয়াদেশের পণ্য যাচ্ছে

পাল্টা শুল্ক আরোপের পর উইকিটেক্স-বিডি নামের একটি বায়িং হাউসের তিন লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছিল মার্কিন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ার পর সেই পণ্য নেওয়ার জন্য সবুজ সংকেত আসে। চলতি মাসে সেই পণ্য জাহাজীকরণ করবে উইকিটেক্স-বিডি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন থেকে প্রচুর মার্কিন ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হচ্ছে। অনেক নতুন মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের জানাশোনা কম। এখন পর্যন্ত আমাদের চারজন নতুন ক্রেতার সঙ্গে ক্রয়াদেশ নিয়ে কথাবার্তা চলছে।’

কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাইছেন, ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে আমরা কতটুকু বহন করব। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকারমাহমুদ হাসান খান,  সাবেক সহসভাপতি, বিজিএমইএ

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে ঢাকার সাভারের এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টসের তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগ রপ্তানি স্থগিত করে মার্কিন এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ার পর সেই পণ্য নিয়ে নেয় ক্রেতা।

এসেন্সর ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ শুরুর পর আমরা ইউরোপের বাজারে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে আমাদের বড় একটা টিম ইউরোপে আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ২২৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই সময়ে চীনকে টপকে শীর্ষ রপ্তানিকারকের পদ দখল করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম ৩৮৮ কোটি ডলার ও চীন ৩৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। চীন ও ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৪ ও ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত ১৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতাদের অনেকেই জানতে চাইছেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কী করছেন। কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাইছে, ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে আমরা কতটুকু বহন করব। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকার।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক ক র যকর প রথম আল ক আম দ র হওয় র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের অর্ধেক দিতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাড়তি শুল্কের অর্ধেকটা রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে কেটে নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্কের পুরোটা নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

তৈরি পোশাক ও চামড়া খাতের একাধিক উদ্যোক্তা বলেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে পাওয়া ক্রয়াদেশের ক্ষেত্রেও ১০ শতাংশ শুল্কের অর্ধেক বা পুরোটা দাবি করছে মার্কিন ক্রেতারা। পণ্য রপ্তানির এফওবি (ফ্রি অন বোর্ড) মূল্যের সঙ্গে সেই অর্থ সমন্বয় করা হচ্ছে। তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুনাফা করতে পারছে না রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। অবশ্য নতুন নতুন মার্কিন ক্রেতার কাছ থেকে অনুসন্ধানও আসছে। তাতে সামনের দিনে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে।

বাণিজ্য–ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫৭ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।

মার্কিন বড় ক্রেতারা ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের অর্ধেক এবং ছোটো ক্রেতারা পুরোটাই চাইছেন। শুল্ক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সমস্যাটি থাকবে বলে মনে হচ্ছেশোভন ইসলাম, এমডি, স্প্যারো গ্রুপ

এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর বাজারটিতে বাংলাদেশ ৭৬০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা এ দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই বাজারে পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৩২৬ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান।

ক্ষতির মুখে রপ্তানিকারকেরা

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি মাসে গড়ে আড়াই থেকে তিন কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তার মধ্যে দেড় থেকে দুই কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানকে চলতি মাস থেকেই রপ্তানি হওয়া ক্রয়াদেশের এফওবি মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন বড় ক্রেতারা ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের অর্ধেক এবং ছোটো ক্রেতারা পুরোটাই চাইছেন। শুল্ক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সমস্যাটি থাকবে বলে মনে হচ্ছে। নতুন ক্রয়াদেশ আসছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের ক্রয়াদেশ আসছে। তবে ক্রয়াদেশ ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের একটি প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ। গত অর্থবছরে তারা ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের রপ্তানির ২৫ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপকে মার্কিন ক্রেতাভেদে পাল্টা শুল্কের অর্ধেক বা পুরো অর্থ ক্রয়াদেশের এফওবি মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে হচ্ছে।

প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন ক্রেতাদের কেউ এফওবি মূল্যের ৫ শতাংশ, কেউ ১০ শতাংশ মূল্যছাড় চাইছে। তবে কোনো কোনো ক্রেতা আবার মূল্যছাড় চাইছে না। ফলে সব ধরনের ঘটনাই আছে। তবে ৫-১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিলে মুনাফা হওয়ার সুযোগ নেই।

স্থগিত ক্রয়াদেশের পণ্য যাচ্ছে

পাল্টা শুল্ক আরোপের পর উইকিটেক্স-বিডি নামের একটি বায়িং হাউসের তিন লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছিল মার্কিন একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ার পর সেই পণ্য নেওয়ার জন্য সবুজ সংকেত আসে। চলতি মাসে সেই পণ্য জাহাজীকরণ করবে উইকিটেক্স-বিডি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন থেকে প্রচুর মার্কিন ক্রয়াদেশ স্থানান্তর হচ্ছে। অনেক নতুন মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের জানাশোনা কম। এখন পর্যন্ত আমাদের চারজন নতুন ক্রেতার সঙ্গে ক্রয়াদেশ নিয়ে কথাবার্তা চলছে।’

কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাইছেন, ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে আমরা কতটুকু বহন করব। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকারমাহমুদ হাসান খান,  সাবেক সহসভাপতি, বিজিএমইএ

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে ঢাকার সাভারের এসেন্সর ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টসের তিন লাখ ডলারের চামড়ার ব্যাগ রপ্তানি স্থগিত করে মার্কিন এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে তিন মাসের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ার পর সেই পণ্য নিয়ে নেয় ক্রেতা।

এসেন্সর ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এম মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ শুরুর পর আমরা ইউরোপের বাজারে জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বর্তমানে আমাদের বড় একটা টিম ইউরোপে আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ, যা প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ ২২৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই সময়ে চীনকে টপকে শীর্ষ রপ্তানিকারকের পদ দখল করে নিয়েছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম ৩৮৮ কোটি ডলার ও চীন ৩৬০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। চীন ও ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৪ ও ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভারত ১৫১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

সার্বিক বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতাদের অনেকেই জানতে চাইছেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা কী করছেন। কোনো কোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে পরিকল্পনা জানতে চাইছে, ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকলে আমরা কতটুকু বহন করব। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ