সত্যেন্দ্রনাথ প্রামাণিক স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি। মায়ের কাছে পড়তে শিখেছিলেন। তবে লেখা শেখা হয়নি। শুধুই পড়তে পারেন। গান করেন, ছবি আঁকেন। মুখে মুখে গানও বাঁধেন। স্বশিক্ষিত সত্যেন্দ্রনাথ প্রামাণিক পেশায় কৃষক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলায়।

এই উপজেলায় সত্যেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের মতো আরও তিনজন আলোকিত মানুষের সন্ধান মিলেছে, যাঁদের একজন পেশায় কুমার, একজন কৃষক ও একজন গৃহিণী। তাঁদের তেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু ঘরে বসে তাঁরা বিশ্বসাহিত্য চর্চা করছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁদের সম্মাননা জানানো হয়েছে। বরিন সাহিত্য সংসদের পত্রিকা ‘বরিনের বাতিঘর’–এর প্রকাশনা উৎসবে তানোর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘আলোকিত মানুষ সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, প্রতিষ্ঠিত কবি–সাহিত্যিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মাননাপ্রাপ্ত চারজন হলেন সোহরাব আলী, সত্যেন্দ্রনাথ প্রামাণিক, রঞ্জিত পাল ও হাসিনা বানু। তবে এই আয়োজনের মধ্যমণি ছিলেন ঔপন্যাসিক মঈন শেখ। তিনি বরিন সাহিত্য সংসদের সভাপতি। দুই বাংলায় তাঁর উপন্যাস সমান সমাদৃত। তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। থাকেন তানোরে, কিন্তু তাঁর বই বের হয় কলকাতা থেকে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান। প্রধান অতিথি ছিলেন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী মো.

মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক উদয় শঙ্কর বিশ্বাস, কবি মোস্তাক রহমান, উর্দু বিভাগের অধ্যাপক সামিউল ইসলাম, রাজশাহী উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক আবদুস সবুর ও রাজশাহী সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তানভীর হক ও সাংবাদিক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ।

সত্যেন প্রামাণিকের বাড়ি তানোর উপজেলার মাহাড়িয়া গ্রামে। থাকেন জরাজীর্ণ মাটির ঘরে। পড়েন দর্শন, নৃতত্ত্ব ও ভাষাবিজ্ঞান। তিনি একই সঙ্গে একজন চিন্তক, কণ্ঠশিল্পী এবং আঁকিয়ে। তবে তিনি সন্তানদের মানুষ করেছেন। তাঁর ছেলে পাস করেছেন বুয়েট থেকে আর মেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। অনুষ্ঠানে সত্যেন্দ্রনাথ প্রামাণিক বললেন, ‘আমার মতো তুচ্ছ মানুষকে মঞ্চে ডেকে এই সম্মাননা দেওয়ার জন্য আমি বরিন সাহিত্য সংসদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ বেশি কথা না বলে দরাজ কণ্ঠে গাইলেন নজরুলের একটি গান—‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল।’

হাসিনা বানুর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে। বাল্যবিবাহ হয়েছিল। এক বছরের মাথায় স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে তিনি চিরদিনের মতো বাবার বাড়িতে চলে আসেন। নিঃসঙ্গ জীবনে হাতে তুলে নেন বই। লিখেছেন কবিতা, গল্প ও উপন্যাস। ২০০৭ সালে এডিডির সহযোগিতায় ‘মোর মনের মাধুরী’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ভূমিকা লিখে দেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। তাঁর উপস্থিতিতে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এই গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আমি ভালো কথা বলতে পারি না। আমাকে এই সম্মাননা দেওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’ ‘আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই’ বলে নিজের একটি কবিতা পড়ে শোনান।

গুণীজন হাসিনা বানুর হাতে ক্রেস্ট ও বই তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। গতকাল শনিবার বিকেলে তানোর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ন র উপজ ল অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে ‘চাবি’ এল ক্লাসিকো

সেদিন লামিনে ইয়ামালের কথাটি মনে আছে? ‘এই মৌসুমে আর যাই হোক রিয়াল মাদ্রিদ আমাদের হারাতে পারবে না। যত গোলই হোক না কেন, দিন শেষে বার্সেলোনায় জিতবে।’ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কোপা দেল রের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ২-১ গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বার্সেলোনা। ৩-২ গোলে জিতে ইয়ামালের সেই হুঙ্কারে মিশেছিল বার্সেলোনার আত্মবিশ্বাস। আজ আবার দুই দল মুখোমুখি। 

এমনিতে এল ক্ল্যাসিকো মানেই স্পেনের দুই শতবর্ষী পুরোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর স্নায়ুর লড়াই, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজম্ম ধ্রুপদি ফুটবল উপভোগ করে এসেছে দর্শকরা। এই মৌসুমে তিন তিনটি এল ক্ল্যাসিকো স্বাদ নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। আজকের এল ক্ল্যাসিকো যেন তার চেয়েও বেশি কিছু। জিতলেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে বার্সার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অন্যদিকে রিয়াল জিতলে তাদের শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা টিকে থাকবে। ঘরের উঠোন স্তাদিও অলিম্পিকে শিরোপা উৎসবের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবেন লেভানডস্কিরা। তাদের সে উৎসব মাটি করে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন এমবাপ্পেরাও।

এমনিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিদায়ে দুই দলই আহত, ট্রেবলের স্বপ্নও ধূলিসাত দুই দলেরই। কোথায় গিয়ে তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কষ্ট চাপা দিয়েছে দুই প্রতিপক্ষ। এই ম্যাচটির মধ্যে অনেক খণ্ড খণ্ড লড়াইও থাকবে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে বার্সার বিপক্ষে শেষবারের মতো ডাগআউটে উপস্থিত থাকবেন কোচ কার্লো আনচেলেত্তি। অন্যদিকে বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের জন্য প্রথম লা লিগা জয়ের সুযোগও করে দিতে পারে এই ম্যাচটি। যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতবে বলে এমবাপ্পে প্যারিস থেকে মাদ্রিদ এসেছেন, সেটি এই মৌসুমের জন্য শেষ হয়ে গেছে কিছুদিন আগে। এবার তাঁর সামনে প্রথমবারের মতো লা লিগা জেতার সুযোগ। বার্সার কিশোর ম্যাজিশিয়ান ইয়ামালের জন্যও প্রথমবারের মতো লা লিগা জয়ের সাক্ষী থাকার সুযোগ। পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানডস্কির জন্য আবার এটিই হতে পারে বার্সার শেষ মৌসুম। তার জন্যও আজকের এল ক্ল্যাসিকো ‘সুপার ক্ল্যাসিকো’ বানানোর সুযোগ। 

গতকাল সংবাদ সম্মলেন ফ্লিক জানিয়ে দিয়েছেন শুরুর একাদশে থাকছেন না লেভানডস্কি, বালদে, কাসাদো। ‘সবাই জানে এল ক্ল্যাসিকোতে প্রতিটি মুহূর্ত সর্বোচ্চ দিয়ে খেলতে হয়। আমরা রিয়াল মাদ্রিদের শক্তি সম্পর্ক জানি, তবে এবার আমরা ঘরের মাঠে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নামছি। পয়েন্ট টেবিল কী বলছে তা নিয়ে ভাবছি না, আমরা শুধু জানি ম্যাচটি জিততে হবে।’
 
এ মৌসুমে যে তিন ম্যাচে রিয়ালের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা, তার সবক’টিতে জিতেছিলেন ফ্লিক। তবে সব ম্যাচেই কিছু ভিন্ন কৌশলে বাজিমাত করেছিলেন। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ তাকিয়ে তাদের তারকা নামগুলোর ওপর। কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সঙ্গে জুড বেলিংহাম। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে আনচেলেত্তির একাদশে গোল পোস্টে কুতোর্সকে দেখা যেতে পারে। লিগের শুরুতে ভালো করলেও এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রচণ্ড ধাক্কা খায় এমবাপ্পেরা। সে সময়ে লা লিগায় ৫ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পায় রিয়াল, আর সে সময়েই ঘুরে দাঁড়ায় বার্সেলোনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমজমাট গণিত উৎসব
  • বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটিতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম
  • মা তোমাকে খুব ভালোবাসি
  • হাতিরঝিলে হবে দৌড় উৎসব, অংশ নিতে করতে হবে নিবন্ধন
  • লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে ‘চাবি’ এল ক্লাসিকো
  • গৌতম বুদ্ধের সৌন্দর্যমণ্ডিত উৎসব
  • কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম
  • কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় ‘বাঙালি বিলাস’
  • নতুন বই উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা