পাঁচটি অগ্রাধিকার চিহ্নিত করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি
Published: 11th, May 2025 GMT
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করতে পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছে এ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। জরুরি ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের পরামর্শও দিয়েছে তারা। গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ সম্পর্কিত মতামত তুলে ধরে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিশেষজ্ঞ কমিটি যে পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছে সেগুলো হচ্ছে– সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার অংশগ্রহণে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করা, একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জাতীয় শুল্কনীতি ২০২৩-এর বাস্তবায়ন, অবকাঠামো প্রকল্পসহ জাতীয় লজিস্টিকস নীতি ২০২৪-এর মূল কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সাভার ট্যানারি পল্লিতে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) পার্কের পূর্ণ মাত্রায় পরিচালনা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড.
বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) বাস্তবায়ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য গত মার্চ মাসে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধান করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
গতকালের বৈঠক বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির অন্যতম সদস্য সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘টেকসইভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। যেহেতু এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, সেহেতু এটাকে কীভাবে টেকসই করা যায়, সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার সুপারিশ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘ কীভাবে এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক নির্ধারণ করা যায়, সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। ছাড় বা প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা শৃঙ্খলা আমাদের মেনে নিতে হবে। অন্যদিকে বাজার সুবিধা কমলে আমাদের রপ্তানিকারকদের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা কাটিয়ে উঠতে অন্য জায়গায় তাদের খরচ কমাতে হবে। শূন্য শুল্কের বাজার সুবিধা যখন থাকবে না, তখন তারা যাতে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, পোশাক শিল্পের বাইরেও অন্যান্য রপ্তানিমুখী খাতে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া সিঙ্গেল উইনডোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হলে রপ্তানিকারকদের খরচ কমবে। এগুলো সময় মতো করা গেলে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটা কিছুটা হলেও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
বাসস জানায়, বৈঠকে এলডিসি উত্তরণ কার্যক্রমের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা পুরোটাই সমন্বয়ের ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারী, অর্থদাতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন পেয়েছি। এখন আমাদের বিদ্যমান উদ্যোগগুলোকে ভিত্তি করে একত্রে দ্রুত ও সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হতে হবে।’ প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস সব অংশীজনকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন একটি দল দরকার, যারা অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর মতো কাজ করবে। যখন সাইরেন বাজবে, তারা দ্রুত, দক্ষভাবে এবং বিলম্ব না করে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন।’ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এলডিসি উত্তরণ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কম ট পদক ষ প আম দ র এলড স ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
প্রত্যেক জেলায় হাসপাতালের মত সিনেমা হলও দরকার: জাহিদ হাসান
‘প্রত্যেকটা জেলায় শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হাসপাতাল আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সিনেমা হল থাকা দরকার। সুস্থ বিনোদন থাকলে মানুষ নেশা, হানাহানি ও মব জাস্টিস থেকে দূরে থাকবে। আমাদের যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান দরকার তেমনি বিনোদনের জন্য সিনেমা হল দরকার।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানী বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘উৎসব’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী শেষে কথাগুলো বলছিলেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসান।
‘উৎসব’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। শুটিংয়ের বহুদিন পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীর চরিত্রের মধ্যে থেকে এখনো বের হতে পারেননি বলেন জানালেন এই অভিনেতা।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখনো আমি এই চরিত্রটার মধ্যে ডুবে আছি। সিনেমার আমার চরিত্রের নাম জাহাঙ্গীর। আসলে আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে জাহাঙ্গীর লুকিয়ে আছে। কারণ, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের মাঝে হিরোইজম আছে, ভিলেন আছে। আছে উপলব্ধি করার ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সেই রিয়েলাইজেশনের সময়টা আছে। কখন মৃত্যু হয় আমরা জানি না। এই রিয়েলাইজ যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে আজ আমরা যারা জাহাঙ্গীরের মত আছি, কাল আমরা ভালো হয়ে যাবো।’
ঈদের সিনেমা মানেই এখন যেন অ্যাকশন অথবা থ্রিলার। গত কয়েক বছরে ঈদে বাজিমাত করা সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে এমনটাই মনে হতে পারে। সেসব থেকে বেরিয়ে হাস্যরস পরিবার এবং সম্পর্কের গল্পে এবার ঈদে বাজিমাত করেছে ‘উৎসব’। এই সফলতার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করলেন প্রত্যেক শিল্পীর সততাকে।
জাহিদ হাসানের কথায়, ‘প্রডাক্টশন বয় থেকে শুরু করে এই সিনেমার সঙ্গে আমরা যারা যুক্ত ছিলাম তারা প্রত্যেকেই অনেক সৎ ছিলাম। অভিনয় নিয়ে কোনো অসৎ অবস্থার মধ্যে আমরা যাইনি। এটাই মনে হয় আমাদের সফলতার বড় বিষয়। এই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে।’
করোনা মহামারির পর অভিনয়ে খুব একটা দেখা যায়নি জাহিদ হাসানকে। নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি তার। কারোনার পর ‘উৎসব’-ই তার প্রথম সিনেমা।
তার ভাষ্য, ‘করোনার পর খুব একটা অভিনয় করা হয়নি। আমাকে অভিনয়ে নেওয়া বা না নেওয়াটা নির্মাতাদের দায়িত্ব। বলতে গেলে গত কয়েকবছর সেভাবে সুযোগও আসেনি। ‘উৎসব’ সিনেমার মধ্যে সেই সুযোগটা এলো। অভিনয় করলাম। দর্শক প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছি অনন্ত ফেল করিনি।’
সিনেমার হলের সংখ্যা কম হওয়ায় দেশের সিনেমা সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছচ্ছে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন জাহিদ হাসান। সেইসঙ্গে জেলা প্রশাসকদের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। আমার বোন ফোন করে বললেন এখানে তো সিনেমা হলে নেই। তাই আমরা সিনেমা দেখতে পারছি না। এই কথা শুনে কষ্ট পেয়েছি। এটা সত্য সিরাজগঞ্জের মত দেশের অনেক বড় শহরে সিনেমা হল নেই। জেলা প্রশাসকসহ দায়িত্বশীল পর্যায়ে যারা আছে তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন প্রত্যেকটি জেলায় সিনেমা হলের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়ে তার বাস্তবায়ন করেন।’