ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় দায়ী হবেন এমডি-চেয়ারম্যানও, অধ্যাদেশ জারি
Published: 12th, May 2025 GMT
আর্থিক খাতের দুর্নীতি দমনে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে সরকার। এ অধ্যাদেশের ফলে ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় এমডি-চেয়ারম্যানও দায়ী হবেন।
নতুন এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে।
এতে বলা হয়, তফসিলি কোনো ব্যাংকের তহবিল প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহারে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তি যেই হোক— তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা ঋণের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেক স্তরের কর্মকর্তারাও দায়ী হবেন। এরূপ ব্যক্তিদের প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃত ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। যদি পরিশোধ না করেন— তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
এমন ধারা যুক্ত করে শুক্রবার ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন করেছিল উপদেষ্টা পরিষদ।
ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে, সাত সদস্যের আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। উপদেষ্টা পরিষদ ছয় সদস্যের সংস্থা গঠনের কথা বললেও পরে এক সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এই কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল ও আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে।
কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব, রেজুল্যুশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর ও গভর্নরের মনোনীত আরেকজন ডেপুটি গভর্নরকে রাখা হয়েছে। প্রতি তিন মাসে কাউন্সিল একটি করে সভা করবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করলে ও প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজুল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যেকোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অধ্যাদেশে এমন ধারাও যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, ওই ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারধারী বা নতুন শেয়ারধারীদের মাধ্যমে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ থাকছে এ অধ্যাদেশে।
অধ্যাদেশে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক আর কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা দেউলিয়া হওয়ার পথে, আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না, বা না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন এ ধরনের ব্যাংকের ভালো করার স্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অধ্যাদেশটি পাস হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এখন আলাদা বিভাগ গঠন করবে, অধ্যাদেশেই একথা বলা রয়েছে।
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার সুযোগও থাকছে এ অধ্যাদেশে। পরে সেগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রিও করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। দুর্বল বা দেউলিয়া হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম সাময়িকভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ব্যাংক হলো ব্রিজ ব্যাংক।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে- বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না।
আবার কোনো ব্যাংক নিজে থেকেও অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। নতুন এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানতও দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
ঢাকা/হাসনাত/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক উন স ল ক র যকর ব যবস থ কর র স তহব ল হওয় র ব যবহ ধ করত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রিকেটের উন্নতির দিকেই নয়, ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশ
শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয় ভালো ক্রীড়াবিদ হিসেবেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সেরা অবস্থানে নিয়ে যেতে চান জাতীয় দলের স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নাথান ক্যালি।
ভারত সিরিজ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের নিয়ে লম্বা ফিটনেস ট্রেনিং করাচ্ছেন ক্যালি। বিরতি দিয়ে যখনই ক্রিকেটাররা মাঠে ফিরছেন দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা। অনেকের দাবি, এমন ফিটনেস সেশন আগে কখনো হয়নি তাদের। ক্রিকেটাররা অ্যাথলেটিক টার্ফে ১৬০০ মিটার দৌড়েছেন একাধিকবার।
আরো পড়ুন:
‘হাজার কোটি টাকা থাকলে বিপিএলে আসা উচিত’
বিসিবির বোর্ড সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হলো
ঢাকা স্টেডিয়ামের টার্ফে চলে এই ট্রেনিং। যেখানে পেসার নাহিদ রানা ১৬০০ মিটার শেষ করেছেন ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে। তরুণ নাহিদ যেখানে চমক দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম মুগ্ধ করেছেন। ৩৮ পেরোনো মুশফিকুর ৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডে টাচ করেছেন ফিনিশিং লাইন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে শুরুর দিকে ফিটনেস টেস্ট বলতেই ছিল বিপ টেস্ট। মারিও ভিল্লাভারায়েনে যে টেস্টে ক্রিকেটারদের তৈরি করতেন। পরবর্তীতে যুক্ত হয় ইয়ো ইয়ো টেস্ট। নাথান ক্যালি বাংলাদেশে যুক্ত করেছেন ‘টাইম ট্রায়াল’ পরীক্ষা। তিনটি পর্যায়ে দেওয়া হয় ফল। এলিট, কম্পিটেন্ট ও লিমিটেড। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই পেয়েছেন কম্পিটেন্ট।
নিজের এই টাইম ট্রায়াল পরীক্ষা নিয়ে নাথান কেলি মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এটার ফল নিয়ে কম বিতর্ক হয়। যখন আপনি ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্ট করান, কখনো কখনো খেলোয়াড়েরা খুব অল্পের জন্য পিছিয়ে যায়, কিন্তু তখন তাদের থামিয়ে দিয়ে বলাটা কঠিন হয়ে যায় যে তোমার টেস্ট শেষ। টাইম ট্রায়ালে ভালো জিনিস হচ্ছে, ঘড়ি মিথ্যা কথা বলে না। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারা ইয়ো ইয়ো বা বিপ টেস্টে পাস করে, তারা টাইম ট্রায়ালেও জেতে। যারা ওখানে (বিপ বা ইয়ো ইয়ো) ভালো না, তারা এখানেও (টাইম ট্রায়াল) না।’’
ফিটনেস নিয়ে কাজ করার প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তাড়নার কমতি দেখেন না ক্যালি। অন্যান্য দেশের সঙ্গে সূচির বাস্তবতার পার্থক্যটি আবারও তুলে ধরলেন তিনি, ‘‘ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে। আজকেও সেটির প্রমাণ দেখা গেছে। যে ধরনের কন্ডিশনিং আজকে আমরা করেছি, কিছু চ্যালেঞ্জিং ড্রিল ছিল। আপনারা যদি মনে করেন এসব চ্যালেঞ্জিং নয়, তাহলে স্বাগত জানাচ্ছি একদিন আমাদের সঙ্গে এসব করতে। আপনারা তখন বুঝতে পারবেন। তাদের মানসিকতা ও প্রচেষ্টা অসাধারণ। তারা নিজেদের তাড়িত করে প্রবলভাবে।”
“আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো শারীরিক কাজ বড় পরিসরে করার সুযোগ বের করা। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় যেমন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেট, ১৫ সপ্তাহের মতো প্রাক-মৌসুম থাকে। আমাদের কেবল ছোট ছোট উইন্ডো থাকে। কাজেই যখনই সুযোগ মেলে, ওই শারীরিক কাজগুলো করার নিয়মিত চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।” - যোগ করেন তিনি।
এজন্য যখনই সময় পান ক্রিকেটারদের শুধু ক্রিকেট ভিত্তিক ফিটনেস নয়, ভালো ক্রীড়াবিদদের মতো ফিটনেস পেতে সহায়তা করেন তিনি, ‘‘২০২৪ সালের এপ্রিলে যোগদানের পর থেকে আমরা গত ১৮ মাস ধরে এই টেস্টিং করে আসছি। তাই, খেলোয়াড়দের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমাদের কাছে টাইম ট্রায়াল, স্ট্রেংথ টেস্টিং এবং স্প্রিন্ট টেস্টিং জুড়ে কিছু ধারাবাহিক তথ্য রয়েছে। এবং দলটি যে উন্নতি করছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে তরুণ খেলোয়াড়দের দল, যারা এই মুহূর্তে আমাদের জন্য প্রচুর টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে। তারা কেবল তাদের ক্রিকেটের উন্নতির দিকেই নয়, বরং আরও ভালো ক্রীড়াবিদ হওয়ার দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল