জেনোসাইডের সংজ্ঞা নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট
Published: 13th, May 2025 GMT
জেনোসাইডের সংজ্ঞা নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।
বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধানে শনাক্ত হয়,‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে ‘জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়েছে, যা পাঠককে ভুল বার্তা দিতে পারে। মূলত তিনি জুলাইয়ের ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে প্রচলিত ভাষায় গণহত্যা বললেও আন্তর্জাতিক আইনের পরিভাষায় মাস কিলিং এবং জেনোসাইডের যে পার্থক্য আছে, সেটি স্পষ্ট করেন। তার এই বক্তব্যকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এসব শিরোনামে।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, সোমবার (১২ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন করেন, অভিযোগ হিসেবে ‘গণহত্যা’ আছে কিনা। এর জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত ভাষায় যদি একসঙ্গে বেশি মানুষ মারা যায় তাহলে আমরা বলি যে গণহত্যা হয়েছে। একসঙ্গে অনেক মানুষ মারা গেছে এটাকে মাস কিলিং অথবা ম্যাসাকার বলতে পারেন, কিন্তু আইনের যেটা জেনোসাইড-সেইটা কিন্তু এটা না।”
আরো পড়ুন:
পিআইবির ডিজি
গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে সাংবাদিকদেরই বের করে আনতে হবে
ভারতীয় নাগরিককে বাড়ি ফেরালেন বাংলাদেশের সাংবাদিক
চিফ প্রসিকিউটর আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, “ধরেন একশ জন লোককে মেরে ফেলা হলো। এটা বাংলাদেশের.
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “বাংলাদেশে মাসকিলিং হয়েছে, ব্যাপক ভিত্তিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, দেড় হাজার এর উপরে মানুষকে মারা হয়েছে, এইটা ম্যাসাকার, এটা ব্যাপক হারে হত্যা, মার্ডার। কিন্তু ইট ইজ নট জেনোসাইড।এটা হচ্ছে প্রস্তাব। আইনের জেনোসাইড এবং মাসকিলিং এক জিনিস নয়।”
জেনোসাইড ও মাসকিলিং-দুটোর বাংলা পরিভাষা হিসেবে ‘গণহত্যা’ শব্দের ব্যবহার করার চল থাকার কারণে আইনি অবস্থান থেকে অনেকেই বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েন।আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘জেনোসাইড’ বা এই অর্থে ‘গণহত্যা’ বলতে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে (রেসিয়াল, ন্যাশনাল, রিলিজিয়াস, এথনিক) আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসের নিয়তে (ইন্টেন্ট) পরিকল্পিত কিছু অপরাধমূলক কাজকে বোঝানো হয়।জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা বর্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আক্রান্ত (টারগেটেড) গোষ্ঠীকে উপর্যুক্ত নির্দিষ্ট চারটি গোষ্ঠী পরিচয়ের আওতায় পড়তে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করার নিয়ত (ইন্টেন্ট) এর উপস্থিতি থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, আইনে নির্দিষ্ট বর্গের মধ্যে ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠী নেই। ফলে, রাজনৈতিক কোনো দল বা গোষ্ঠীকে ধ্বংসের নিয়তে চালানো নিধনযজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইনে জেনোসাইডের সংজ্ঞায় পড়ে না। তবে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ বা ক্রাইমস অ্যাগেইনস্ট হিউম্যানিটি।শব্দের বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য বাংলাদেশের অনেক গবেষক জেনোসাইড এর বাংলা হিসাবে ‘গণহত্যা’ না বলে ‘জেনোসাইড’ই বলার পক্ষে মত দেন।
বাংলাদেশে চলমান গুজব এবং ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।
সম্প্রতি ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান। তাছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গুজব এবং ভুয়া খবর প্রচার শনাক্ত করা হচ্ছে।
সূত্র: বাসস
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণহত য আইন র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
‘গণহত্যার বিচার না হলে আবারও ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে’
শহীদদের হত্যার বিচার না হলে পরবর্তী সময়ে নতুন সরকারকেও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হবে। এ সরকার আসলে বুঝতে পারেনি—পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কত ভারী। ‘জুলাই জাগরণী’ সমাবেশে কথাগুলো বলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সারা দেশে জুলাই গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবি সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সমাপনী সমাবেশ ‘জুলাই জাগরণী’ আয়োজন করা হয়।
বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত হয় এ সমাবেশ। এতে উপস্থিত হন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সদস্যরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবার নানা ধরনের বিপদে আছে। আধুনিক প্রযুক্তির এ যুগে এক বছর পরও শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবার অবহেলিত হচ্ছে। অথচ সরকারের দায়িত্ব ছিল পরিবারগুলোর যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করা।
যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া। —শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবাআনু মুহাম্মদ বলেন, যেসব মামলা দায়ের হয়েছে, সেখানে ত্রুটি থাকছে। সরাসরি যাঁরা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই এ সরকার আসার পর দেশ থেকে পালিয়েছেন। পাইকারি মামলা করায় মামলা আরও দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষায় আন্দোলন হয়েছিল, তার বাস্তবায়িত হয়নি।
সমাবেশে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যে বৈষম্যের জন্য আমাদের সন্তানেরা জীবনটা দিল, তার কি নিরসন হয়েছে? যাঁরা ক্ষমতায় বসেছেন, তাঁদের উচিত ছিল, হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া।’
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। অথচ সরকারের সেদিকে (ফ্যাসিবাদের অবসান) যাত্রা দেখছি না।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী দীপা মজুমদার বলেন, আন্দোলনে নিহত শ্রমিক ও নারীদের খবর রাখা হয় না। বিচারপ্রক্রিয়ার ভেতরে রয়েছে ফাঁক। তিনি আরও বলেন, যতবার ফ্যাসিবাদ আসবে, ততবারই এ দেশের মানুষ জেগে উঠবে। প্রয়োজনে প্রাণ দেবে।
বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন। কিন্তু এখন নারীবিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারী নিপীড়ন চলছে। নারীদের যথাযথ সুযোগ ও মর্যাদা না দিয়ে বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদের বিলোপ সম্ভব নয়।’
আলোচনা শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দ্বিতীয় পর্বে। শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানসহ একক সংগীত পরিবেশন করেন কয়েকজন শিল্পী।
শহীদদের বাবা–মায়ের হাতে স্মারক তুলে দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সালমান সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আয়োজিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান।
আয়োজনের শুরুতেই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান...’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন।