বাগেরহাটে জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতে দুই নাগিরককে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার তিনজনের বিরুদ্ধে দুদক বাগেরহাট কার্যালয়ে মামলা করেছেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাইদুর রহমান।

আসামিরা হলেন– বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান বরিশালের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন ও চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্নি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মোশাররফ হোসেন মোল্লা।

এজাহারে বলা হয়, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করা সত্ত্বেও শ্রী ফনিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডল এবং প্রতুল চন্দ্র মণ্ডল নামে দুই ভাইকে চিতলমারী থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। যা ব্যবহার করে একজনকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। তারা ভারতীয় নাগরিক হলেও আড়ুয়াবর্নি গ্রামে থাকা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্থানীয় মোশাররফ হোসেন মোল্লা তাদের দেশে নিয়ে আসেন এবং ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ওই আবেদনের নির্ধারিত ফরমে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি ফনিভূষণ মণ্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মণ্ডলের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়। আবেদনের ৪ দিন পর তাদের জন্মনিবন্ধন সনদ দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর ওই জন্মনিবন্ধন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়।

ফনিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফনিভূষণ মণ্ডলের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে। যা তার জন্মের ৬৯ বছর পর। ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে নিবন্ধন ফরমের ৩২ নম্বর ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে ছিলেন তিনি। তার বাবার নাম মৃত শশধর মণ্ডল দেওয়া হলেও তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে মৃত রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নম্বর ঘরে বলা হয়েছে, তার বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৪৪ সালে। সে অনুযায়ী বাবার মৃত্যুর ৪ বছর পরে ফনিভূষণের জন্ম। ফরমে সুষেণ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে এবং তার স্বাক্ষর জাল করে শনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়। আর ফনিভূষণ মণ্ডলের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয় বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। তবে তদন্তকালে দুদক ওই এলাকায় সেই ব্যক্তির অস্তিত্ব পায়নি। এমন আরও অনেক জালিয়াতি হয়েছে এবং ওই জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ফনিভূষণকে দাতা দেখিয়ে সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে।

বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, পারস্পরিক যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগ দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট এনআইড ব যবহ র কর র জন য র জন ম

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার জন্ম ১৯৫০ সালে, ছেলের ১৮৮৭-তে

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জন্ম সাল ভুল হওয়ায় ছেলে-মেয়েকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারছেন না জিতু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। এনআইডি কার্ডের তথ্য অনুযায়ী, তার বয়স ১৩৮ বছর, আর তার বাবার ৭৫ বছর। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধনে নবীগঞ্জ ইউএনএর কাছে আবেদন জানিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী। 

জিতু মিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার কালিয়ার ভাঙা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মান্দারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৮৮৭ সালের ২ মার্চ। অন্যদিকে জিতু মিয়ার বাবা হারিছ মিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ১ মার্চ। অর্থাৎ বাবার চেয়ে ছেলে ৬৩ বছরের বড়। 

ভুক্তভোগী জিতু মিয়া জানান, তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি তার ১২ বছরের ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে গেলে এনআইডি কার্ডে বয়সের সমস্যা ধরা পড়ে। জন্মনিবন্ধন সঠিক না হওয়ায় মেয়েকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, লেখাপড়া না করায় এনআইডিতে এত বেশি বয়স দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেননি তিনি। আইডি কার্ড সংশোধন করতে গত কয়েক মাস ধরে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। অনেক অর্থ ব্যয় করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। আজ (মঙ্গলবার) হবিগঞ্জ জেলা জজ আদালতে তার বয়স এফিডেভিট করে এনআইডি সংশোধন করতে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে এসেছেন। তিনি বলেছেন, এটা ঠিক করে দেবেন। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কমিশনার উত্তম কুমার দাসের ভাষ্য, মূলত ২০০৭ সালে যখন সার্ভারে ভোটার তালিকা করা হয়েছিল, তখনই বয়স ভুলের সমস্যাটি হয়েছে। ভুক্তভোগী কেউ আবেদন করলে জন্মনিবন্ধন ছাড়া সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ওই ব্যক্তির অনলাইন জন্মনিবন্ধনেরও সংশোধন থাকতে হবে। বয়স সংশোধনে জিতু মিয়ার আবেদন তারা পেয়েছেন। কিন্তু জন্মনিবন্ধন ছাড়া কিছু করতে পারছেন না। 

নবীগঞ্জ ইউএনও মো. রুহুল আমিন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সের ভুল কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া সংশোধনের নিয়ম নেই। ওই ব্যক্তির আবেদন তারা পেয়েছেন। কিন্তু তার কোনো ডকুমেন্টস (প্রয়োজনীয় নথি) নেই, তিনি লেখাপড়া না করায় কোনো সার্টিফিকেট দিতে পারেননি। তাকে সিভিল সার্জনের কাছে থেকে বয়স সম্পর্কিত মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। সিভিল সার্জনের রিপোর্ট পেলে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতীয়কে এনআইডি দেওয়ায় ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা 
  • দিনাজপুরে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার পেল ১০ লাখ টাকা
  • এনআইডিতে বাবার জন্ম ১৯৫০ সালে, ছেলের ১৮৮৭-তে!
  • বাবার জন্ম ১৯৫০ সালে, ছেলের ১৮৮৭-তে
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের মাঝে সঞ্চয়পত্র প্রদান
  • ব্যাংকব্যবস্থা থেকে কম ঋণ নেবে সরকার
  • কর কমানোর পরিকল্পনা করুন, কীভাবে ও কত কর কমবে