আসন্ন ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এসএমই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন খাতের ১৪০টি প্রস্তাব তুলে ধরেছে সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কাছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) অর্থনৈতিক বিষয়ক রিপোর্টারদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যখন প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয় ঠিক তার আগের রাতে  সরকার এনবিআরকে ভেঙে দিয়ে রাজস্ব নীতি ও ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ সৃষ্টির নির্দেশনা জারি করে।

‘এসএমইবান্ধব বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৫-২০২৬’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আশরাফ হোসেন।

আরো পড়ুন:

ধারের টাকায় বাজেট বাস্তবায়ন করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বাজেট হবে বাস্তবমুখী, আকার বাড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা 

সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো.

মুসফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ান হোসেন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।

প্রধান অতিথির ভাষণে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়েছে। সঠিক সুযোগ-সুবিধা পেলে এ খাতটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাই।”

তিনি বলেন, “নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ফাউন্ডেশন মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এ খাতে আরো ৩০০ কোটি টাকা তহবিল চেয়েছি। আগামী বাজেটে এটা বরাদ্দ পাওয়া গেলে উদ্যোক্তাদের কিছুটা হলেও উপকার হবে।”

মূল প্রবন্ধে মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “২০১১-২০১২ অর্থবছর থেকে ৫৫৭টি প্রস্তাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কাছে দিয়েছি তার মধ্যে ৮৫টি প্রস্তাব আংশিক ও সম্পূর্ণভাবে গৃহীত হয়েছে এবং জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসএমইবান্ধব (ট্যাকস, ভ্যাট ও ট্যারিফ) সংক্রান্ত প্রস্তাব তৈরির লক্ষ্যে ৩৪টি অ্যাসোসিয়েন এবং ৫টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৫টি পরামর্শ সভা করা হয়। সেখান থেকে ৩০০ এর বেশি প্রস্তাব পাওয়া যায়। সেগুলো পর্যালোচনা করে মূসক সংক্রান্ত ৩৫টি এবং শুল্ক সংক্রান্ত ৬৯টি, আবগারী শুল্ক সংক্রান্ত ৩টি, সাধারণ প্রস্তাব ২টিসহ প্রায় ১৪০টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করে এনবিআর এর সঙ্গে প্রাক বাজেট সভায় দাখিল করা হয়েছে।”

সংস্থাটির পক্ষ থেকে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে টার্নওভার ট্যাক্স এবং বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের সিস্টেম দুটি তুলে দিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পের আকার অনুযায়ী মাসিক ভিত্তিতে কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে বাৎসরিক টার্নওভার ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ভ্যাটের আওতা বহির্ভূত রাখা; বাৎসরিক টার্নওভার ১ কোটি টাকা থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রতি মাসে ৩৫ হাজার টাকা সুনির্দিষ্ট কর; বাৎসরিক টার্নওভার ২ কোটি টাকার উপরে কিন্তু ৩ কোটি টাকা অতিক্রম না করলে প্রতি মানে ৭৫ হাজার টাকা সুনির্দিষ্ট কর; বাৎসরিক টার্নওভার ৩ কোটি টাকার উপরে কিন্তু ৫ কোটি টাকা অতিক্রম না করলে প্রতি মাসে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা সুর্দিষ্ট করের প্রস্তাবের পাশপাশি দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় দেশে উৎপাদিত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কর ১০০ গুন থেকে ২০০ গুন করার প্রস্তাব করা হয়।  

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%

দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান আসে নানা ধরনের মাছ থেকে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের মানুষ দৈনিক প্রায় ৬৩ গ্রাম মাছ খেয়ে থাকে। তবে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামের মাছই আমিষের বড় উৎস। সীমিত আয়ের মানুষের কাছে কম দামি মাছে মধ্যে পছন্দের শীর্ষে তেলাপিয়া মাছ। বছর বছর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত এক দশকে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টন।

এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পুরুষ তেলাপিয়া চাষের উৎপাদনই বেশি বাড়ছে। তবে মাছ চাষের খরচের প্রায় ৭০ শতাংশই খাবারের পেছনে। তাই উৎপাদন বাড়লেও তেলাপিয়া মাছের দামও এখনো নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭৮ টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ১৯১ টন। ১০ বছর আগেও ২০১৩–১৪ অর্থবছরে দেশে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল মাত্র ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬২ টন। সেই হিসাবে এক দশকের ব্যবধানে তেলাপিয়ার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ বা ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১৬ টন।

বড় বাজারের দরদাম

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা মডেল টাউন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি ২২০ টাকা দরে ৫০ কেজি মাছ বিক্রি করেছেন মাছ ব্যবসায়ী কামাল হোসেন। তিনি জানান, প্রতি কেজি মাছ তিনি ১৮০ টাকায় কিনেছেন। কামাল হোসেন জানান, এক বছরের ব্যবধানে পাইকারিতে তেলাপিয়া মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে প্রায় ৮০ টাকা। মাছের খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, মাছ উৎপাদনে ৭০ শতাংশ খরচই হয় খাবারের পেছনে। গত কয়েক বছরে খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়লেও দাম কমেনি। তবে তিনি বলেন, খাবারের দাম যতটা বেড়েছে, মাছের দাম ততটা বাড়েনি।

এদিকে মাছচাষিরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও মুনাফা বাড়েনি। এ কারণে অনেক মাছচাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাষির মুনাফা বৃদ্ধি না পাওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করছেন চাষিরা। তাঁরা বলছেন, অনেক চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষে বিনিয়োগ করেন। ভালো মুনাফা না পেলে তাঁদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। এ বিষয়ে ময়মনিসংহের ত্রিশালের মাছচাষি নাহিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মাছচাষিরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছেন। মাছের খাবার, বিদ্যুৎ বিল, ওষুধ, শ্রমিকের খরচ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ মিলিয়ে মাছ চাষ করে লোকসান গুনছেন বেশির ভাগ চাষি।

নাদিম মাহমুদ জানান, বর্তমানে মাছের এক টন খাবারের দাম ৭২ হাজার টাকা। তাঁর তিন একরের পুকুরে দিনে প্রায় আধা টন খাবার লাগে। একজন শ্রমিকের বেতন মাসে ১৮ হাজার টাকা। তাই মাছ চাষে কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা না গেলে অনেকেই আগ্রহ হারাবেন।

মাছ চাষের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে এক মাস আগে নিয়োগ পাওয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি খাতের মতো মৎস্য খাতেও বিদ্যুৎ বিল কমাতে আমরা কাজ করছি।’

মাছ চাষে শীর্ষ ১০ জেলা

২০২৩ সালের মৎস্য অধিদপ্তরের উৎপাদন হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর তেলাপিয়ার মোট উৎপাদনের মধ্যে পুকুরে চাষ হয়েছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৪২ টন। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ জেলার পুকুরে চাষ হয়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। পুকুরে তেলাপিয়া চাষে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা। এ জেলায় ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার টন তেলাপিয়া পাওয়া যায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ময়মনসিংহ জেলায় উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার টন। যশোর থেকে আসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ১৯৭ টন। চট্টগ্রাম ও বরিশালে উৎপাদিত হয় যথাক্রমে প্রায় ২০ হাজার ও ১১ হাজার ৭১৪ টন। এরপরের অবস্থানে ছিল যথাক্রমে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাজীপুর, বগুড়া ও নোয়াখালী।

আফ্রিকা থেকে দেশে

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ১৯৬৯ সালে আফ্রিকা থেকে প্রথম দেশে আনা হয় তেলাপিয়া। তবে ২০১০ সালের পর তেলাপিয়ার ব্যাপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) মো. মোতালেব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন মোনোসেক্স জাতের পুরুষ তেলাপিয়ার বেশি চাষ হচ্ছে। কারণ, এসব মাছ আকারে বড় হয়। আগে মিশ্র জাতের তেলাপিয়ার বেশি চাষ হতো।

একদিকে বেড়েছে চাহিদা, অন্যদিকে কম সময়ে এ মাছ দ্রুত বড় হয়। তাই দেশে তেলাপিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে এ মাছ বিক্রি উপযোগী হয়ে যায়।

এ বিষয়ে মো. মোতালেব হোসেন বলেন, গরম বা ঠান্ডা যেকোনো আবহাওয়ায় তেলাপিয়া চাষ করা যায়। এ ছাড়া খাবার না দিলেও এ মাছ বড় হয়। কই, শিং ও পাবদা মাছের মতো তেলাপিয়া আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয় না। খেতেও সুস্বাদু। তাই তেলাপিয়ার চাষ এক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

তেলাপিয়া বিতর্ক

শেওলা ও বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে বলে এটিকে গারবেজ/ট্র্যাশ ফিশ বা আবর্জনা মাছ বলেও ডাকা হয়। এক সময় এ মাছে নানা ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতির অভিযোগ উঠেছিল। তবে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত খাবারের জন্য মূলত এটি হয়ে থাকতে পারে। তাই মানসম্পন্ন খাবার দেওয়া হলে এ মাছে ক্ষতির কিছু নেই।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক

মো. মোতালেব হোসেন বলেন, এখন পুকুরে গোবর, হাঁস–মুরগির উচ্ছিষ্ট ব্যবহার করাও আইনিভাবে নিষিদ্ধ।

অধ্যাপক ও গবেষক রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, বর্তমানে দেশে মাছ চাষে যে ধরনের খাবার ব্যবহার করা হয়, তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে ১৪ দিনে ২০ কোটি টাকার ইলিশ রপ্তানি
  • কেনিয়াকে কাঁদিয়ে বিশ্বকাপে ফিরল জিম্বাবুয়ে
  • আবারও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নামিবিয়া
  • বুয়েটে স্নাতক শ্রেণির বিভিন্ন লেভেল বা টার্মের সংশোধিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ
  • ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ৪৮%
  • এডিবি বৃত্তি: টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ অর্থায়নে মাস্টার্সের সুযোগ
  • বাজারে এখনো কদর ইনস্ট্যান্ট কফির
  • শুল্কছাড়েও দেশি বিনিয়োগ নেই কনটেইনার পরিবহন খাতে
  • বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও ৩ হজ প্যাকেজ, সাধারণ প্যাকেজে ব্যয় বেড়েছে ২৭ হাজার টাকা
  • বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে