দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উক্ত রক্তেস্তাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার (৫ গ্রাম) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতিবছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজাতী'র সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগগুপ্ত ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.

সোহেল রেজা চৌধুরী। মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইনুল আবরার।

সভায় বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এ খাবারে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট অফ প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মত স্বাস্থ্যহানীকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগন তা বুকে উঠতে পারে না। তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমূহের সঠিক কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বন্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্য পরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলছে। সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরন আইন অনুযায়ী মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেথ বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারেন না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরণ আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যভ্যাস পরিবর্তনের বিকল্প নেই। তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আন্তান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দেশের সুস্থ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিফায়ী বলেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে লবণ গ্রহণ হ্রাসের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে লুকানো লবণ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে আসছে। জনস্বার্থে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাত খাবারে সর্বোচ্চ লবণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো জরুরি।

উল্লেখ্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। এবারের স্লোগান: ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন কবি, সুস্থ জীবন পড়ি’।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুল আরেফিন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিতি বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. ফারজানা আক্তার অভিন, বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অসংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. মো. মাবুল হক খান, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং স্ট্রিট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লবণ স ব স থ যকর লবণ গ রহণ সমন ব সরক র জনস ব

এছাড়াও পড়ুন:

অশ্লীলতার অভিযোগে অভিনেত্রী-নির্মাতাদের লিগ্যাল নোটিশ

সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে অশ্লীলতার অভিযোগে কয়েকজন তারকা অভিনেত্রী ও মেন্টরকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।

যাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন, তারা হলেন— মেন্টর নির্মাতা প্রবীন রহমান চৌধুরী, মেন্টর গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মেন্টর তানিম রহমান অংশু এবং সিনথিয়া ইয়াসমিন, অভিনেত্রী কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, মডেল শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা।

আইনজীবী মো. জাকির হোসেনের পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রিকেটের প্রতি আবেগপ্রবণ, তাই বাংলাদেশের শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন এবং ক্রিকেট নিয়ে নানা কৌতূহল থাকে। জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট ম্যাচ থেকে শুরু করে ঘরোয়া লিগের সব ক্রিকেট খেলাই শিশু থেকে বয়স্ক সবাই পরিবারকে নিয়ে দেখেন এবং দেখার ইচ্ছা করে। তবে যদি হয় সেই ক্রিকেট ম্যাচ সেলিব্রিটি নিয়ে, তাহলে সাধারণ জনগণের মাঝে আরো কৌতুহল থাকে ক্রিকেট ম্যাচ দেখার, হোক সেটি সরাসরি বা অনলাইনে।

আরো পড়ুন:

ছোটবেলা থেকেই খুব খেলতে চাইতাম: তাসনুভা তিশা

সাগরপাড়ে প্রেমের ঢেউ, চমকের চুমুর ছবি ভাইরাল!

বর্তমানে আমরা দেখতে পেয়েছি, সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ-২০২৫ টুর্নামেন্ট ছাড়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন মডেলসহ ছোট ও বড় পর্দার অভিনেত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন। সেই সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে মারিয়া মিম, সিনথিয়া ইয়াসমিন, কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা তাদের শালীনতা বজায় না রেখে অশালীন অঙ্গ-ভঙ্গিমাসহ ক্রিকেট খেলার জন্য বা প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সঠিক ড্রেস না পরে ছোট ছোট ড্রেস পরে ক্রিকেট খেলার নামে সমাজে ছোট-বড় সবার মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। একইসঙ্গে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং অভিনেত্রী মারুফা আক্তার জামান নিজেও ইন্টারভিউতে বলেন, ফিগার যদি না দেখাতে পারে তাহলে কীভাবে হলো? এ থেকে স্পষ্ট, ক্রিকেটের নামে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন অভিনেত্রীরা, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।

শালীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এ নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেশিরভাগ যেহেতু মুসলিম এবং ইসলামকে ধারণ করেন, তাই সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ নামে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে না দিয়ে সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের সব খেলোয়াড়দের শালীন ড্রেস মেইনটেইন করে খেলার জন্য আহ্বান করা হলো। তাতে যেমন সমাজ অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আরো বেশি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।

নির্মাতা ও কয়েকজন অভিনেত্রীর নাম উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, নির্মাতা প্রবীন রহমান চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও তানিম রহমান অংশু উক্ত খেলা পরিচালনা করছেন, তাই তাদের সুপরামর্শে অশ্লীল ড্রেসকোড পরা অভিনেত্রীদের শালীনতায় ফিরিয়ে আনবেন এবং ক্রিকেট খেলার নামে যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে তা থেকে ক্রিকেটকে মুক্ত রাখবেন। নোটিশ গ্রহীতা মারিয়া মিম, সিনথিয়া ইয়াসমিন, কেয়া পায়েল, মারুফা আক্তার জামান, শাম্মি ইসলাম নিলা ও আলিশা ক্রিকেট খেলার নামে অশ্লীল ড্রেস কোড না পরে সুন্দর শালিন ড্রেস কোডের মাধ্যমে খেলায় অংশগ্রহণের ও প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য আহ্বান করা হলো।

পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে অশ্লীল ড্রেস পরে ও অঙ্গ-ভঙ্গি করে কেন ক্রিকেট খেলার মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়েছেন, তার জন্য জবাব দাখিল করতে বলা হলো। অন্যথায় সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ-২০২৫ এই ক্রিকেট খেলা নিয়ে সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানোর দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ৫ মে রাজধানীর বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নস ট্রফি-২০২৫’-এর উদ্বোধন করা হয়। মঙ্গলবার (১৩ মে) এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ আসরে জয় লাভ করেছে গিগাবাইট টাইটানস। এ দলে খেলেছেন চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ, শরিফুল রাজ, মৌসুমী হামিদ, মেহজাবীন চৌধুরী প্রমুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ