‘অতিরিক্ত লবণ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে’
Published: 14th, May 2025 GMT
দৈনিক অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে দেশে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ৯ গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা (৫ গ্রাম) এর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে প্রতি বছর দেশে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (১৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.
প্রবন্ধে বলা হয়, উচ্চমাত্রায় লবণ গ্রহণের একটি বড় উৎস হলো প্রক্রিয়াজাত খাবার। এসব খাবার স্বাদে নোনতা না হলেও লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই অতিরিক্ত লবণ নীরব ঘাতকের মতো দেশে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারী সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল গ্রহণ করা এবং খাদ্যের মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। খাদ্য মোড়কের সামনে সহজবোধ্যভাবে দেওয়া ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলের মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই লবণ, চিনি ও চর্বির মতো স্বাস্থ্যহানীকর উপাদানের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যকর পণ্য বেছে নিতে সক্ষম হবেন।
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “লবণ শুধু স্বাদের উপাদান নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগসহ অসংক্রামক রোগের বড় ঝুঁকি তৈরি করে।”
তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান; যাতে শিশুদের মধ্যে শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার বলেন, “অধিকাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, কিন্তু বোধগম্য লেবেলিং না থাকার কারণে জনগণ তা বুঝে উঠতে পারে না।”
তিনি ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি মোড়কে পুষ্টি উপাদানসমুহের সঠিক তথ্য প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকার বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্যপরিকল্পনা রয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে চলেছে।”
সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি উদ্যোগে জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, “বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মোড়কিকরন আইন অনুযায়ী খাদ্যের মোড়কে লবণ, চিনি ও চর্বির পরিমাণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক কোম্পানি তা করে না, অথবা এমনভাবে উল্লেখ করে যা ভোক্তারা পড়তে পারে না। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মোড়কিকরন আইন সংশোধন করে সহজবোধ্য ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। এবারের স্লোগান: “অতিরিক্ত লবণ বর্জন করি, সুস্থ জীবন গড়ি।”
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পিএম-১ ডা. নরুল ইসলাম, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভেকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, জাতীয় পুষ্টিসেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আজমেরী শারমিনসহ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লবণ গ রহণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আবারো গ্রেপ্তার টিকটকার প্রিন্স মামুন
আলোচিত টিকটকার প্রিন্স মামুন ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আবারো গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার ভাটারা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান জানান, আদালতের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ফেনীতে সহকর্মীর বঁটির কোপে আনসার সদস্য আহত
রাঙামাটিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি।
এর আগে গত বছর জুন মাসে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় লায়লা আখতার ফারহাদের দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় প্রিন্স মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন।
ওই মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে লায়লার তিন বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে মামুন তাকে বিয়ে করবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে মামুন তাকে জানায়, তার ঢাকায় থাকার মতো নিজস্ব কোনো বাসা নেই। যেহেতু প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় এবং মামুন তাকে বিয়ে করবে বলে জানায়, তাই লায়লা তাকে নিজের বাসায় থাকার অনুমতি দেন। ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি মামুন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে লায়লার বাসায় এসে বসবাস করতে থাকে।
লায়লার অভিযোগ, ওই দিন থেকে মামুন তার সঙ্গে একই কক্ষে বসবাস করতে থাকে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সর্ম্পক করে। পরে মামুনকে একাধিকবার বিয়ের কথা বললে সে বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।
মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগেও মামুনের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন লাইলা।
২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন লায়লা আখতার। মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় লায়লার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে লায়লার বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। তখন থেকে প্রিন্স মামুন লায়লার বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় বাস করতে থাকেন। এরপর থেকে প্রিন্স মামুন বিভিন্ন অজুহাতে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন। প্রায়ই মাদক সেবন করে গভীর রাতে বাসায় আসতেন মামুন। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেন। এমনকি মাঝে-মধ্যে লায়লাকে মারপিট করতেন। বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি আদায়ের পাঁয়তারা করতেন মামুন। ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বাসায় ফেরেন তারা। এ সময় মামুনসহ আরও দুজন মদপানের জন্য মিরপুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। লায়লা তাকে নিষেধ করেন এবং বাধা দেন। এতে মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে গালি দেন। গালি দিতে নিষেধ করলে মামুন লায়লাকে মারধর করেন ও হত্যার চেষ্টা করেন। এসব মামলায় কয়েক দফায় তাকে রিমান্ডে পাঠান আদালত।