ময়মনসিংহে রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহলে’ হামলা-ভাঙচুর
Published: 15th, May 2025 GMT
জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ নগরীর বাসভবন ‘সুন্দর মহল’-এ হামলা চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর গঙ্গাদাস গুহ রোডে অবস্থিত এই বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা রওশন এরশাদের বাড়িটিকে ‘দালাল মহল’ ঘোষণার দাবিতে স্লোগান দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদের ‘সুন্দর মহল’ একটি ‘কুটুমবাড়ী’ নামের রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। এরপর থেকে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ বাড়িটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে।
মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আউয়াল সেলিম বলেন, সুন্দর মহলের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে রওশন এরশাদের মায়ের স্মৃতি বিজড়িত কবরটি রয়েছে। অনেকে এখন কারণে-অকারণে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। দলের অবস্থা এখন ভালো না। রওশন এরশাদের নির্দেশে বাড়িতে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি রেস্টুরেন্টের কাছে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ১২ বছরের জন্য তারা এখানে থাকতে পারবেন। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ টাকা।
আজ দুপুর ৩টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা একটি মিছিল নিয়ে ‘সুন্দর মহল’-এ যায় এবং রেস্টুরেন্টের নির্মাণ কাজে বাধা দেয়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা নির্মাণাধীন রেস্টুরেন্টের দেয়াল এবং বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে বেশ কিছু আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
এই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ফুয়াদ খান, ওয়ালিউল্লাহ ওলি, ছাত্রনেতা জি.
এর আগে ২৩ এপ্রিল দুপুর ১২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে ‘সুন্দর মহল’কে ‘দালাল মহল’ ঘোষণার দাবি করেছে তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ব্যানারে এক মানববন্ধনে বক্তারা ঘোষণা দেন, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী ফ্যাসিস্টদের সহচর রওশন এরশাদের সুন্দর মহলকে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তারা এ ভবনটিকে রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দিয়ে অন্যায় কাজ করেছে।
‘সুন্দর মহল’-এ নির্মাণাধীন রেস্টুরেন্ট ভাঙচুরের বিষয়ে ‘কুটুমবাড়ী’ রেস্টুরেন্টের পরিচালক বজলুর রহমান মিন্টুর বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ রওশন এরশ দ রওশন এরশ দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এখনো কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথের আন্দোলনকারীরা
পুলিশের হামলার বিচার ও তিন দফা দাবিতে রাতভর রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারী অবস্থান করছিলেন।
আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি হয়েছে যানজট।
ঘটনাস্থলে থাকা রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির সকাল ৯টার দিকে প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এসআই আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, কাকরাইল মোড়ে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারী আছেন। তাঁরা রাতভর এখান অবস্থান করেছেন। আন্দোলনকারীদের কেউ সড়কে শুয়ে আছেন, কেউ বসে আছেন। কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে এখানকার সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখানে তৈরি হয়েছে যানজট। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হাওয়া পর্যন্ত তাঁরা এখান থেকে সরবেন না।
আরও পড়ুনলংমার্চে লাঠিপেটার পর বিক্ষোভ, চলছে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান৭ ঘণ্টা আগেতিন দফা দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
বেলা দুইটার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে গতকাল জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, এখানে ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে।
বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যায়।
দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে রাত ১০টার পরে অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে।
বক্তব্য চলাকালে ভিড় থেকে তথ্য উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করা হলে তাঁর মাথায় লাগে। এরপর বক্তব্য বন্ধ করে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
রাত ১২টার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন। তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এ ঘটনার দায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না বলে জানান। এ সময় অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া তাঁরা কোনোভাবেই এই জায়গা ছেড়ে যাবেন না।
তিন দফা দাবি হলো—জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।